ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নথি পৌঁছেছে

খালেদার জামিন বিষয়ে আদেশ আজ

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১২ মার্চ ২০১৮

 খালেদার জামিন বিষয়ে আদেশ আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাগারে থাকা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জামিন বিষয়ে আদেশ সোমবার বিকেলে দেয়া হবে। রবিবার সকালে নথি না আসায় হাইকোর্ট সোমবার দুপুরে আদেশের জন্য রেখেছেন। এদিকে নিম্ন আদালত থেকে মামলার নথি রবিবার হাইকোর্টে পৌঁছে বেলা ১২টা ৫৪ মিনিটে। অন্যদিকে নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ১৯ এপ্রিল দিন ধার্য করেছে আদালত। সংসদ সদস্যদের আসন শূন্য হওয়া সংক্রান্ত সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা রিটের বিষয়ে আগামী ১৮ মার্চ আদেশের দিন নির্ধারণ করেছে হাইকোর্ট। রবিবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ ও ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ এর বিচারক এ আদেশগুলো প্রদান করেছেন। জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দ-িত বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে আদেশের দিন পিছিয়ে সোমবার ধার্য করেছে উচ্চ আদালত। এ মামলায় পাঁচ বছরের দ- নিয়ে বেগম খালেদা জিয়া গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে আছেন। জামিনের আদেশ দেয়ার সময় পর্যন্ত বিচারিক আদালতের নথি হাইকোর্টে না পৌঁছে রবিবার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে আদালত কী আদেশ দেয়, তিনি (খালেদা জিয়া) কারামুক্ত হতে পারবেন কিনা- তা জানার জন্য সবাই এখন আদালতের দিকে তাকিয়ে আছেন। আদালতে বেগম জিয়ার পক্ষে জয়নুল আবেদীন শুনানি করেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহম্মেদ এবং দুদকের পক্ষে খুরশীদ আলম খান এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলন। আদেশের পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী সাংবাদিকদের জানান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের জামিন আবেদনের বিষয়ে রবিবার আদেশের দিন ধার্য ছিল। বিষয়টি আদালতে উত্থাপন করা হলে আদালতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মামলার নথি এখনও আদালতে আসেনি। তবে রবিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত সময় রয়েছে। এর মধ্যেই নথি চলে আসার কথা। সে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আদালত সোমবার দুপুর ২টায় আদেশের সময় ধার্য করেছে। নি¤œ আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদার আপীল শুনানির জন্য গ্রহণ করে গত ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট নিম্ন আদালত থেকে মামলার নথি তলব করে। আর ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট জানায়, নিম্ন আদালত থেকে নথি পাওয়ার পর জামিন বিষয়ে আদেশ দেয়া হবে। সে অনুযায়ী খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আবেদনে বিষয়টি রবিবার আদেশের জন্য কার্যতালিকায় রাখা হয়। কিন্তু তখন পর্যন্ত নথি না পৌঁছানোয় আদেশ পিছিয়ে যায়। সকাল সাড়ে ১০টায় আদালত বসার পর বিএনপিনেত্রীর আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, “এ জামিনের জন্য রেকর্ডের প্রয়োজন নেই। এই কোর্টের ট্র্যাডিশন আছে রেকর্ড ছাড়াই জামিন দেয়ার। এই কোর্টের সেই পাওয়ারও আছে।”এ সময় বিচারক বলেন, “নজির আছে ঠিক। কিন্তু আমরা তো রেকর্ড তলব করেছি। আমরা ওই অর্ডার দিয়েছিলাম ২২ ফেব্রুয়ারি, মাঝে সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। সে অনুযায়ী আজ ১৫ দিন শেষ হবে। দেখা যাক অর্ডার প্রতিপালন করে কিনা। আমরা আগামীকাল সোমবার অর্ডারের জন্য রাখলাম।” ঢাকার পঞ্চম বিশেষ আদালত থেকে পুলিশ প্রহরায় রবিবার বেলা ১২টা ৫৫ মিনিটে মামলার নথি হাইকোর্টের ডেসপাচ (আদান-প্রদান) শাখায় আসে। নথি গ্রহণ করেন হাইকোর্টের ডেসপাচ শাখার কর্মকর্তা কে এম ফারুক হোসেন। তিনি জানান, ঢাকার পঞ্চম বিশেষ আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোকাররম হোসেন ৫ হাজার ৩৭৩ পৃষ্ঠার নথি নিয়ে হাইকোর্টের ডেসপাচ শাখায় জমা দিয়েছেন। ডেসপাচ শাখা থেকে মামলার নথি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় যাবে। নাইকো দুর্নীতি মামলা ॥ নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ১৯ এপ্রিল দিনধার্য করেছেন আদালত। রবিবার মামলার অভিযোগ গঠন শুনানির দিন ধার্য ছিল। তবে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য সময়ের আবেদন করলে রাজধানীর বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯-এর বিচারক মাহমুদুল হাসান আবেদন মঞ্জুর করে এ দিন ধার্য করেন। মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগঁাঁও থানায় নাইকো দুর্নীতি মামলাটি দায়ের করেন। পরের বছরের ৫ মে এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এতে আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়েছে। ৭০ অনুচ্ছেদ ॥ সংসদ সদস্যদের আসন শূন্য হওয়া সংক্রান্ত সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা রিটের বিষয়ে আগামী ১৮ মার্চ আদেশের দিন নির্ধারণ করেছে হাইকোর্ট। রবিবার এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি আবু তাহের মোঃ সাইফুর রহমানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এই তারিখ নির্ধারণ করে। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও রিটকারী এ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি এই একই বিষয়ে দায়ের করা রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মোঃ আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে বিভক্ত আদেশ দেয়। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোন নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরূপে মনোনীত হয়ে কোন ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হলে তিনি যদি-(ক) ওই দল হতে পদত্যাগ করেন, অথবা (খ) সংসদে ওই দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তা হলে সংসদে তার আসন শূন্য হবে। তবে তিনি সে কারণে পরবর্তী কোন নির্বাচনে সংসদ-সদস্য হওয়ার অযোগ্য হবেন না।’ ওই আদেশে বেঞ্চের সিনিয়র বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ‘সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না’ তা জানাতে চেয়ে রুল জারি করেন। কিন্তু বেঞ্চের জুনিয়র বিচারপতি মোঃ আশরাফুল কামাল রিটটি সরাসরি খারিজের আদেশ দেন। পরে নিয়ম অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি রিট আবেদনটি নিষ্পত্তির জন্য তৃতীয় একক বেঞ্চ গঠন করে দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি আবু তাহের মোঃ সাইফুর রহমানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চে এই রিটের শুনানি শেষ হয়। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল সংসদে নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেয়ার কারণে সংসদ সদস্য পদ শূন্য হওয়া সংক্রান্ত ‘সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের’ বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ।
×