ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটারে বিল দেয়ার ভোগান্তি চরমে

প্রকাশিত: ০৪:৩৮, ১২ মার্চ ২০১৮

 বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটারে বিল দেয়ার ভোগান্তি চরমে

রশিদ মামুন ॥ রাজধানীতে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) শ্যামলী সার্কেলের আসাদ গেট বিদ্যুত অফিস। আশপাশে ডাচ বাংলা ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক এবং রূপালী ব্যাংক ঘুরে এসে জনৈক বিদ্যুত গ্রাহক আবুল হোসেন (ছদ্মনাম) বিদ্যুত অফিসের লাইনে দাঁড়ালেন। কারণ এদিন কোন ব্যাংক বিল নিচ্ছিল না। তখন ঘড়ির কাঁটায় ১২টা। এক ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলেন। লম্বা লাইনে তখনও প্রায় ১০০ জন তার আগে থেকে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। একটা বেজেছে। সরকারী অফিস বলে কথা শুরু হলো দুপুরের খাবার বিরতি। লম্বা লাইন রেখেই খেতে চলে গেলেন। ফিরলেন আবার বসলেন বিল নিতে। শেষ পর্যন্ত আবুল হোসেন মুক্তি পেলেন বিকেল চারটায়। সকাল থেকে বাসায় তার বিদ্যুত নেই। সম্প্রতি ডিপিডিসির এই গ্রাহক এভাবেই বলছিলেন প্রিপেইড মিটারে বিদ্যুত বিল দিতে যাওয়ার ভোগান্তির কথা। গ্রাহক বলছেন প্রিপেইড মিটারে বিল দিতে দিন মাটি হচ্ছে তাদের। লম্বা লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে বিল দিতে গিয়ে দিনের আর কাজ করা যাচ্ছে না। বিতরণ কোম্পানির উদাসীনতা ও বিদ্যুত বিল আদায় সহজ না করে প্রিপেইড মিটার চাপিয়ে দেয়ায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন গ্রাহক। বিদ্যুত ব্যবহারের আগেই বিল দিতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার গ্রাহককে উদ্ধারের কথা বলা হলেও এখনও কার্যকর কিছু করে ওঠা সম্ভব হয়নি। সাধারণত একটি বাড়িতে আগে ১৫ টি ফ্ল্যাট থাকলে বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়াদের কাছ থেকে মাস শেষে বিল নিয়ে ওই বিল নিজেই ব্যাংকে জমা দিত। এখন এই পরিস্থিতি বদলে গেছে। যারা প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করেন তাদের বিদ্যুত ব্যবহারের আগেই বিল দিতে হয়। আর প্রিপেইড মিটার সংযোজনের পর বাড়িওয়ালা বিল দেয়ার দায়িত্ব ভাড়াটিয়ার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। টাকা শেষ হওয়ার আগেই মিটারে পুনঃরিচার্জ করা সম্ভব না হলে ঘরের বাতি নিভে যায়। পাখাও ঘোরে না। সঙ্গত কারণে গ্রাহক বাধ্য হয় বিল দিতে। কিন্তু সমস্যাটি হচ্ছে প্রিপেইড মিটারের প্রত্যেক গ্রাহক নিজেই বিল দিতে যাচ্ছেন। এতে লোকসংখ্যা বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। ডিপিডিসি বলছে, এখন পর্যন্ত তাদের দুই লাখ ৫০ হাজার গ্রাহককে প্রিপেইড মিটার দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ এই আড়াই লাখ গ্রাহকই প্রতি মাসে রিচার্জ করতে যান। নিজস্ব ভেন্ডিং স্টেশনের পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে দিয়ে প্রিপেইড মিটারের অর্থ আদায় করে ডিপিডিসি। দেশের ২৬ টি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে তাদের। তবে সম্প্রতি বিল আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে ডিপিডিসি অর্থ তাদের অধীনে নিয়ে যেতে চাওয়াতে সমস্যা তৈরি হয়েছে। এছাড়া ব্যাংকগুলোতে বিল নেয়ার জন্য যে রিসিট সরবরাহ করতে হয় ডিপিডিসি তা সরবরাহ করে থাকে। কোন কোন সময় ব্যাংকে ওই রিসিট না থাকলে বিল নেয়া বন্ধ রাখা হয়। যেহেতু আর্থিক সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর মতবিরোধ রয়েছে তাই এসব ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করছে। সেই গ্রাহক আবুল হোসেন জানালেন এক এক ব্যাংকে ওই দিন এক এক কথা বলে বিল নেয়নি। কেউ বলেছে রিসিট শেষ হয়ে গেছে আবার কেউ বলছেন তারা নেবেন না তাদের অন্য কাজ রয়েছে। শেষ পর্যন্ত আসাদ গেট গিয়ে বিল দিয়েছেন। তবে তারাও বলেনি কেন ব্যাংকগুলো বিল নিচ্ছে না। দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ২ কোটি ৭০ লাখের কাছাকাছি। ২০২১ সালের মধ্যে বিদ্যমান ও নতুন মিলিয়ে ২ কোটি ২০ লাখ গ্রাহক প্রিপেইড মিটার পাবেন। এছাড়া পর্যায়ক্রমে দেশের সব গ্রাহক পাবেন প্রিপেইড মিটারে বিদ্যুত বিল দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। অর্থাৎ আগামী ৫ বছরের মধ্যেই সারাদেশে ব্যাপকভাবে প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করা হবে। জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, প্রিপেইড মিটারে ভোগান্তির বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে। এখানে বিল দেয়ার ক্ষেত্রে যে জটিলতা তৈরি হচ্ছে তা দেখেই আমরা পেমেন্ট গেট ওয়ে তৈরি করছি। দেশে মোবাইলে যেভাবে রিচার্জ করা হয় একইভাবে পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে গ্রাহক বিল দিতে পারবেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হয়েছে। তবে এখনও কিছুটা সময় প্রয়োজন বলে জানান তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর আজিমপুর এলাকায় কয়েকটি ব্যাংক এবং বিদ্যুত অফিসে ঘুরে লম্বা লাইন দেখা গেছে। গ্রাহককে লাইনে দাঁড়িয়ে বিল দেয়ার ক্ষেত্রে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা সময় লাগছে। রবিবার আজিমপুরের বাসস্ট্যান্ড মোড়ে ডিপিডিসির অফিসে গিয়ে লম্বা লাইন চোখে পড়েছে। লাইনে দাঁড়ানো বিদ্যুত গ্রাহক ইমতিয়াজ হোসেন জানালেন, তিনি সাড়ে ১১টায় লাইনে দাঁড়িয়েছেন। বিল দিতে একটা বাজবে। এই চিত্র কয়েকমাস ধরেই চলছে। যেদিন বিদ্যুত বিল দিতে আসেন ওই দিন আর কোন কাজ হাতে রাখা যায় না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কিভাবে সহজ হবে সে বিষয়ে পরিকল্পনা নেই। বিল প্রদানের বিষয়টি কঠিন করে তোলা হয়েছে। জানতে চাইলে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (হিসাব) গোলাম মোস্তফা বলেন, প্রিপেইড মিটার নতুন সংযোজন। শুরুতে নতুন কিছু আসলেই কিছু সমস্যা তৈরি হয়। তবে আমরা চেষ্টা করছি সমস্যার সমাধান করতে। এজন্য একটি মোবাইল ফোন অপারেটরের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। অন্য আরও মোবাইল ফোন কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করা হবে। আশা করছি এই সমস্যা আর দীর্ঘ সময় থাকবে না।
×