ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনীতে এমসিকিউ থাকছে না, শীঘ্র্রই ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২ মার্চ ২০১৮

পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনীতে এমসিকিউ থাকছে না, শীঘ্র্রই ঘোষণা

বিভাষ বাড়ৈ ॥ প্রশ্ন ফাঁসের ঝুঁকি এড়াতে এবার প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। আগামী পরীক্ষা থেকেই প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও বিতরণ কাজে আনা হচ্ছে পরিবর্তন। বাদ দেয়া হবে অবজেকটিভ প্রশ্ন। নতুন সফটওয়ারের মাধ্যমে স্বল্প সময়ে প্রশ্ন বিতরণ ছাড়াও প্রশ্নসেট বেশি ছাপানোরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এদিকে টেস্ট পরীক্ষায় একটি বিষয়ে ফেল করলেও এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া যাবে না- এমন আদেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষাবিদরা। তারা এই আদেশকে ‘তুঘলকি আদেশ’ অভিহিত করে বলেছেন, এমন সিদ্ধান্তে ভয়াবহভাবে ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধি ছাড়াও স্কুল-কলেজে অস্থিরতা বাড়বে। পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষায় পরিবর্তনের বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পরিবর্তনের বিষয়টি ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত করা হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই বিষয়টি ঘোষণা দিয়ে জানিয়ে দেয়া হবে। কর্মকর্তারা বলছেন, প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি মাথায় রেখেই আনা হবে পরিবর্তন। রাখা হবে না কোন অবজেকটিভ (এমসিকিউ) প্রশ্ন, প্রথমবারের মতো এ সমাপনীতে চালু করা হবে শতভাগ সৃজনশীল লিখিত প্রশ্ন। জানা গেছে, মূলত সম্প্রতি শেষ হওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অব্যাহতভাবে এমসিকিউ প্রশ্ন ফাঁসের প্রেক্ষাপটেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় আনা হচ্ছে পরিবর্তন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো পরীক্ষা নিয়ে বিতর্কে পড়তে চায় না প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিব বৃহস্পতিবার জনকণ্ঠকে তাদের নতুন সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর মাসিক সমন্বয় সভায় পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কারের কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভার সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে প্রশ্নপত্র থেকে এমসিকিউ (নৈর্ব্যক্তিক) বাদ দিয়ে রচনামূলক কী কী প্রশ্ন যুক্ত করা যায় সে বিষয়ে কাজও শুরু হয়েছে। এছাড়া শিক্ষানীতি অনুযায়ী শতভাগ সৃজনশীল প্রশ্নে পরীক্ষা আয়োজন, প্রশ্ন বিতরণের সময় প্রশ্নপত্র যেন ফাঁস না হয় সে কারণে সফটওয়ারের মাধ্যমে ৮ দিনের মধ্যে প্রশ্ন বিতরণ (আগে ২৫ দিন সময় প্রয়োজন ছিল) করা হবে, ৬ সেট প্রশ্নপত্রের বদলে ৮ সেট তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার ইতোমধ্যেই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় নৈর্ব্যত্তিক বা প্রশ্ন তুলে দেয়াসহ অন্যান্য কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া প্রশ্নপত্র ছাপানোর ক্ষেত্রে বিজি প্রেসের বিকল্প আরেকটি প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের বিষয়েও তিনি চিন্তা করার কথা বলেছেন। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি চলতি বছরের জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) থেকে চলতি বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার এমসিকিউসহ (নৈর্ব্যতিক) প্রশ্নপত্রের কাঠামো ও নম্বর বিভাজনের রূপরেখা সারাদেশের স্কুলগুলোতে পাঠানো হয়েছে। এই আদেশ জারির ৮ দিন পরই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র থেকে এমসিকিউ (নৈর্ব্যতিক) পদ্ধতি বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলছিলেন, নানা পর্যবেক্ষণে নৈর্ব্যত্তিক প্রশ্নফাঁস হওয়ার ঘটনা জানা গেছে। এ কারণে আগামী নবেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে আয়োজিত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় এমসিকিউ (নৈর্ব্যত্তিক) অংশ বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, নৈর্ব্যত্তিক বাদ দিয়ে কোন ধরনের রচনামূলক প্রশ্ন যুক্ত হবে তা নির্ণয় করার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সে অনুয়ায়ী প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর নেপকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করছে। জানা গেছে, প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্কট কাটাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে পরীক্ষায় এমসিকিউ অংশ তুলে দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। সে মোতাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পরীক্ষার প্রশ্নপত্র থেকে এমসিকিউ অংশ বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বলছেন কর্মকর্তারা। তবে কেবল প্রধানমন্ত্রী একা নন, সকল পাবলিক পরীক্ষাতেই প্রশ্নফাঁস রোধে এমসিকিউ অংশ তুলে দেয়ার পক্ষে অধিকাংশ শিক্ষা বিশেষজ্ঞ। অনেকে অবশ্য এমসিকিউ রাখার পক্ষে। প্রাথমিকের ৬টি বিষয়ের পরীক্ষার মধ্যে বাংলায় ১০, ইংরেজীতে ২০, গণিতে ২৪, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়ে ৫০, প্রাথমিক বিজ্ঞানে ৫০ এবং ধর্ম বিষয়ে ৫০ নম্বরের এমসিকিউ প্রশ্নপত্র রয়েছে। কিন্তু নতুন নির্দেশনার আলোকে এমসিকিউ বাদ দিয়ে এসব জায়গায় রচনামূলক প্রশ্ন যুক্ত করা হবে। শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষাবিদরা অবশ্য যে কোন সিদ্ধান্ত নিলে তা কার্যকরে শিশুদের সময় দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলেছেন, হুট করে যেন কিছু চাপিয়ে দেয়া না হয়। বাংলাদেশ অভিভাবক সমন্বয় পরিষদের নেতা বিলকিস আক্তার বলছিলেন, আমার সন্তানও আগামী সমাপনী পরীক্ষায় বসবে। একবার বলা হচ্ছে পঞ্চম শ্রেণীতে সমাপনী পরীক্ষা হবে না। আবার বলা হচ্ছে সমাপনী পরীক্ষা হবে। এবার বলছে এমসিকিউ থাকবে না। এমসিকিউ পরীক্ষা হবে না ভাল কথা কিন্তু এটি ৯ মাস আগে কেন বলবে? ভেবে চিন্তে আরও আগে বলা উচিত ছিল। এমসিকিউ বাদ দিলেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হবে না এ গ্যারান্টি কে দেবে?
×