ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রীদেবীর আকস্মিক মৃত্যুতে বলিউডে শোকের ছায়া

প্রকাশিত: ০৪:২০, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

শ্রীদেবীর আকস্মিক মৃত্যুতে বলিউডে শোকের ছায়া

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ পদ্মশ্রী সম্মাননা এবং পাঁচবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কারপ্রাপ্ত বলিউডের প্রখ্যাত অভিনেত্রী শ্রীদেবী চলে গেছেন না ফেরার দেশে। শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে দুবাইতে মৃত্যুবরণ করেন শ্রীদেবী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৪ বছর। বলিউড কুইন শ্রীদেবীর অকাল মৃত্যুতে চলচ্চিত্র অঙ্গন শুধু নয় গোটা সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায় ভাইপো মোহিত মারওয়াশের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে স্বামী বনি কাপুর ও মেয়ে খুশি কাপুরকে নিয়ে দুবাই গিয়েছিলেন শ্রীদেবী। সেখানে শনিবার রাতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে মারা যান শ্রীদেবী। মৃত্যুর সময় স্বামী বনি কাপুর ও মেয়ে খুশি কাপুর তার পাশে ছিলেন। মুম্বাইয়ের সাংবাদিক ফরিদুন শাহরিয়ার টুইটারে একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন, যেখানে দুবাইয়ের সেই বিয়ের অনুষ্ঠানে শ্রীদেবীকে দেখা যায়। এর কিছুক্ষণ পরই অসুস্থ শ্রীদেবীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে তিনি আর ফেরেননি। সাংবাদিক ফরিদুন শাহরিয়ার বলেন, ভাইপোর বিয়ের অনুষ্ঠানে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান শ্রীদেবী। ঘটনায় আকস্মিকতায় এখনও বিহ্বল বনি কাপুরের ভাই, শ্রীদেবীর দেবর সঞ্জয় কাপুর। সঞ্জয় কাপুরের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলো শ্রীদেবীর মৃত্যু সংবাদ প্রচার করে। এ ঘটনার পর পরই রাতে সংবাদ মাধ্যমের কাছে শ্রীদেবীর মৃত্যুর খবর জানিয়ে সঞ্জয় বলেন, দুবাইতেই ছিলাম আমি। খবর পেয়ে এখন ফের সেখানেই ফিরে যাচ্ছি। ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে ঘটনাটা ঘটেছে। এর বেশি কিছু আমিও এখন জানি না। শ্রীদেবীকে বলা হয় বলিউডের প্রথম নারী সুপারস্টার। ১৯৬৩ সালের ১৩ আগস্ট তামিলনাড়ুতে জন্ম নেন শ্রীদেবী। তার আসল নাম শ্রী আম্মা ইয়াঙ্গার আয়য়াপন। ১৯৬৭ সালে মাত্র চার বছর বয়সে শিশু শিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু হয় বলিউডের প্রখ্যাত এই অভিনেত্রীর। ১৯৭৫ সালে ১৩ বছর বয়সে ‘জুলি’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে ইন্ডাস্ট্রিতে তার ক্যারিয়ার শুরু করেন। এরপর একে একে ‘চান্দনী’, ‘নাগিনা, সাদমা’, ‘জানবাজ’, ‘কারমা, ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’সহ অসংখ্য চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন। চিত্র প্রযোজক বনি কাপুরকে তিনি বিয়ে করেছিলেন। তার বড় মেয়ে জাহ্নবী এবং ছোট মেয়ে খুশি কাপুর। শুধুমাত্র হিন্দী চলচ্চিত্রেই নয়, প্রায় পাঁচ দশক ধরে তামিল, তেলুগু, মালয়ালম, কন্নড় সব ক’টি ইন্ডাস্ট্রিতেই নিজের ছাপ রেখে গিয়েছেন শ্রীদেবী। ভারতের বিভিন্ন ভাষার দেড় শতাধিক চলচ্চিত্র উপহার দিয়ে গেছেন শ্রীদেবী। শিশু শিল্পী হিসেবে তামিল ‘থুনাইভান’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তার অভিনয়ের শুরু। প্রথম চলচ্চিত্রেই দর্শকদের মন জয় করে এই অভিনেত্রী বেবি ডল নামে খ্যাতি পান। মালয়ালাম চলচ্চিত্র ‘পুমপাত্তা’তে অভিনয় করে পান কেরালার সেরা শিশু শিল্পীর পুরস্কার। শিশু শিল্পী হিসেবে রুপালি পর্দায় পথচলা শুরু শ্রীদেবীর। চমৎকার অভিনয় আর অসামান্য নৃত্য পারঙ্গমতায় খুব দ্রুত জয় করে নেন কোটি ভক্তের হৃদয়। শ্রীদেবীকে নিয়ে বলা হয় তৎকালীন হিরোনির্ভর হিন্দী চলচ্চিত্রে সংজ্ঞাটাই পাল্টে দিয়েছিলেন। বিশেষ করে ‘চাঁদনী’, ‘লমহে’, ‘চালবাজ’, ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’, ‘নাগিনা’ হোক বা হালফিলের ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ এবং ‘মম’সহ প্রায় একার হাতেই ইন্ডাস্ট্রিকে একের পর এক সুপারহিট চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছেন তিনি। ‘চাঁদনী’, ‘লামহে’, ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’, ‘নাগিনা’সহ ’৯০-এর দশকে একের পর এক সুপারহিট চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন শ্রীদেবী। তাই বলিউডের প্রথম মহিলা সুপারস্টার তকমা পেতে খুব একটা দেরি হয়নি তাঁর। শিশু শিল্পী হিসেবে জীবন শুরু করে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির এক নম্বর ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। ২০১৩ সালে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মাননা দেয়া হয়। শ্রীদেবীর মৃত্যুতে বলিউডে শোক : হঠাৎ করেই চির বিদায় নিলেন বলিউডের প্রখ্যাত অভিনেত্রী শ্রীদেবী। ৫৪ বছর বয়সে এ খ্যাতনামা অভিনেত্রীর আকস্মিক মৃত্যুতে মর্মাহত বলিউডসহ বিশ্ববাসী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক প্রকাশ করতে দেখা যায় অনেককে। শ্রীদেবীর অভিনয় জগতের সহকর্মীদের কেউ কেউ এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, কেউ জানিয়েছেন সমবেদনা, কেউ করেছেন স্মৃতিচারণ। কেউবা বলছেন, শ্রীদেবীকে ছাড়া যেন শ্রীহীন বলিউড। টুইটার বার্তার মাধ্যমে সমবেদনা জানান সুস্মিতা সেন, কমল হাসান, অক্ষয় কুমার, রজনীকান্ত, প্রিয়াঙ্কা চোপরাসহ অনেক সিনিয়র শিল্পী। তার মৃত্যুর খবরে বলিউডে নেমে আসে শোকের ছায়া। শ্রীদেবীর মুম্বাইয়ের বাড়ি ভক্তদের শ্রদ্ধার ঢলে ভরে ওঠে। এই অভিনেত্রীর মৃত্যুতে এক টুইটে ফিল্মফেয়ার স্মরণ করেছে সেই বাঙ্ময় চোখ আর মোহময় হাসির কথা, তার অভিনয়ে মেধার দীপ্তি আর উপস্থিতিতে উজ্জ্বলতার কথা। অসময়ে শ্রীদেবীর এই আকস্মিক মৃত্যুতে ভেঙ্গে পড়েছেন অমিতাভ। শ্রীদেবীর মৃত্যুর ২০ মিনিট আগেই তার মন খারাপ করছিল। খারাপ কিছু ঘটবে ভেবে তিনি অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। ঠিক তার পরেই খবর পান মারা গেছেন শ্রীদেবী। জানি না কেন, এক অদ্ভুত রকমের অস্বস্তি হচ্ছে। শনিবার রাতে হঠাৎ এমন টুইট করেছিলেন অমিতাভ বচ্চন। অভিনেত্রী সুস্মিতা সেন টুইটারে লিখেছেন, আমি মাত্র জানতে পারলাম শ্রীদেবী কার্ডিয়াক এ্যারেস্টে মারা গেছেন। আমি কান্না থামাতে পারছি না। রজনীকান্ত লিখেছেন, আমি আমার খুব কাছের একজন বন্ধুকে হারালাম। আর বলিউড হারিয়েছে একজন সত্যিকারের কিংবদন্তিকে। শোকাহত প্রিয়াঙ্কা চোপরা লিখেছেন আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। শ্রীদেবীর ভক্তদের সবার জন্য সমবেদনা। আজকে শোকের দিন। টুইটার পোস্টের মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ টুইটার বার্তায় লিখেছেন, চলচ্চিত্র তারকা শ্রীদেবীর মৃত্যু সংবাদ শুনে আমি হতবাক।তার মৃত্যুতে লাখ লাখ ভক্তের হৃদয় ভেঙ্গে গেছে। তার অভিনীত ‘মুন্দ্রাম পিরাই’, ‘লামহে’ এবং ‘ইংলিশ-ভিংলিশ’ তরুণ শিল্পীদের জন্য অনুপ্রেরণা। তার পরিবার ও নিকটজনদের জন্য আমার সমবেদনা। শোক প্রকাশ করে টুইটার বার্তায় প্রধানমন্ত্রী মোদি লিখেছেন, বিখ্যাত অভিনেত্রীর অকাল মৃত্যুতে আমি মর্মাহত। তিনি আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব। তার পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা ও তার আত্মার চিরশান্তি কামনা করছি। সালমান খান লিখেছেন বিশ্বাস করতে পারছি না শ্রীদেবী আর নেই। শ্রীদেবীর কাছে আমি, শাহরুখ, আমির কিছু নই।
×