ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাঁওতালদের হাজারো ঐতিহ্য দেখে মুগ্ধ দর্শনার্থী

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সাঁওতালদের হাজারো ঐতিহ্য  দেখে মুগ্ধ দর্শনার্থী

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহীতে প্রথমবারের মতো ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হস্তশিল্প ও সাংস্কৃতিক মেলা’য় স্টলে স্টলে ফুটে উঠেছে বরেন্দ্রের সাঁওতালদের হারানো হাজারো ঐতিহ্য। প্রত্যাহিক জীবনে ব্যবহৃত হাজারো কালের সাক্ষীর সরব উপস্থিতি পুরো মেলার স্টেলজুড়ে। সাঁওতালদের হাজার বছরের ঐতিহ্য বিশেষ করে সংস্কৃতির ধারক বিভিন্ন উপকরণ দেখে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এ মেলায় বরেন্দ্রের আদিবাসী বিশেষ করে সাঁওতালদের গ্রামীণ ও ঐতিহ্যবাহী নানা উপকরণ ঠাঁয় পেয়েছে। দর্শনার্থীরা বলছেন এ অঞ্চলের আদিবাসীদের লুকায়িত বিভিন্ন উপকরণ দেখে হালের নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হবে। রাজশাহী বিভাগীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কালচারাল একাডেমি প্রথমবারের মতো এ মেলার আয়োজন করেছে। মেলায় নৃগোষ্ঠীদের ২৫টি স্টল স্থান পেয়েছে। শুক্রবার সকালে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শেষে রাজশাহী নগর ভবনের গ্রীন প্লাজায় তিন দিনব্যাপী এ মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার নূর-উর-রহমান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক হেলাল মাহমুদ শরীফ। রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও রাজশাহী বিভাগীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কালচারাল একাডেমির উপ-পরিচালক (অ. দা) মোহাম্মদ সালাহউদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে একাডেমির নির্বাহী সদস্য যোগেন্দ্রনাথ সরেন, চিত্ররঞ্জন সরকার, গাব্রিয়েল হাসদা ও কামিল্লা বিশ্বাস উপস্থিত ছিলেন। রাজশাহী বিভাগীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কালচারাল একাডেমির নির্বাহী সদস্য যোগেন্দ্রনাথ সরেন বলেন, রাজশাহীতে প্রথমবারের মতো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হস্তশিল্প ও সাংস্কৃতিক মেলার আয়োজন। এ মেলায় আদিবাসী সম্প্রদায়ের হারনো ঐতিহ্য স্থান পেয়েছে। এসব দেখে নতুন প্রজন্ম আদিবাসী সাঁওতালদের জীবনমান ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করবে। জানতে পারবে আদিবাসী সাঁওতালদের জীবনযাত্রার অতীত ইতিহাস। সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, স্টলে স্টলে হাজার বছরের সাঁওতাল সংস্কৃতির উপসর্গ। সাঁওতাল সম্প্রদায়ের ইতিহাস ঐতিহ্য বিষয়ক বই পুস্তকও রয়েছে এ মেলায়। রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলা থেকে সাঁওতাল ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের দেয়া এসব স্টলে শোভা পাচ্ছে তাদের এককালে ব্যবহার্য হাজারো উপকরণ। এছাড়া আদিবাসীদের শিকারের নানা দেশীয় যন্ত্রপাতি রয়েছে স্টলে। রিমিল নৃত্যগোষ্ঠীর স্টলে গিয়ে দেখা যায় সেখানে নানা শিকারের উপকরণ। তীর ধনুক থেকে শুরু করে সব ধরনের দেশীয় হাতিয়ার। এসব যন্ত্র ব্যবহার করে এক সময় জীবিকা নির্বাহ করতেন এ অঞ্চলের সাঁওতালরা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ছ্যাওকুদের, চিতহ্নি, ফালা, বর্ষাসহ আরও নাম না জানা সব হাতিয়ার। সিসিবিবিওর স্টলে গিয়ে দেখা যায়, কৃষি কাজে ব্যবহার্য ও সংসারিক জীবনের নানা জিনিসপত্র। তাদের রয়েছে রক্ষাগোলা। বিয়ের অনুষঙ্গ নানা ব্যবহৃত উপকরণ। রয়েছে বেন্ডু, ফার, টাঙা, টাংনি, কুককি, ঠুরু, তালমিবিড়া ইত্যাদি। রয়েছে আদিবাসী সাঁওতালদের হারানো ঐতিহ্যবাহী অলঙ্কারের সম্ভারও। আদিবাসী অলঙ্কার নামের এ স্টলে ঠাঁই পেয়েছে সব হারানো গহনা। যুগ যুগ ধরে সাজগোজ পাগল সাঁওতাল রমনীদের সাজার সব অলঙ্কারের সম্ভার রয়েছে স্টলে। আছে শামুক, ঝিনুকের অলঙ্কার। হালের সাঁওতাল তরুণীরা এসব দেখে এখন অনেকে অবাক হচ্ছেন। চেয়ে চেয়ে দেখছেন তারা। এছাড়া তাদের বাহারী হস্তশিল্প, পিঠার পসরাও মিলছে এ মেলায়। মেলায় স্থান পেয়েছে তাদের হারানো হাজারো ধরনের ঐতিহ্যবাহী সব বাদ্যযন্ত্র। মেলায় সস্ত্রীক ঘুরতে আসা জাতীয় আদিবাসী পরিষদের দপ্তর সম্পাদক সুভাষচন্দ্র হেমব্রন বলেন, এখনকার সাঁওতাল রমণীদের সঙ্গে ব্যবহার্য আদিবাসী নৃগোষ্ঠীদের অতীত সাজসজ্জার উপকরণ আর মেলে না। এখন তাদের সাজসজ্জায় আধুনিকতার ছাপ রয়েছে। তবে অতীতে যা ব্যবহার হতো তা আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মারক। এগুলো অনেকটা হারিয়ে গেছে। কেউ কেউ এখনো যত্ন করে লালন করছেন ঘরের কোনে। মেলায় প্রদর্শনের মাধ্যমে আদিবাসী বিশেষ করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও সাঁওতালদের হারানো ঐতিহ্য দেখে অনেকে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। অনেকে ক্ষণিকের জন্য হলেও ফিরে যাচ্ছেন হারানো ঐতিহ্যের কাছে।
×