ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজারে আশ্রয় ক্যাম্প পরিদর্শনে বরিস জনসন

রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যাক

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

রোহিঙ্গারা নাগরিকত্ব নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যাক

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ রাখাইন রাজ্য থেকে এখনও পালিয়ে আসছে রোহিঙ্গা নরনারী ও শিশুর দল। শুক্র ও শনিবার দুদিনে অনুপ্রবেশ করেছে আরও ২০৩ জন। এদিকে, বাংলাদেশ সফররত ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন শনিবার দুপুরে ঢাকা থেকে বিমানযোগে কক্সবাজার গিয়ে সড়ক পথে উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালি ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বরিস জনসন বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয়গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের নিরাপদে নিজ দেশে প্রত্যাবাসনে যুক্তরাজ্য কাজ করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই রোহিঙ্গারা সম্মান, নাগরিকত্ব ও অধিকার নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যাক। তিনি আরও বলেছেন, রাখাইনে রোহিঙ্গারা যাতে অবাধে চলাফেরা করতে পারে সেটাও আমরা আশা করি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে থাকবে যুক্তরাজ্য এ মতও ব্যক্ত করেন। এদিকে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার উভয় দেশে প্রত্যাবাসনের কার্যক্রম নিয়ে এগোচ্ছে বলে জানানো হলেও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গারা প্রতিদিন শুধু অনুপ্রবেশ করেই চলছে। গত বছরের ২৫ আগস্ট পরবর্তী সাড়ে ৫ মাস ধরে রোহিঙ্গারা কোন না কোন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করেই চলেছে। এক শ্রেণীর পুরনো রোহিঙ্গা নেতা রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ত্যাগ করার উৎসাহ যোগাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সীমান্তের ওপারের সূত্রগুলো বলেছে, মিয়ানমারে বসবাসরত রোহিঙ্গারাও জানতে পেরেছে যে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে উভয় দেশে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। তারপরও কেন আসছে রোহিঙ্গারা-এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সংশ্লিষ্ট সকল মহলে। অভিযোগ রয়েছে, রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ এখনও রোহিঙ্গাদের বসবাসের উপযোগী নয়। বিভিন্ন স্থানে আচমকা সেনা অভিযান ও উগ্র মগ সন্ত্রাসীদের হামলা ও নানামুখী অত্যাচার অব্যাহত রয়েছে। আবার এমনও বলা হচ্ছে, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ ও আরসা সদস্যদের ধরতে সেনাবাহিনী ও সেখানকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। এ অবস্থা রোহিঙ্গা বসতবাড়িতে ধরপাকড় চলছে। ফলে সেখানে থাকা রোহিঙ্গারা অনিশ্চিত অবস্থায় থেকে তাদের মধ্যে অনেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে উৎসাহী হচ্ছে। অপরদিকে, বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা ওপারের স্বজনদের মুঠোফোনে এদেশে চলে আসতে উৎসাহ যোগান অব্যাহত রেখেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। মূলত এ কারণেই প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গারা চলে আসছে। সর্বশেষ গত শুক্র ও শনিবার দুদিনে আরও এসেছে ২০৩ রোহিঙ্গা নারী পুরুষ ও শিশু। সীমান্ত এলাকার সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইতোপূর্বেও দেখা গেছে, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার চুক্তি করে কিছু রোহিঙ্গা নিয়ে মাঝপথে নানা টালবাহানা সৃষ্টি করে একতরফাভাবে প্রত্যাবাসন বন্ধ করে দিয়েছে। ১৯৯২ সালের চুক্তির মধ্যে এখনও প্রায় ৩৩ হাজার তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গা রয়ে গেছে টেকনাফ ও উখিয়ার দু’টি শরণার্থী শিবিরে। দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে প্রত্যাবাসনের অপেক্ষায় থাকা রোহিঙ্গারা স্থানীয় পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে রেখেছে। যেখানে ৩৩ হাজার রোহিঙ্গার অপকর্মে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকার লোকজন অতিষ্ঠ, সেখানে বর্তমানে ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার ভার সহ্য করা স্থানীয়দের পক্ষে অসহনীয় অবস্থার সৃষ্টি করেছে। উল্লেখ্য, টেকনাফ ও উখিয়ায় এই দুই উপজেলায় বাসিন্দার সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। সেখানে ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাদের স্থান করে দেয়া কঠিন একটি বিষয়। সরকার মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু এসব অনুপ্রবেশকারীদের প্রত্যাবাসনে স্থানীয় অধিবাসীরা জোরালো দাবি তুলেছে। এদিকে, নাফ নদীর সীমান্ত পয়েন্টে বিজিবির কড়া প্রহরা দেখে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করতে আবারও সাগর পথকে বেছে নিয়েছে বলে প্রতীয়মান। রোহিঙ্গারা নৌকা করে সাগর পাড়ি দিয়ে টেকনাফের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে। শুক্রবার বিকেলে ৩০ পরিবারের ১২৫ জন ও শনিবার ১৪ পরিবারের ৭৮ জন রোহিঙ্গা নতুন করে অনুপ্রবেশ করেছে। ইতোপূর্বে নৌকা ও বোটডুবিতে রোহিঙ্গাদের প্রাণহানি ঘটছে দেখে জেলা প্রশাসন স্থানীয় জেলেদের নৌকা-বোটে রোহিঙ্গাদের পারাপার না করার নির্দেশনা প্রদান করে। স্থানীয় জেলেরা তাদের নৌকায় করে রোহিঙ্গাদের বহন না করলেও মিয়ানমার থেকে নৌকা ভাড়া করে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করেই চলেছে। এদেশে ঘাপটি মেরে থাকা পুরনো রোহিঙ্গা নেতারা ওসব রোহিঙ্গাকে বহন করার কাজে নৌকা ভাড়া আদায় করছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও ওই রোহিঙ্গা নেতারা সদ্য আগত রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত গোপনে দায়িত্ব পালন করে চলছে। টেকনাফের সাবরাং হারিয়াখালীর সেনাবাহিনী ত্রাণকেন্দ্রে দায়িত্বরত জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি ও টেকনাফ উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ দেলোয়ার হোসেন জানান, ওসব রোহিঙ্গাদের প্রথমে সেনাবাহিনীর হারিয়াখালী ত্রাণকেন্দ্রে নেয়া হয়। এরপর তাঁদের টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরে পাঠানো হয়েছে। নাফ নদীতে বিজিবি সতর্ক অবস্থায় থাকায় রোহিঙ্গারা এখন সাগর পাড়ি দিয়ে টেকনাফে ঢুকে পড়ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক জানান, একদিকে প্রত্যাবাসন নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা, অন্যদিকে কোনো না কোনো সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গারা ঢুকছে বাংলাদেশে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ কমছে না। ফলে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভবিষ্যত কি হচ্ছে তা নিয়ে সকলের মাঝে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন ॥ কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন। শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে উখিয়ার কুতুপালং ট্রানজিট ক্যাম্পে আসেন তিনি। সেখানে নতুন করে আসা নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় অন্তবর্তীকালীন কেন্দ্র ও ট্রানজিট ক্যাম্প অফিস পরিদর্শন করেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পরে উখিয়ার বালুখালী-১ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানরত আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আওএম) এর হাসপাতাল ও উখিয়ার বালুখালী-২ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন দাতা সংস্থার কার্যক্রম পরিদর্শন করেন তিনি। এ সময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ অন্যান্য কর্মকতারা তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন। এরপর তিনি সড়ক পথে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছান। বিকেলে রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ফিরে আসেন তিনি।
×