ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

৩ ফেব্রুয়ারি থেকে মাদকের বিরুদ্ধে ডিএসসিসির সাঁড়াশি অভিযান

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২৮ জানুয়ারি ২০১৮

৩ ফেব্রুয়ারি থেকে মাদকের বিরুদ্ধে ডিএসসিসির সাঁড়াশি অভিযান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে মাদকের বিরুদ্ধে সাড়াশি অভিযান পরিচালনা শুরু করবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। শহরজুড়ে চলা এ অভিযানের নেতৃত্ব দেবেন সংস্থাটির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। একইসঙ্গে রাজধানীতে প্রথমবারের মতো প্রায় ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ওসমানী উদ্যানে ‘গোস্যা নিবারণী পার্ক’ নির্মাণকাজ ও বঙ্গবাজারে অত্যাধুনিক পুলিশ বক্সের উদ্বোধন করেন মেয়র। শনিবার রাজধানীর সেগুণবাগিচায় ডিএসসিসি এলাকার ২০নম্বর ওয়ার্ড আয়োজিত ‘জনতার মুখামুখি জনপ্রতিনিধি’ অনুষ্ঠানে বঙ্গবাজারের পুলিশ বক্স উদ্বোধনকালে মেয়র এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ আহমেদ রতন। এ ছাড়া ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বেলালসহ কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তাগণ, বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা উপস্থিত ছিলেন । মেয়র বলেন, জনগণ আমাকে নির্বাচিত করেছে সময় মতো সঠিক সেবা দিয়ে জনগণের ভোটের ঋণ পরিশোধ করতে চাই। তাই আমি মাদকের সমস্যা সম্পর্কে জানি। মাদক সমস্যা শুধু ২০ নম্বর ওয়ার্ডে নয়। এই সমস্যা শহরজুড়ে। এ জন্য ডিএসসিসি এলাকায় আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি থেকেই মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করা হবে। এ জন্য মেয়র ২০ ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের আর কিছু দিন অপেক্ষা করতে অনুরোধ করেন। সেগুনবাগিচায় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে স্থানীয়দের বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনেন মেয়র। এ সময় সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি। সাঈদ খোকন বলেন, ডিএসসিসি এলাকার ২০ ওয়ার্ডে আগে ৭শ’ ৯০টি ল্যাম্পপোস্ট ছিল। এখন ৭শ’ ৫০টিতে এলইডি লাইট লাগানো হয়েছে। বাকি ৪০টি পোস্টে খুব অল্প সময়ের মধ্যে লাগিয়ে দেয়া হবে। শুধু ২০নম্বর ওয়ার্ড নয়। এখন অন্যান্য এলাকার বাসিন্দারা দক্ষিণ সিটির আলোর ঝলকানি দেখতে এই এলাকায় ঘুরতে আসেন। আমাদের কাজ আমরা করে যাচ্ছি। আমরা চাই সেবা দিয়ে আপনাদের ঋণ পরিশোধ করতে চাই। মেয়র বলেন, কিছুদিন আগে চিকুনগুনিয়া রোগে নগরবাসী অনেক কষ্ট পেয়েছে। আমরা আপনাদের জন্য ডাক্তার ও ওষুধের ব্যবস্থা করেছি। ঘরে বসে আপনারা চিকিৎসা পেয়েছেন। ২০ হাজার মানুষকে আমরা চিকিৎসা দিয়েছি। এটা শুধু বাংলাদেশে নয়, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বিরল দৃষ্টান্ত। অনুষ্ঠানে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগে করেন যে, মেয়রকে জানান, সেগুনবাগিচা এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দাদের প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা, রাস্তাায় পার্কিং, রাস্তা দখলে রেখে দোকানপাট করা এবং মাদক সমস্যা। এ ছাড়াও ড্রেনেজ সমস্যা, ছিনতাই, ল্যাম্পপোস্ট ও বিশুদ্ধ পানির সমস্যার কথাও জানান। নাগরিকদের প্রশ্নের উত্তরে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দিতে চেয়েছেন মেয়র। তবে তিনি বলেন কিছু সমস্যা সমাধানে দীর্ঘ সময় লাগবে। তবে আমি চেষ্টা করব এখানকার সমস্যা এখানেই শেষ করতে। তবে জলাবদ্ধতার মতো কিছু সমস্যা শেষ করতে কিছু সময় দরকার হবে। এ দিকে মৎস্য ভবন আরও কিছু এলাকার ছিনতাই সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে সকাল ৬টা থেকে টহল বাড়ানোর অনুরোধ করেন স্থানীয়রা। এর পরিপ্রেক্ষিতে পল্টন ও রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের টহল বৃদ্ধি করার নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র। এ ছাড়া ল্যাম্পপোস্ট মনিটরিং এর দায়িত্বে থাকা কর্পোরেশনের কর্মকর্তাকে সঠিকভাবে কাজ করার নির্দেশ এবং ওয়াসাকে ড্রেনেজ সমস্যা সমাধানে রবিবার থেকে কাজ শুরু হবে বলেও জানান। এর আগে মেয়র বেলা ১১ টায় ডিএসসিসির জল সবুজের ঢাকা প্রকল্পের আওতায় ২৯ একর জায়গার ওপর অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করতে ওসমানী উদ্যানকে নতুনভাবে সাজানো প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজের উদ্বোধন করেন। এ সময় মেয়র দেশে প্রথমবারের মতো প্রায় ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ওসমানী উদ্যানে ‘গোস্যা নিবারণী পার্ক’ নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন। এ সময় মেয়র বলেন, আগামী ৯ থেকে ১০ মাসের মধ্যে পার্কটির নির্মাণ কাজ শেষ হবে। এ পার্কে জলের আঁধার, মিউজিক সিস্টেম, বসার জন্য পৃথক জোন, বাচ্চাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা, পুরনো দিনের গান শোনার ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া বড় স্ক্রিনে টিভি দেখার সুবিধা থাকবে। পুরো পার্কটির চারদিক উন্মুক্ত থাকবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়র বলেন, নাগরিকদের মধ্যে অনেক সময় মান অভিমান, গোস্যা হয়ে থাকে। এই পার্কে যখন মানুষ আসবে স্বাভাবিকভাবে তাদের ভাল লাগবে, প্রফুল্ল লাগবে। এখানে জলের আঁধার আছে, চা, কফি, স্যান্ডউইচ খাওয়া ও হারানো দিনের গান শোনার ব্যবস্থা থাকবে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এখানে এলে মানুষের গোস্যা নিবারণ হয়ে যাবে। এই চিন্তা থেকেই এটি গোস্যা নিবারণী পার্ক। পার্কের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন শেষে বঙ্গবাজার মোড়ে অত্যাধুনিক পুলিশ বক্সের উদ্বোধন করেন মেয়র। সূত্র জানায়, ডিএসসিসি এলাকায় ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭১টি পুলিশ বক্স স্থাপন করা হচ্ছে। শনিবার ৪টির উদ্বোধন করা হয়। এ ছাড়া চলতি বছরে ৭১টি অত্যাধুনিক টয়লেট নির্মাণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১৯টি পার্কিং ও ১২টি খেলার মাঠের উন্নয়ন কাজ হাতে নিয়েছে সংস্থাটি। এ সময় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল, স্থপতি আরিফ আযম, কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন রতন প্রমুখ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
×