ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি হুঁশিয়ারি আদালতের রায় বিপক্ষে যাওয়ার আশঙ্কায় কর্মসূচী ঠিক করতে আজ রাতে বিএনপির স্থায়ী ;###;কমিটির বৈঠক

মাঠ গরম॥ খালেদার মামলার রায় নিয়ে উত্তেজনা

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ২৭ জানুয়ারি ২০১৮

মাঠ গরম॥ খালেদার মামলার রায় নিয়ে উত্তেজনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আদালতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়কে ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। রায়ের দিন ধার্য হওয়ায় এরই মধ্যে পাল্টাপাল্টি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সরকার ও সাবেক বিরোধী দল বিএনপির নেতৃবৃন্দ। আজ রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির জরুরী বৈঠক ডেকেছেন দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। আদালতের রায় বিপক্ষে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা দৃশ্যমান হওয়ায় বিশৃঙ্খলা বা ধংসাত্মক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বেশ কয়েকজন নেতার পাল্টাপাল্টি হুঁশিয়ারিতে গরম হচ্ছে রাজনীতির মাঠ। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া আরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করবে ঢাকার পঞ্চম জজ আদালত। বিএনপি-জামায়াত জোটের ২০০১-০৬ মেয়াদের সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুই কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের এ মামলার প্রধান আসামি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে এ মামলায় খালেদা জিয়ার সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদ- হতে পারে। সেক্ষেত্রে তিনি আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার অযোগ্য হয়ে পড়বেন। এ অবস্থায় নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব নিয়েই উদ্বেগ বাড়ছে বিএনপি ও তাদের মিত্রদের মাঝে। করণীয় নির্ধারণে এরই মধ্যে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বৈঠক ডেকেছেন দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। আজ রাতে রাজধানীর গুলশানে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন চেয়ারপার্সনের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান। বৈঠকে খালেদা জিয়ার মামলা এবং মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে দলের নেতাকর্মীদের করণীয় নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছে দলটির সূত্রগুলো। একইসঙ্গে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নানা বিষয়েও আলোচনা হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য। বিএনপির দাবি, ক্ষমতাসীনরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে অন্তঃসারশূন্য এই মামলাকে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাদের চেয়ারপার্সনকে সাজা দেয়ার বিষয়টি সরকার আগেই ঠিক করে রেখেছে। বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন করতে চায় সরকার। তাই তড়িঘড়ি করে খালেদা জিয়ার মামলার রায় দেয়া হচ্ছে। শুক্রবার প্রয়াত কথাসাহিত্যিক শওকত আলীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করার পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। মির্জা ফখরুল আরও বলেন, বর্তমান সরকার আট-নয় বছর ধরে আছে। জোর করে ক্ষমতায় থেকে প্রতিটি মুহূর্ত, সময়, দিন, ক্ষণে তারা হুমকি দিয়েছেন। শক্তি ও বলপ্রয়োগ করেছেন। ভিন্নমত পোষণকারী কাউকেই তারা সুযোগ দিতে রাজি নয়। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে শনিবার রাত সাড়ে ৮টায় গুলশানের কার্যালয়ে জাতীয় স্থায়ী কমিটির জরুরী বৈঠক ডেকেছেন ম্যাডাম। খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে বিএনপি কোন নির্বাচনে যাবে না। একই সঙ্গে খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোন নির্বাচনও করতে পারবে না বলে মন্তব্য করেন রিজভী। শুক্রবার ফেনীতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের কাছে এমন মন্তব্য করেন তিনি। রিজভী আরও বলেন, সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে বিচারক যদি মামলার রায় এজলাস ছাড়া অন্য কোন পন্থায় করে থাকে সেটি রাজনৈতিকভাবে ও আইনীভাবে মোকাবেলা করা হবে। সরকারের অশুভ কোন ইচ্ছা পূরণ হতে দেয়া হবে না। শেখ হাসিনাকে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান রেখে একতরফা নির্বাচনের চেষ্টা করা হলে তা প্রতিহত করা হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, তাদের চেয়ারপার্সনের মামলায় নেতিবাচক কোন রায় হলে তার পরিণতি ভয়াবহ হবে। আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরাম’ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় গয়েশ্বর রায় আরও বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারি যেটা আমরা আশঙ্কা করছি, সেদিন নেতিবাচক কোন সিদ্ধান্ত সরকার কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে যদি আদালত থেকে প্রকাশ পায়, তাহলে আমার মনে হয়, তখন থেকে এই সরকারের পতনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হবে। ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে এই বিএনপি নেতা বলেন, সময় বলে দেবে কে নেতৃত্ব দেবে, আর কে রাজপথে থাকবে। সরকারকে বলব, জেলের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা তো খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৃহত্তর কারাগারেই আছি। আমরা সবাই খালেদা জিয়ার জেল পার্টনার। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু করার ঘোষণা দিই বা না দিই, এমন কিছু যে ঘটবে না- সে নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারি না। আদালতের রায়কে ঘিরে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলে বলছেন সরকার দলীয় নেতারা। বিএনপির বিরুদ্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলার ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ তুলেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা চালানোর ষড়যন্ত্র করছে। অতীতে অনেক ষড়যন্ত্র করেছে, অনেক মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। এরপরও তারা সফল হতে পারেনি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ তাদের এই অপকর্মের জবাব দেবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কার্যালয় ভাংচুরের ঘটনা এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার আদালতে যাওয়া-আসার পথে ঘটনা, মির্জা ফখরুলের মিথ্যাচার সবকিছু একইসূত্রে গাথা বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, যারা প্রথমে ঢাবি ভিসির কার্যালয় ঘেরাও করল, ভিসিকে অপদস্থ করল, ভিসিকে গালাগাল দিল এবং তার কার্যালয়ের তিনটি গেট ভাংচুর করল, ছাত্রলীগের নারী নেত্রীদের লাঞ্ছিত করেছিল তাদের অপরাধ সবচেয়ে বেশি। পরবর্তী ঘটনা প্রবাহসহ পুরো ঘটনাটি অনভিপ্রেত। হাছান মাহমুদ বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আরাফাত রহমান কোকোর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে যেই ভাষায় কথা বলেছেন, আমি আর তাকে ভদ্রলোক বলতে পারি না। তিনি ভদ্রলোকের বেশ ধরে যে শব্দগুলো উচ্চারণ করেছেন আমি সেই শব্দগুলো এখানে উচ্চারণ করতে পারছি না। বিএনপি মহাসচিবের প্রতি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আপনি ভদ্রলোক ছিলেন দিন দিন কেন অভদ্র হয়ে যাচ্ছেন? বাংলাদেশের আদালত স্বাধীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সব আদালত স্বাধীন বিধায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের টিকেটে নির্বাচিত এমপি কারাগারে আছে এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীদের আদালতে হাজিরা দিতে হয়। এমনকি মন্ত্রীদের আদালতে গিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়। বাংলাদেশের আদালত স্বাধীন। খালেদা জিয়ার মামলার রায় নিয়ে দেশে আবার কোন জ্বালাও-পোড়াও হলে তাতে বিএনপিই পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন আদালত ‘স্বাধীন ছিল না’ বলেই বিএনপি নেতারা মনে করেন, সরকারের ইচ্ছায় রায় হয়। তারা মনে করেন, তাদের সময়ে আদালত যেভাবে কাজ করত, এখনও মনে হয় আদালত সেভাবেই কাজ করে। এখন আদালত স্বাধীন। খালেদা জিয়া হয়ত খালাসও পেতে পারেন। এদিকে রায়কে ঘিরে বিশৃঙ্খলা বা ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। শুক্রবার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আইন সবার জন্য সমান। রায়ের পর কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। আইন সবার জন্য সমান। অপরাধ যে-ই করুক না কেন তার শাস্তি হবে। একই বিষয়ে কথা বলেছেন বর্তমান আইজিপি এ কে এম শহীদুল হকও। মিরপুরে শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘রায় আদালত দেবে। আদালত কারও পক্ষে বা বিপক্ষে রায় দেয় না। এতদিন যে সাক্ষী প্রমাণ হাজির করা হয়েছে সে ভিত্তিতেই রায় হবে। রায় যাই হোক তা আমাদের সবার মেনে নেয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, রায় কেউ না মানলে তারা উচ্চ আদালতে যেতে পারেন। এ বিষয়ে আইনী প্রক্রিয়া আছে। সেটা মেনে চলা উচিত। বিএনপি দায়িত্বশীল একটি দল। রায় তারা মেনে নিতে না পারলে আইনী প্রক্রিয়ায় যাবে। কিন্তু দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয় এমন কিছু তারা করবে না এটা আমার বিশ্বাস। তারপরও আমাদের প্রস্তুতি থাকবে। কেউ যদি পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে চায় তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×