ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এবার বোল ধরেছে পৌষেই বারতা দিচ্ছে নতুন বছর ভালই যাবে!

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭

এবার বোল ধরেছে পৌষেই বারতা দিচ্ছে নতুন বছর ভালই যাবে!

সমুদ্র হক ॥ মুকুল আসার কথা ফাল্গুনে। এবার অনেকটা আগে, পৌষেই এসেছে। পরিবেশবিদগণের কথা, জলবায়ুর পরিবর্তন। সত্যিই কি! প্রবীণরা খনার বচন ঠোঁটে এনে বলছেন, আমে ধান তেঁতুলে বান। দেশে আমের বন চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর বাগানের কয়েক মালিক বললেন, সময়ের অনেক আগেই গাছভরে মুকুল এসেছে। ধারণা দিচ্ছে, এবার আমের ফলন বেশি হবে। যে বছর আমের বেশি ফলন হয় তখন বলা হয় ‘অন ইয়ার’। আমের এই মুকুলের একটি নাম ‘আ¤্রমঞ্জরি’। গোধূলিবেলা থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত আ¤্রমঞ্জরির ম ম গন্ধ ভেসে আসছে আমগাছ থেকে। গাছের ডালের আগায় তীরের ফলার মতো আ¤্রমঞ্জরির আরেক নাম পুষ্পশর। বিপ্রদাস বড়ুয়ার লেখা থেকে জানা যায়, প্রণয়ের দেবতার পাঁচটি শরের মধ্যে অন্যতম পুষ্পশর বা আ¤্রমঞ্জরি। বাকি চারটি শর হলো- পদ্ম, রক্তপদ্ম, অশোক ও নবমল্লিকা। এই পাঁচটি শর দিয়ে প্রণয়ের দেবতা কিউপিড বা কামদেব মানব-মানবীর হৃদয়ে জাগিয়ে দেয় প্রেম। কামধনু থেকে তিনি যে কোন একটি পুষ্পশর (তীর) ছুঁড়ে দেন। এ থেকে কারও মুক্তি নেই। প্রণয়ের দেবতার এই পুষ্পশর আমের বনেই ফুটেছে। পৌষের মধ্যভাগে বৃক্ষে আ¤্রমঞ্জরি আগমনের সঙ্গেই টুনটুনি, কোয়েল, বউ কথা কও, সোনা বউ, ঘুঘু ও অনেক পাখি ডালে বসছে। ঋতু ভুলে গিয়ে ফাগুনের ডাক এখনই দিচ্ছে। পুষ্পশরের এমন মধুময়তা বাতাসে ছড়িয়ে নতুন বারতা দিচ্ছে। এই বারতা আগাম পেয়ে যাচ্ছে ফাগুন। পৌষের কোন কোন দুপুরের বাতাসকে এখনই মনে হচ্ছে ফাগুনের দিন। বসন্তের দিনগুলোও কি তাহলে আগেই এসে যাবে! বাঙালীর ঐতিহ্যের সংস্কৃতির ফাগুনের দিন যা মানবজীবনের বসন্তবেলা; কতই না মধুময়তা এনে দেয়। যে আ¤্রমঞ্জরি পৌষেই এসেছে; ফাগুনের মাসে এই আ¤্রমঞ্জরি বসন্তের অনেক ফুলের মধ্যে হয়ত ঢেকেই থাকবে। কে আর মনে রাখবে এই আ¤্রমঞ্জরিকে। এই আ¤্রমঞ্জরি ফাল্গুনের শেষে বৃক্ষে এনে দেবে বোল। ওই সময় পরিচর্যা দরকার। আমে গাছ ভরে গেলে আম এতটাই নিচে আসে যে বাঁশ দিয়ে ঠেকা দিতে হয়। কথায় আছে, ফলবান বৃক্ষ ফলভারে নত হয়। এবারের আ¤্রমঞ্জরি কি তেমনই জানান দিয়ে বলছে- জাতীয় গাছ এবার ফলভারে নুয়ে যাবে। এদিকে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষীরা তো এবারের মুকুল দেখে মহাখুশি। তারা বলছেন, ঘন কুয়াশা, শিলাবৃষ্টি ও খরা না হলে এই মুকুলে ভালভাবে আম ধরবে। বছর সাতেক হয় আম বাগানের বিস্তৃতি ঘটেছে নওগাঁর নিয়ামতপুর, মহাদেবপুর, পতœীতলা ও পোরশা উপজেলায়। দিনাজপুরও আম উৎপাদনের বড় অঞ্চল। বছর কয়েক আগে রংপুর অঞ্চলে হাড়িভাঙা নামের এক ধরনের আম ফলছে। স্বাদে মিষ্টতা আছে। এছাড়া দেশের প্রতিটি অঞ্চলেই আমগাছ আছে। একেক অঞ্চলের আমের স্বাদ একেক রকম। এর মধ্যে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলের আমের স্বাদ সবচেয়ে ভাল, মিষ্টিমধুর; যা মুখে লেগে থাকে। সেখানে অনেক জাতের আম ফলে। সময়ের আগে এবারের আমের মুকুলের আগমনে আশা করা যায় নতুন বছরটি ভালই কাটবে। বাঙালীর আম বলে কথা!
×