স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকার বিচার বিভাগকে নিজেদের স্বার্থে পরিচালিত করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানও। জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘সরকারের বর্তমান কর্মকা- এবং সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ আবেদনের ৯৪ পয়েন্ট (গ্রাউন্ড) দেখে মনে হচ্ছে তারা পুরো বিচার বিভাগকে নিজেদের স্বার্থে পরিচালিত করতে চায়। তারা যেভাবে চায় সেভাবেই আদালতকে রায় দিতে হবে।’
সোমবার সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের দক্ষিণ হলে সমিতির ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ বক্তব্য দেন। উল্লেখ্য, সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদে বিএনপি-জামায়াত সমর্থকরা দায়িত্ব পালন করছে।
এ দিকে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ বিষয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, যে কোন রায়ে সংক্ষুব্ধ হলেই আমরা রিভিউ আবেদন দায়ের করতে পারি। এটা সাংবিধানিক অধিকার। রিভিউ আবেদনের বিষয়ে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সুপ্রীমকোর্ট বার ব্যবহার করে সংবাদ সম্মেলন করা অনভিপ্রেত, উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
জয়নুল আবেদীন দাবি করেন, ‘প্রধান বিচারপতিকে বিদায় করে অন্যান্য বিচারপতিকে ভয় দেখানোর চেষ্টাও করেছে সরকার।’ লিখিত বক্তব্যে বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘অতীতে বহুবার বেআইনী সংশোধনীর বিরুদ্ধে অনেক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন এই সর্বোচ্চ আদালত। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত এবং আদেশের বিরুদ্ধে কোন সরকার ক্ষুব্ধ হয়ে রিভিউ আবেদন করেছেন বলে আমাদের জানা নেই। একটি রায়ের মধ্যে সরকারের মতে দু’একটি পর্যবেক্ষণ অপ্রাসঙ্গিক থাকতেই পারে। কিন্তু বিজ্ঞ এ্যাটর্নি জেনারেল ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের জন্য ৯৪টি যুক্তি দেখালেন। এতে আমাদের মনে হচ্ছে, এই সরকার বিচার বিভাগকে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখার সিদ্ধান্ত সুকৌশলে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমেই নিতে চাচ্ছেন। যে কারণে, এই রায়ের পরে তারা বিভিন্ন রকম অহেতুক এবং অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য প্রদান করে রায়টিকে বিতর্কিত করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশে আজ মানুষের কথা বলার অধিকার নেই। গণতন্ত্র নেই, মানবাধিকার নেই, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা নেই। দেশে অহরহ গুম, খুন চলছে। এ জন্যই সরকারের কর্মকা- নিয়ে যাতে কেউ আদালতের দ্বারস্থ না হতে পারে সেজন্য সরকার বিচার বিভাগের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা।’
জয়নুল আবেদীন আরও বলেন, ‘এই রায় থেকে স্পষ্ট যে, এই সরকার নির্বাচিত সরকার নয়। সেজন্যই তারা আইনের শাসনে বিশ্বাস করেন না, গণতন্ত্র বিশ্বাস করেন না। তাই তারা সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছেন এবং রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন দাখিল করেছেন। আমরা বিশ্বাস করি, যে ৭ জন বিচারপতি এই রায় দিয়েছেন তার মধ্যে ৫ জন এখনও আপীল বিভাগের দায়িত্বে আছেন, তারা তাদের পূর্ববর্তী রায়ের আলোকে এই রিভিউ বিবেচনার আবেদনটি বাতিল করবেন। আমরা দেশের আইনজীবীরা এর প্রতি দৃষ্টি রাখছি এবং ভবিষ্যতে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার জন্য আমরা কঠোর কর্মসূচী দেবো।’
সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সমিতির সহ-সম্পাদক শামীমা সুলতানা দীপ্তি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এই সংবাদ সম্মেলন অনভিপ্রেত, অনাকাক্সিক্ষতÑ এ্যাটর্নি জেনারেল ॥ রিভিউ আবেদনের বিষয়ে বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবী নেতাদের সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে জানতে চাইলে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জনকণ্ঠকে বলেন, স্বাভাবিকভাবে যেকোন রায়ের বিষয়ে সংক্ষুব্ধ হলে বাদী বা বিবাদী পক্ষ রিভিউ আবেদন করতে পারবে। এটা সাংবিধানিক অধিকার। আমরা সেই অধিকারটাই প্রয়োগ করেছি।
এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটা সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় আমরা সংবিধানের মূল প্রভিশনে ফিরে যাব সেটার সামনে বিচার বিভাগ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। তাদের (বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের) সমস্যাটা হলো সাইকোলজিক্যাল বা মনস্তাত্ত্বিক। যেহেতু জিয়াউর রহমানের তৈরি করা সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বাতিল করে আমরা বাহাত্তরের মূল সংবিধানে ফিরে যেতে চাই, এটাই হলো তাদের মানসিক সমস্যা।
সুপ্রীমকোর্ট বার ব্যবহার করে বার বার সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে কি বলবেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ অন্যায়, আমরা সংবিধানের বিষয়ে আদালত একটা রায় দিয়েছে, সেই রায় আমরা পুনর্বিবেচনার আবেদন করব, এটা আদালতের বিষয়। তারা এটাকে নিয়ে সুপ্রীমকোর্ট বারের নাম ব্যবহার করে যে সংবাদ সম্মেলন করছে এটা অনভিপ্রেত, অনাকাক্সিক্ষত ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
পর পর দুই বার ডাকযোগে হত্যার হুমকি পাওয়ার বিষয়ে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এসব হুমকিতে আমি ভয় পাই না। সব সময় সত্যের পথে ছিলাম এবং থাকব। যারা যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির রায়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন তারাই এসব হুমকি দিতে পারে। হুমকি দিয়ে আমাকে থামিয়ে রাখা যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ্যাটর্নি জেনারেলের মন্তব্য
রিভিউ নিয়ে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের বক্তব্য উদ্দেশ্যমূলক
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: