ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

*সচিব-প্রকল্প পরিচালকদের সঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রীর সভা;###;*চার মাসে বাস্তবায়ন ১৪.৫১ শতাংশ;###;*বাস্তবায়নের শীর্ষে বিদ্যুত বিভাগ, তলানিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়

রেকর্ড ব্যয়ে এডিপির ৯৮ শতাংশ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৫ ডিসেম্বর ২০১৭

রেকর্ড ব্যয়ে এডিপির ৯৮ শতাংশ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। শতাংশের হিসেবে এটি এডিপিতে মোট ব্যয়ের ৯৮ শতাংশ। তিনি বলেন, আমাদের এখানে এডিপি বাস্তবায়ন নির্ভর করে পরিবেশ-পরিস্থিতির উপর। বাকি সময়টাতে যদি বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটে, তাহলে এবার লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি এডিপি বাস্তবায়ন করা যাবে। কারণ এবার এডিপির আকারও অনেক বড়। সোমবার ৩৫০ কোটি টাকার উপরে বরাদ্দ পাওয়া ৮৬ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গে সভা শেষে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। মন্ত্রী জানান, পদ্মা সেতুসহ আলোচিত ৮৬টি প্রকল্পের মধ্যে অধিকাংশই ভাল অবস্থানে আছে। সচিব ও পিডিরা আশ^স্ত করেছেন, প্রকল্পের বাস্তবায়ন সঠিক পথেই রয়েছে। অবশ্য অধিকাংশ পিডিই বাড়তি টাকা বরাদ্দ চেয়েছেন। যদি বৃষ্টি বা প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগ না আসে তাহলে এডিপি বাস্তবায়নের লক্ষ্য পূরণ হবে। আমাদের সম্পদের সমস্যা নেই, এখন আমাদের সমস্যা হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পদ্মা খর¯্রােতা নদী। এখানে এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। তাই মাঝে কিছুটা সমস্যা ছিল। এখন অনেক বড় হ্যামার আনা হয়েছে। সমস্যার সমাধান হয়ে যাচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, একটি প্রকল্পের জমি নিয়ে সমস্যা ছিল, সেটি এখন কেটে গেছে। কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পেও গতি ফিরে এসেছে। মন্ত্রী আরও বলেন, চলতি অর্থবছরের চার মাসে ২৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। একসময় ২৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হতো গোটা অর্থবছরে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মতো একজন প্রকল্প পরিচালক একাধিক প্রকল্পের দায়িত্বে নেই। আইএমইডিও এখন প্রায় সব প্রকল্পই পরিদর্শন করছে। তাই প্রকল্পের গুণগত মানও বাড়ছে। সভা সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে মোট এডিপির আকার হচ্ছে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৫০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ পাওয়া ৮৬টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ রয়েছে মোট ৯৪ হাজার ২০৮ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির ৫৭ শতাংশ। গত অক্টেবর মাস পর্যন্ত অর্থবছরের চার মাসে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের অগ্রগতি হয়েছে ১৮ শতাংশ। ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতায় এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এডিপিতে প্রকল্প রয়েছে মোট ১ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা। শীর্ষে বিদ্যুত বিভাগ, তলানিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ॥ চলতি অর্থবছরের চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর পর্যন্ত) ৩৫০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ পাওয়া প্রকল্পের মন্ত্রণালয় ভিত্তিক অগ্রগতি হচ্ছে, বিদ্যুত বিভাগের ২২ প্রকল্পের অগ্রগতি ৪৩.৯১ শতাংশ। স্থানীয় সরকার বিভাগের ৯ প্রকল্পে ৩০.৬২ শতাংশ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ৮ প্রকল্পের ২৮.০৪ শতাংশ। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের ৫ প্রকল্পে ১৩. ৮১ শতাংশ। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ৫ প্রকল্পে ৩৬ শতাংশ। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৫ প্রকল্পে ৪.৫৫ শতাংশ। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের ৪ প্রকল্পে ৭.৬২ শতাংশ। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের ৪ প্রকল্পে ১২.২৩ শতাংশ। সেতু বিভাগের ৩ প্রকল্পে ২.২৬ শতাংশ। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ৩ প্রকল্পে ৩৭.৩৮ শতাংশ। তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের ২ প্রকল্পে ১০.৮শতাংশ। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের ২ প্রকল্পে ১৫.৪৩ শতাংশ। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ২ প্রকল্পে ১.৪৫ শতাংশ। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের ২ প্রকল্পে ১২ শতাংশ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পে কোন অগ্রগতি নেই। দুর্যোগ ব্যবস্থা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পে ২৪.৬২ শতাংশ। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের একটি প্রকল্পে ৩৪.৪১ শতাংশ। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের একটি প্রকল্পে ৬.১৯ শতাংশ। সুরক্ষা বিভাগের একটি প্রকল্পে ৯.১৩ শতাংশ। আইন ও বিচার বিভাগের একটি প্রকল্পে ১৮.৯১ শতাংশ। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে একটি প্রকল্পে শূন্য ৯ শতাংশ। অর্থবিভাগে একটি প্রকল্পে ৪.৭১ শতাংশ এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের অগ্রগতি শূন্য শতাংশ। উল্লেখযোগ্য বড় প্রকল্প ॥ চলতি অর্থবছরে ৩৫০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ পাওয়া প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পদ্মা সেতু প্রকল্প, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো/সুবিধাদি উন্নয়ন, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট (মেট্রোরেল), সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্প, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহুলেন সড়ক টানেল নির্মাণ, সাসেক রোড কানেক্টিভিটিঃ ইমপ্রুভমেন্ট অব জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা রোড-৪ লেইন হাইওয়ে, মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ারর্ড প্রজেক্ট, ঘোড়াশাল-৩ রিপাওয়ারিং প্রকল্প, কনস্ট্রাকশন অব ঘোড়াশাল ৩৬৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার পান্ট, কনস্ট্রাকশন অব বিবিয়ানা-৩,৪০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট, খুলনা ৩৩০ মেগাওয়াট ডুয়েল-ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুত কেন্দ্র, ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ব্রডব্যান্ড ওয়ারল্যাস নেটওয়ার্ক স্থাপন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্প এবং পদ্মা (জলসদিয়া) ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্প। সূত্র জানায়, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছর ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৪ কোটি টাকার এডিপি হাতে নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল (জিওবি) হতে যোগান দেয়া হচ্ছে ৯৬ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ধরা হয়েছে ৫৭ হাজার কোটি টাকা এবং বিভিন্ন সংস্থা ও কর্পোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে ১০ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য রয়েছে। আইএমইডি জানায়, চলতি অর্থবছরের চার মাসে অর্থাৎ জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ১৪ দশমিক ৫১ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। তার আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১১ শতাংশ। গত চার মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করেছে মোট ২৩ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিলের (জিওবি) ১১ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা। বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১১ হাজার ১১৯ কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ১ হাজার ১৪২ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এদিকে চলতি অর্থবছরের এক মাসে অর্থাৎ শুধু অক্টোবর মাসে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ব্যয় করেছে ৭ হাজার ৬০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। গত অর্থবছরের অক্টোবর মাসে ব্যয় হয়েছিল ৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। ওই অর্থবছরের এডিপির ৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
×