ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

* ’২১ সালের মধ্যে জিডিপি দুই অঙ্কে পৌঁছাবে ;###;* এ লক্ষ্যে জোর দেয়া হচ্ছে নিজস্ব অর্থায়নে

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বাজেট ॥ ৭ লাখ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ৫ ডিসেম্বর ২০১৭

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বাজেট ॥ ৭ লাখ কোটি টাকা

এম শাহজাহান ॥ রূপকল্প-২১ সামনে রেখে নিজস্ব অর্থায়নে বাজেট প্রণয়নে জোর দেয়া হচ্ছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অর্থবছরে বাজেটের আকার হবে ৭ লাখ কোটি টাকা। আগামী ২০১৮-১৯ অর্থছরে বাজেটের সম্ভাব্য আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। প্রতিবছর বাজেটের আকার ধারাবাহিকভাবে বাড়ানো হচ্ছে। একই সঙ্গে বৈদেশিক ঋণ সহায়তা ও বিনিয়োগ আকর্ষণে আগামী বাজেটে বিশেষ পদক্ষেপ থাকছে। বাজেট সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পেতে হলে অভ্যন্তরীণ অর্থ ব্যবস্থা শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে বাজেট প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে অর্থের যোগান বাড়াতে হবে। চলতি অর্থবছর শেষে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ৩০ শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া আয় বাড়ানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ জোর দিচ্ছে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মধ্য আয়ের দেশে যেতে হলে বাড়াতে হবে বাজেটের আকার। এই লক্ষ্য অর্জনে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে সরকার। চলতি বাজেটের আকার উচ্চাভিলাষী নয় বরং এটিই বাংলাদেশের জন্য প্রকৃত বাজেট। আবার ২০২১ সালের মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছানোর লক্ষ্য পূরণে সাত লাখ কোটি টাকার বাজেট দিতে হবে। ওই সময়ের মধ্যে বাড়বে মাথাপিছু আয়, রিজার্ভ, রেমিটেন্স, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও রফতানি। এছাড়া অবকাঠোমো উন্নয়ন বিশেষ করে বিদ্যুত ও গ্যাসের যে সঙ্কট রয়েছে তা দূর হবে। দারিদ্র্য শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। সর্বোপরি জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজি অর্জনে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বা শতভাগ এডিপি বাস্তবায়নের দক্ষতা অর্জিত হবে। জানা গেছে, নিজস্ব অর্থায়নে বাজেট প্রণয়ন করতে হলে সরকারের আয় আগে বাড়ানো প্রয়োজন। গত অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের গ্রোথ ছিল ১১ শতাংশ। রাজস্ব আয় আরও বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষ করে বেশিসংখ্যক মানুষ ও প্রতিষ্ঠানকে কর এবং ভ্যাটের আওতায় নিয়ে আসা হবে। সরকার আশা করছে, বছর শেষে রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি ৩০ শতাংশ হবে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন, প্রতিবছর বাজেটের আকার বাড়ানো হচ্ছে। বাড়ছে সরকারের আয়ও। তিনি বলেন, আয়কর নিবন্ধন লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিলাম ২৫ লাখ। এবার সেটা ৩২ লাখ হয়ে গেছে। বাংলাদেশের উজ্জ্বল যুবকরা মনে করে কর দেয়া তাদের দায়িত্ব। দেশকে টাকা দেয়া দরকার। এটা দারুণ খুশির খবর। এভাবে সবাই কর দিলে নিজস্ব অর্থায়নে বাজেট প্রণয়নের স্বপ্ন বাস্তবায়ন অসম্ভব নয়। এ লক্ষ্যে আসন্ন বাজেটেও কিছুটা দিক নির্দেশনা থাকবে। তিনি বলেন, বিশ্বের ৫৭টি দেশের চেয়ে বাংলাদেশ আয়তন ও সম্পদে বড়। কিন্তু ১৬ কোটির মধ্যে কর প্রদান করছেন মাত্র ১১ লাখ মানুষ। তবে উপার্জনক্ষম সব ব্যক্তিকে করের আওতায় আনা গেলে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। এসব সম্ভাবনা বিবেচনায় নিয়েই সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের অর্থবছরে ৭ লাখ কোটি টাকা বাজেট করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে, চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৪ শতাংশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে; যা পর্যায়ক্রমে ’২১ সাল পর্যন্ত ১০ শতাংশে নেয়া হবে। এ লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ ও বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করবে সরকার। ইতোমধ্যে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের আস্থা বাড়ানো ও বিজনেস এনভায়রনমেন্ট নিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে। আগামী বাজেটে তার প্রতিফলন থাকবে। বিদেশী উদ্যোক্তাদের বিশেষ করে চীন, জাপান ও কোরিয়ার উদ্যোক্তাদের ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চল করতে কিছু জমি দেয়া হয়েছে। এছাড়া ইপিজেডগুলোতেও তাদের প্লট ও শেড বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। আগামীতে আরও ব্যবস্থা থাকবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রাগুলো বাস্তবায়নে নিজস্ব অর্থায়নের পাশাপাশি দাতাদের পরামর্শ ও আর্থিক সহযোগিতার জন্য অনুরোধ জানানো হবে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যে প্রচুর বিদেশী অর্থের প্রয়োজন হবে তার একটি অংশ চাওয়া হবে দাতাদের কাছ থেকে। একইসঙ্গে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত করতে কাক্সিক্ষত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন, বিদেশী বিনিয়োগ ও রফতানি বৃদ্ধির জন্য দাতাদের কাছে নীতিগত সহায়তা চাওয়া হবে। সরকারের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, মধ্য আয়ের দেশ হতে আগামী ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর অন্তত ৩০০ কোটি ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই সহায়তা আরও বৃদ্ধির জন্য সরকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকার বাজেট ব্যবস্থাপনায় বিদেশী ঋণের ব্যবহার বাড়াতে চায় বলে জানিয়েছেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব কাজী শফিকুল আজম। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, এই মুহূর্তে দেশের বিদ্যমান ঋণের ৬০ ভাগ নেয়া হচ্ছে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। আর ৪০ শতাংশ বিদেশী। এর মধ্যে দেশী ঋণ একটু বেশি সুদ হয়। এ বছর প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকার সুদ পরিশোধ করা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ২ হাজার কোটি টাকা বিদেশী ঋণের সুদ, বাকিটা দেশীয় ঋণ। তিনি বলেন, এ বছর জিডিপির ৫ শতাংশ ডেফিসিট আছে, এর মধ্যে সাড়ে ৩ ভাগ অভ্যন্তরীণ খাত, দেড় ভাগ বিদেশী খাত থেকে নিচ্ছি। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির মতে, বাজেটে বরাদ্দের প্রায় ৭৯ শতাংশের বেশি যোগান দিতে পারে সরকারের রাজস্ব আয়। আর বাজেটের ২১ শতাংশ অর্থাৎ ঘাটতি অর্থায়নের যোগান দেবে সম্মিলিতভাবে সরকারী-বেসরকারী যৌথ অংশীদারিত্ব বা পিপিপি। এছাড়া বিদেশে বসবাসকারী দেশীয় নাগরিকদের কাছে বন্ড বিক্রি, সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ গ্রহণ এবং দেশীয় ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে ঘাটতি মেটানো সম্ভব। অধ্যাপক আবুল বারকাতের মতে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে ৯ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রণয়ন সম্ভব। তবে বাজেটের অন্যতম দুর্বল দিক হলো সময়মতো এবং মানসম্মত বাস্তবায়ন না হওয়া। তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতি ও সমাজের সুষ্ঠ অগ্রগতির লক্ষ্যে টেকসই উন্নয়ন প্রক্রিয়া অনুসরণ বাঞ্ছনীয়। ধনী-দরিদ্রের ক্রমবর্ধমান বৈষম্য বড় দুর্ভাবনার বিষয়। গত ৪০ বছরে সমাজ অর্থনীতিতে বহুমুখী দারিদ্র্য যেমন বেড়েছে তেমনি অঢেল বিত্ত-সম্পদ পুঞ্জীভূত হয়েছে গুটিকয় ধনীর হাতে।
×