ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফোক ফেস্ট, লিট ফেস্টের প্রস্তুতি সম্পন্ন

বিশ্বসাহিত্য ও সঙ্গীতের দুটি আন্তর্জাতিক আসর, উৎসবের অপেক্ষা

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৮ নভেম্বর ২০১৭

বিশ্বসাহিত্য ও সঙ্গীতের দুটি আন্তর্জাতিক আসর, উৎসবের অপেক্ষা

মোরসালিন মিজান বিশ্বসাহিত্য ও সঙ্গীতের খুব উল্লেখযোগ্য দুটি উৎসব। একটি ঢাকা লিটের‌্যারি ফেস্টিভ্যাল। সংক্ষেপে লিট ফেস্ট। অন্যটি বাউল সাধকদের গান শোনার আসর। নাম ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্ট। আয়োজনগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের নিজস্ব যা কিছু, যতেœর সঙ্গে তুলে ধরা হচ্ছে। সেইসঙ্গে থাকছে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের শিল্পী সাহিত্যিকদের অংশগ্রহণ। আন্তর্জাতিক এমন আয়োজন মুখ উজ্জ্বল করছে বাংলাদেশের। এ সমস্যা সেই সমস্যার দেশ। সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণের চেষ্টা চালাচ্ছে। তেমনি অব্যাহত রেখেছে শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির চর্চা। এ খবর ছড়িয়ে পড়ছে পৃথিবীর নানা প্রান্তে। চমৎকার আদান প্রদানের উৎসব লুফে নিয়েছে রাজধানীবাসীও। তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিদের কোন কিছুতে পাওয়ার আশা অনেকেই ছেড়ে দিয়েছিলেন, আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে এসেছেন তারাও। দেখে কী যে ভাল লাগে! বছর ঘুরে আবারও এসেছে উৎসবের ক্ষণ। হেমন্তের নরম রোদ এখন। শীত শীত বিকেল। আর রাতে যেটুকু ঠা-া, সহজেই মানিয়ে নেয়া যায়। সময়টিকে তাই উৎসবের জন্য বেছে নেয়া হয়েছে। ফোক ফেস্টিভ্যালের কথাটিই আগে বলা যাক। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্ট। আর্মি স্টেডিয়ামের মতো বড় খোলা জায়গা উৎসবের ভেন্যু। এখানে স্কয়ার গ্রুপের উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে সান কমিউনিকেশন। দুই বছর আগে শুরু হয়েছিল। এবার তৃতীয় আসর। যতদিন যাচ্ছে আগ্রহ তত বাড়ছে। এবারও হাজার হাজার শ্রোতা নিবন্ধন করেছেন। কোন অর্থ খরচ না করেই উৎসব উপভোগ করতে পারবেন তারা। অনুষ্ঠান শুরু হবে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টায়। চলবে রাত দেড়টা পর্যন্ত। এভাবে ১১ নবেম্বর পর্যন্ত জমজমাট থাকবে আর্মি স্টেডিয়াম। সান কমিউনিকেশনের চেয়ারম্যান অঞ্জন চৌধুরী জানান, উৎসব আয়োজনের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। এবার দেশী-বিদেশী ১৪০ জন শিল্পীর পরিবেশনা উপভোগ করার সুযোগ পাবেন শ্রোতা। দেশের জনপ্রিয় লোক সঙ্গীত শিল্পীরা গাইবেন যথারীতি। দেশীয় শিল্পীদের মধ্যে মঞ্চে থাকবেন আরিফ দেওয়ান, শাহজাহান মুন্সি, ফকির শাহবুদ্দিন, শাহনাজ বেলি, শাহ আলম সরকার, আলেয়া বেগম প্রমুখ। সেইসঙ্গে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসছেন স্বনামধন্য শিল্পীরা। ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ইরান, ব্রাজিল, মালি, তিব্বতসহ কয়েকটি দেশের শিল্পীরা তাদের নিজ দেশ ও ভাষার লোকসঙ্গীত শোনাবেন। ভারতের শিল্পী ও দলগুলোর মধ্যে থাকছে পাপন, নুরান সিস্টার্স, বাসুদেব দাস বাউল, মালির গ্রেমি বিজয়ী ব্যান্ড টিনারিউয়েন, পাকিস্তানের মিকাল হাসান ব্যান্ড, নেপালের ব্যান্ড কুটুম্বা, তিব্বতের ফোকশিল্পী তেনজিন চোয়েগাল, ইরানের রাস্তাক, ব্রাজিলের মুরিসীয় টিজুম্বা। উৎসব মঞ্চে ফিউশন হবে। চলবে নিরীক্ষা। সব মিলিয়ে দারুণ একটা সময়ের অপেক্ষা। এদিকে আগামী ১৬ নবেম্বর থেকে বাংলা একাডেমিতে শুরু হবে ঢাকা লিটের‌্যারি ফেস্টিভ্যাল। চলবে ১৮ নবেম্বর পর্যন্ত। আন্তর্জাতিক এই সাহিত্য উৎসবের মূল আয়োজক সংস্থা যাত্রিক। বিশেষ পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে সংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়। উৎসবটি হে লিটের‌্যারি ফেস্টিভ্যাল নামে ২০১১ সালে প্রথম আয়োজন করা হয়। ২০১৫ সালে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ঢাকা লিটের‌্যারি ফেস্টিভ্যাল বা ঢাকা লিট ফেস্ট। এবার সপ্তম আসর। আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশ-বিদেশের দুই শতাধিক সাহিত্যিক, অভিনেতা, রাজনীতিক, গবেষক, সাংবাদিক উৎসবে যোগ দেবেন। বিশ্বের ২৩ দেশের ২ শতাধিক বক্তা, পারফর্মার এবং চিন্তাবিদ এতে অংশগ্রহণ করবেন। শতাধিক সেশনে থাকবে আলোচনা, পারফর্মেন্সসহ নানা আয়োজন। বিদেশী অতিথিদের মধ্যে থাকছেন সিরিয়ার কবি আদোনিস, নাইজেরিয়ার সাহিত্যিক বেন ওক্রি, অভিনেত্রী টিল্ডা সুইন্টন, মার্কিন সাহিত্যিক লিওনেল শ্রিভার, পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত ভারতীয় কথাসাহিত্যিক নবনীতা দেব সেন, কথা সাহিত্যিক উইলিয়াম ড্যালরিম্পেল, লেখক এসথার ফ্রয়েড প্রমুখ। বাংলাদেশের সাহিত্যিকদের মধ্যে উৎসবের বিভিন্ন পর্বে অংশগ্রহণ করবেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, মইনুল আহসান সাবের, আলী যাকের, সেলিনা হোসেন, শামসুজ্জামান খান, আনোয়ারা সৈয়দ হক, আসাদ চৌধুরী, আনিসুল হক, সলিমুল্লাহ খান, কায়জার হক, খাদেমুল ইসলামসহ দেড় শতাধিক শিল্পী সাহিত্যিক। উৎসবের প্রধান তিনজন পরিচালক কাজী আনিস আহমেদ, সাদাফ সায্ ও আহসান আকবর। কাজী আনিস জানান, সমকালীন বিশ্বসাহিত্য সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিতে এই আয়োজন। পৃথিবীর কোন দেশে কী ধরনের চর্চা হচ্ছে তা সম্পর্কে বাংলাদেশের আগ্রহীরা জানতে পারবেন। নিজের দেশের সাহিত্য সম্পদ বিদেশীদের সামনে সুন্দরভাবে তুলে ধরতে পারব আমরা। এভাবে একটি চমৎকার আদান প্রদান সম্ভব হবে। উৎসবে সকলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন আয়োজকরা। ঢাকা লিট ফেস্টে অংশগ্রহণের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। িি.িফযধশধষরঃভবংঃ.পড়স ঠিকানায় ঢুঁ মেরে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন আগ্রহীরা। এবার বেদনার কথাটি। না বললেই নয় যে, প্রায় একই সময় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসবের। বেঙ্গল ক্লাসিক্যাল ফেস্টিভ্যাল উপমহাদেশের কিংবদন্তি শিল্পীদের কণ্ঠ ও যন্ত্রসঙ্গীত শোনার সুযোগ করে দিয়েছিল। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অনন্য সাধারণ উৎসবটি এবার আর করা যাচ্ছে না। কেন হচ্ছে না? তার চেয়ে বড় প্রশ্ন কেন হবে না? কোনভাবেই কী এমন চমৎকার আয়োজনটির ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায় না? বিশুদ্ধ সঙ্গীতপ্রেমীদের মন, হ্যা, কিছুটা হলেও বিষণ্ন।
×