ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিচ্ছে মিয়ানমার

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ৭ নভেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিচ্ছে মিয়ানমার

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সরকারের কূটচাল এখনও অব্যাহত রয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সে দেশের সরকার যে আন্তরিক নয়, তা সুস্পষ্ট। গত ২৫ আগস্ট রাতের পর থেকে সে দেশের সেনাবাহিনী ও উগ্র মগ সন্ত্রাসীরা রোহিঙ্গাদের গণহত্যাসহ বর্বরতার যে হিংস্র ছোবল মেরেছে তাতে সারাবিশ্ব রীতিমতো হতভম্ব হলেও নোবেল বিজয়ী আউং সান সুচির নেতৃত্বাধীন সে দেশের এনএলডি সরকার এ ঘটনা নিয়ে মানবিকতার সামান্যতম উদাহরণ এখনও সৃষ্টি করতে পারেনি। বিশ্বের চাপের মুখে মিয়ানমার এ পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের যে কথা বলেছে, তা কথার কথা হয়ে আছে। বাস্তব অর্থে এ নিয়ে তাদের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের কোন বালাই যেন নেই। রাখাইন রাজ্যে অসহায় রোহিঙ্গাদের ওপর পরিকল্পিতভাবে মিয়ানমার সরকার সেনা অভিযান পরিচালনা করে যে নির্মম আচরণ চালিয়েছে, তা বিশ্বব্যাপী অসভ্যতার যে রেকর্ড গড়েছে তাতে তারা মোটেই বিচলিত নয় বলেই প্রতীয়মান। রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালী, বাংলাদেশী, সন্ত্রাসী’ ইত্যাদি নামে অভিহিত করে মিয়ানমার সরকার বিশ্বের সচেতন সব মহলকে রীতি তো যে তাক লাগিয়ে দিয়েছে তা থেকে তারা এখনও সরে আসেনি। অথচ রোহিঙ্গারা সে দেশেরই নাগরিক। বংশপরম্পরায় তারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করে আসছে। আগেই কেড়ে নেয়া হয়েছে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব। এখন কেড়ে নেয়া হয়েছে বসবাসের অধিকারটুকু। এসব ঘটনা ক্রমান্বয়ে চলে আসছে, যা পূর্বপরিকল্পিত ছকে বাঁধা। আগের সরকারগুলো রোহিঙ্গাদের বিতাড়নের যে অপতৎপরতা শুরু করেছিল, বর্তমান সুচি নিয়ন্ত্রণাধীন সরকার সে পরিকল্পনা পরিপূর্ণভাবে সফল করার স্বপ্নেই যেন বিভোর হয়ে আছে। তাদের এ অপস্বপ্ন বর্বরোচিত কায়দায় একে একে সম্পন্ন করে যাচ্ছে। রাখাইন রাজ্য নিয়ে বাণিজ্যিক স্বার্থ, রোহিঙ্গারা সে দেশের নাগরিক নয়সহ যত কথাই বলা হোক না কেন, তাদের মূল লক্ষ্য রোহিঙ্গাদের সে দেশ থেকে বিতাড়ন অথবা হত্যার মাধ্যমে নিধন। গত দুই মাসেরও অধিক সময় ধরে তা স্পষ্টভাবে প্রত্যক্ষ করেছে সারাবিশ্ব। রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষাদান হবে বার্মিজ ভাষায় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শিশুদের লেখাপড়া শেখানো হবে বার্মিজ ভাষায়। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে এদের শিক্ষা দেয়ার বিষয়টি নিরুৎসাহিত করা হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র সাংবাদিকদের জানিয়েছে, মিয়ানমারের শিশুসহ সব ধরনের নাগরিকদের মানবিক কারণে এ দেশে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। এদের লেখাপড়া শেখানোর দায়িত্ব বাংলাদেশ সরকারের নয়। যেহেতু মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের সে দেশের নাগরিক মানতে নারাজ, তার ওপর রোহিঙ্গা শিশুদের যদি বাংলা শেখানো হয় তাহলে আগামীতে মিয়ানমার সরকার এ সুযোগ নেবে। সুতরাং বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি এসব শিশুকে শেখানোর কোন সুযোগ নেই। কোন সংস্থা এসব শিশুকে পড়াতে চাইলে তাদের বার্মিজ ভাষায় তা সম্পন্ন করতে হবে। এ বাধ্যবাধকতা শুধু নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে নয়, ইতিপূর্বে আশ্রয় লাভকারীদের মধ্যে প্রযোজ্য হবে। উল্লেখ্য, সমাজসেবা অধিদফতর এ পর্যন্ত ৩০ সহস্রাধিক এতিম রোহিঙ্গা শিশুদের শনাক্ত করেছে। এদের বার্মিজ ভাষায় লেখাপড়া শেখানোর জন্য ২৮১টি উপানুষ্ঠানিক বিদ্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে।
×