ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আরও স্প্যান উঠছে পদ্মা সেতুর

প্রকাশিত: ০৭:৫৫, ৪ নভেম্বর ২০১৭

আরও স্প্যান উঠছে পদ্মা সেতুর

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মা সেতুর দ্বিতীয় স্প্যান উঠছে শীঘ্রই। তাই ৩৯ নম্বর পিয়ারের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হচ্ছে। ৩৮ নম্বর ও ৩৯ নম্বর পিয়ারের ওপর বসছে দ্বিতীয় স্প্যান। পাশে ৪০ ও ৪১ নম্বর পিয়ারের কাজও চলছে দ্রুত গতিতে। ৪২ নম্বর পিলারের খুঁটিও উপরে উঠতে শুরু করেছে। তাই চলতি মাসখানেকের মধ্যে দ্বিতীয়টি এবং চলতি বছরেই অর্থাৎ ডিসেম্বরের মধ্যে তৃতীয় স্প্যান স্থাপনের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিয়ারের ওপর প্রথম স্প্যান স্থাপনের পর প্রকল্পে নতুন গতি পেয়েছে। এদিকে চীন থেকে আরও একটি স্প্যান অর্থাৎ ১১ তম স্প্যান মাওয়ার পাশের কুমারভোগ ওয়ার্কশপে খালাস হয়েছে। এখন এই ওয়ার্কশপে ১০টি স্প্যান রয়েছে। এর ৬টি ফিটিং হয়ে গেছে। এদিকে পাইল স্থাপন এগিয়ে চললেও হ্যামারের অভাব রয়েছে। তাই চলতি মাসেই সাড়ে ৩ হাজার কিলোজুল ক্ষমতার আরেকটি নতুন হ্যামার যুক্ত হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৮৮টি পাইল স্থাপন হয়েছে। এর মধ্যে ৬২ পিলার সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ২৬টি পাইলের বটম সেকশন হয়েছে। জাজিরা প্রান্তে সংযোগ সেতুর সব পাইল স্থাপনের পর এখন মাওয়া প্রান্তে সংযোগ সেতুর (ভায়াডাক্ট) পাইল স্থাপনে চলছে তোড়জোড়। ১৭২টি পাইলের মধ্যে ২৫টি পাইল বসে গেছে। তবে এই ১৭২টি পাইলের ৬৬টির ডিজাইন চূড়ান্ত হয়েছে। বাকিগুলোর ডিজাইন চূড়ান্ত করার জন্য টেস্ট পাইল স্থাপনও সম্পন্ন হয়ে গেছে। এদিকে পদ্মা সেতুর বাকি ১৪ পিয়ারের ডিজাইন চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া এখনও চলছে। চলতি মাসেই এই ডিজাইন চূড়ান্ত করার সম্ভাবনা রয়েছে। মাওয়া প্রান্তে নদীর তলদেশের মাটি নরম থাকায় চারটি পিয়ারের ডিজাইন নিয়ে এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে বেশি। এই চারটি পিয়ারে ৬টি পাইলের পরিবর্তে ৭টি পাইল স্থাপনের একটি প্রস্তাব নিয়েও সংশ্লিষ্টরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যাচ্ছে। তবে পদ্মা সেতুর দায়িত্বশীল প্রকৌশরীরা জানিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে পদ্মা সেতুর কাজে আরও অগ্রগতির চমক রয়েছে। সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য প্রকৌশলী জানান, প্রকল্পের জাজিরা প্রান্তে ৪২ নম্বর পিয়ারের বেজ ফাউন্ডেশন ৫০ এমএম রিবার ইনস্টলেশনে যাচ্ছে। এ্যাবাটমেন্ট পিয়ার-৪২ এর রিবার বাইন্ডিং কাজ শেষ পর্যায়ে। যার দৈর্ঘ্য ২৭ দশমিক ৫০ মিটার ও প্রস্থ ২৭ দশমিক এবং পুরুত্ব হবে ৫ মিটার (১৬ দশমিক ৫০ ফুট)। পিয়ারের রিবারগুলো ৫০ মি.মি. ডায়া বিশিষ্ট। এ রকম রিবার এবং পুরুত্বের কংক্রিটিং এর আগে দেশের অন্য কোন প্রকল্পে হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী সূত্র জানিয়েছে। ৬ দশমিক ৫ মিটার উচ্চতায় তিন ধাপে ৩৯ নম্বর পিলারের কংক্রিটিং ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন করা হবে। ৩৯ নম্বর পিয়ারে ধাপে ধাপে পাইল ক্যাপ কংক্রিটিং করা হয়। এসব কাজ বিশেষজ্ঞ প্যানেল নিখুঁতভাবে যাচাইবাছাই করে পরামর্শ এবং সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। বাইন্ডার রড সেটআপ শেষে সাটার সেটআপ করা হয়। এই কাজ সম্পন্ন করতে আগে সাটারের ভেতরে রিলিজিং এজেন্ট লাগানোসহ আনুষঙ্গিক ফর্মভাইব্রেটর সেট করা হয়। জানা যায়, ৪০ নম্বর পিয়ারের পাইপ ক্যাপ বসানো হয়ে গেছে। পিয়ারের পাইল ক্যাপে দেড় মিটার ও চার মিটার উচ্চতায় দুটি ধাপে ঢালাই শেষে পিয়ার কলামে তিনটি ধাপে ঢালাই করা হয়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পদ্মা সেতুর জন্য সব মিলিয়ে ৪২টি পিয়ার নির্মাণ করা হচ্ছে। এদিকে মূল সেতুর কাজ শুরু হওয়ার ৩ বছর পরও অনিশ্চয়তা কাটেনি পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প নিয়ে। মূলত চীনের সঙ্গে ঋণ চুক্তি নিয়ে জটিলতার কারণেই কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় সেতু উদ্বোধনের দিন রেললাইন চালু করার পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। তবে চলতি মাসে চীনের সঙ্গে ঋণ চুক্তি স¤পন্ন করার ব্যাপারে আশাবাদী, বলেছেন রেলমন্ত্রী শীঘ্রই শুরু হবে প্রকল্পের কাজ। নদীর বুকে বিশাল কর্মযজ্ঞ। সাফল্যের মুকুটে নতুন পালক হিসেবে জাজিরা প্রান্তে দুটি পিলারের উপর একটি ¯প্যান বসানোর কাজও স¤পন্ন। নতুন করে আরও দুটি পিলারকে প্রায় প্রস্তুত করে আনা হচ্ছে। প্রায় শতভাগ কাজ শেষ, সংযোগ সড়ক এবং সার্ভিস এরিয়াগুলোর কাজেও। তবে জট বেঁধেছে রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজে। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে কাগজেকলমে কাজ শুরু হওয়া এ প্রকল্প রাজধানী ঢাকাকে রেলপথে যোগ করবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে। কমলাপুর থেকে ছাড়া ট্রেন গে-ারিয়া হয়ে পৌঁছাবে ৩৭ কিলোমিটার দূরের মাওয়ায়। সেখান থেকে মূল পদ্মা সেতু দিয়ে যাবে অন্যপ্রান্ত জাজিরায়। আর জাজিরা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার এবং পরে ভাঙ্গা থেকে নড়াইল হয়ে যশোর পর্যন্ত ৮৭ কিলোমিটার রেল সংযোগ দেয়া হবে। প্রকল্পে ৩৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বাংলাদেশ আর বাকি টাকা ঋণ হিসেবে দেবে চীন। প্রথম পর্যায়ে রেলপথ নির্মাণের জন্য ৩৬১ হেক্টর জমির প্রয়োজন হবে। মূল পদ্মা সেতু প্রকল্পের পক্ষ থেকে কিছু এলাকায় জমিও অধিগ্রহণ করে রাখা হয়েছে। রেললাইন চালু করা গেলে খুলনার সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার, সময় লাগবে সাড়ে ৩ ঘণ্টা। এছাড়া পায়রা ও মংলা সমুদ্র বন্দরের সঙ্গেও রেল যোগাযোগের দুয়ার খুলবে।
×