ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ই-বাণিজ্যে সরকারী বিনিয়োগ বাড়ানোর পদক্ষেপ

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৪ নভেম্বর ২০১৭

ই-বাণিজ্যে সরকারী বিনিয়োগ বাড়ানোর পদক্ষেপ

এম শাহজাহান ॥ ই-বাণিজ্যকে এগিয়ে নিতে সরকারী বিনিয়োগ বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে দেশে দ্রুত জনপ্রিয় ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে ই-কমার্স। প্রতি বছর দ্রুত বাড়ছে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ। ই-সার্ভিস রোডম্যাপ-২০২১ বাস্তবায়নে চলতি বাজেটে আইসিটি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১১ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা। সর্বক্ষেত্রে ই-গবর্নেন্স এবং ই-বাণিজ্য সম্প্রসারণে এ টাকা ব্যয় করা হবে। একই সঙ্গে ই-বাণিজ্য এগিয়ে নিতে বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসার যাত্রা শুরু হয় ২০১০ সালে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ওই সময় দায়িত্ব নেয়ার পরই সর্বপ্রথম ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের কাজ শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ই-বাণিজ্য। শুরুতে ২০১০-১১ সালে বাংলাদেশে ই-কমার্সে মোট ব্যবসার পরিমাণ ছিল ৮০ কোটি টাকা। এর পরের বছর ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাণিজ্য প্রবৃদ্ধি হয়ে থাকে। বর্তমান প্রবৃদ্ধিও শতভাগের উপরে। এ কারণে দেশে ই-কমার্সের বাণিজ্যের পরিমাণ দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে সরকারের বড় অঙ্কের বিনিয়োগ বৃথা যায়নি। নানা ধরনের প্রণোদনা করে সফটওয়্যার সৃষ্টিতে বর্তমান সরকার দক্ষতা ও সাফল্য দেখিয়েছে। এসবই সম্ভব হয়েছে সরকারী-বেসরকারী খাতের স্ব স্ব উদ্যোগে। সফটওয়্যার সৃষ্টিকারীরা এখন হার্ডওয়্যার নির্মাণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এ খাতের উত্তরোত্তর বিকাশ সাধনের ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, পল্লী উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়নসহ আর্থসামাজিক সকল পর্যায়ে উন্নয়নের ধারা উর্ধগামী। এ ধারা অব্যাহত থাকলে কাক্সিক্ষত সময়ের মধ্যে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। তিনি আরও বলেন, ই-গবর্নেন্স এবং ই-বাণিজ্যকে গুরুত্ব দিয়ে এ দুটি খাতে বিগত বছরসমূহে বর্তমান সরকার বিনিয়োগের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যহারে বাড়িয়েছে। এর সুফল ইতোমধ্যে জাতি পেতে শুরু করেছে। ই-কমার্স কী ॥ ইলেক্ট্রনিক কমার্স বা ই-কমার্স বা ই-বাণিজ্য হচ্ছে এমন এক বাণিজ্যক্ষেত্র যেখানে কোন ইলেক্ট্রনিক সিস্টেমের (ইন্টারনেট বা অন্য কোন কম্পিউটার নেটওয়ার্ক) মাধ্যমে পণ্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে। দেশে ই-কমার্সে স্থানীয়ভাবে সেবা দিতে উঠে এসেছে অনেক প্রতিষ্ঠান। বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশ এখন অনেক ক্ষেত্রেই উদাহরণ হয়ে উঠছে। ই-কমার্সেও তাই। এ ক্ষেত্রটিতেও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে অনেক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের ই-কমার্সে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টির উদাহরণ টেনে আনা হয়েছে ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্স অন ট্রেড এ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ইউএনসিটিএডি) করা সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। ইউএনসিটিএডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর ই-কমার্সে যুক্ত হওয়ার দারুণ সুযোগ এখন। এ ক্ষেত্রটি থেকে লাভবান হওয়ার সুযোগ এখন দ্রুত বাড়ছে। প্রথমত, মোবাইল ফোনের ব্যবহার বেড়েছে। এতে যোগাযোগ সুবিধা উন্নত হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগের হার বেড়েছে এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের হারও বেড়েছে। দ্বিতীয়ত, নতুন ই-কমার্স এ্যাপ্লিকেশন, প্লাটফর্ম এবং পেমেন্ট সুবিধার কারণে ই-কমার্সের ব্যবহার সহজতর হয়েছে। তৃতীয়ত, স্থানীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো ই-কমার্স সেবার মাধ্যমে স্থানীয় লোকজনের চাহিদা পূরণ করতে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে। জানা গেছে, ডিজিটাল অর্থনীতি প্রসারিত হওয়ার পাশাপাশি অধিক ব্যবসা কার্যক্রমে তার প্রভাব পড়ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের নীতিমালার ওপর অধিক গুরুত্ব দেয়া উচিত যাতে টেকসই উন্নয়নের জন্য ই-কমার্সের ব্যবহার আরও বাড়ানো যায়। তবে বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের তুলনায় ই-কমার্সে বেশ পিছিয়ে রয়েছে। যেখানে উন্নত দেশগুলোর মানুষ অনলাইন শপিংয়ের ওপরই বেশি নির্ভরশীল আর সেখানে দেশে কয়েক বছর হলো অনলাইনে শপিং কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে আশার কথা হলো, বাংলাদেশে কাজ করে যাচ্ছে বেশকিছু ই-কমার্স সাইট এবং তরুণ উদ্যোক্তারা। আশা করা যায় আর কয়েক বছরের মাঝেই এসব তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রচেষ্টা বাংলাদেশকে নিয়ে যাবে ই-কমার্স খাতে এক নতুন কোটায়। পাশাপাশি এ খাতকে আরও উন্নত করতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে এখন ই-কমার্স এক অপার সম্ভাবনাময় খাত, যা দেশের সকল মানুষের কেনাকাটাকে করবে আরও গতিশীল, সাশ্রয়ী এবং সহজ। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের আসরে ই-বাণিজ্য গুরুত্ব পাচ্ছে ॥ আগামী ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ খাতের বড় আসর ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৭’। ওই আসরে ই-বাণিজ্যের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এছাড়া আইসিটি খাতসংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তারা ওই আসরে উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড আয়োজনে ১২ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে। তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানিয়েছেন, ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৬ আয়োজনে ব্যয় হয়েছে ১১ কোটি টাকা। তিনি বলেন, এ বছর আরও একদিন বাড়িয়ে চার দিন হবে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৭। এজন্য এ বছর ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ কোটি টাকা। ২০১১ সাল থেকে আইসিটি বিভাগের উদ্যোগে এ আয়োজন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, বেসিস এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্প থাকবে। এবারে সম্মেলনের মাধ্যমে বিগত সাড়ে আট বছরে দেশের অগ্রগতি, অর্জন এবং আগামীর পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করা হবে।
×