ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা ইস্যুতে ধীরে ধীরে মিয়ানমারের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপে এগোবে যুক্তরাষ্ট্র ১৫ নবেম্বর মিয়ানমার যাচ্ছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিলারসন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দশ দিনের এশিয়া সফর শুরু করেছেন, যাবেন চীনেও

বর্মী সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব ॥ মার্কিন সিনেটে বিল

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ৪ নভেম্বর ২০১৭

বর্মী সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব ॥ মার্কিন সিনেটে বিল

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে মিয়ানমারের ওপর প্রবল চাপ তৈরি করতে চাইছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মিয়ানমারের ওপর এখনই অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের উদ্যোগ না নিলেও দেশটির সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ধীরে ধীরে যুক্তরাষ্ট্র আরও কঠোর পদক্ষেপ নেবে বলে জানা গেছে। এদিকে আগামী ১৫ নবেম্বর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন মিয়ানমার সফরে যাচ্ছেন। সূত্র জানায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক দলের সিনিয়র আইনপ্রণেতারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার তারা মার্কিন সিনেটে এ বিষয়ে একটি বিল উত্থাপন করেছেন। এমন সময় এই বিষয়ে তারা কথা বলেছেন যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রায় দশদিনের এশিয়া সফর শুরু করেছেন। এছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন মিয়ানমার সফরে যাচ্ছেন। মার্কিন সিনেটের আর্মড সার্ভিস কমিটির চেয়ারম্যান, রিপাবলিকান সিনেটর জন ম্যাককেইন এবং ডেমোক্র্যাট সিনেটর বেন কার্ডিন বিলে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞার পক্ষে কথা বলেন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর অব্যাহত নির্যাতনের অভিযোগ আনেন তারা। উত্থাপিত এই বিলে সেনাবাহিনীর সিনিয়র সদস্যের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এর আগে অন্তত ৪৩ মার্কিন আইনপ্রণেতা ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি অর্থপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে। সে অনুযায়ী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সামরিক কর্মকা-ে যেসব কর্মকর্তা ও ইউনিট জড়িত তাদের কেউ যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তাপ্রাপ্ত কোন কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। এছাড়া মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা যেন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তাপ্রাপ্ত কোন অনুষ্ঠানে যোগদান করতে না পারেন সেজন্য ইতোমধ্যে প্রদত্ত আমন্ত্রণ বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু তাই নয়, বৃহস্পতিবার মার্কিন সিনেটে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে আলোচনা শুরু হয়েছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের অংশ হিসেবে এই বিল উত্থাপন করেছে সিনেট। এদিকে এই প্রথম ডোনাল্ড ট্রাম্প এশিয়ার দেশগুলো সফরে বেরিয়েছেন। যাবেন চীনেও। এশিয়ার অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক শক্তির এই দেশটির সঙ্গে তার রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা বন্ধ ও নিজ ভূমিতে নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের জেনারেল মিন অং হ্লাইংকে টেলিফোন করেছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। সে সময় রাখাইনে সহিংসতা ও রোহিঙ্গা নিপীড়নের খবর নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। রাখাইনে সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমার সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান টিলারসন। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যাতে রাখাইনের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের হাতে জরুরী ত্রাণ পৌঁছে দিতে সহায়তা করা, রাখাইন এলাকায় যাতে সাংবাদিকদের যেতে দেয়া হয় এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেসব অভিযোগ এসেছে তার তদন্তে জাতিসংঘকে যেন সহযোগিতা করা হয়; সেজন্য জেনারেল মিন অং হ্লাইংকে বলেছিলেন রেক্স টিলারসন। এর আগে গত ৫ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটিতে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে শুনানিতে কয়েক কংগ্রেস সদস্য ও কর্মকর্তা রোহিঙ্গা নিপীড়ন থামাতে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ অথবা সাহায্য বন্ধের মতো পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান। দীর্ঘদিন সামরিক শাসনে থাকা মিয়ানমারের ওপর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ছিল। সে কারণে যুক্তরাষ্ট্র এখনই দেশটির ওপর আবারও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিন্তা করছে না। প্রথমে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এরপর ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাসহ নানা ধরনের উদ্যোগ নেবে দেশটি। চলতি বছরের ২৪ আগস্টের পর থেকে অব্যাহত অত্যাচারে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ছয় লাখের বেশি বলে জাতিসংঘ জানাচ্ছে। বেসরকারী হিসেবে এই সংখ্যা আরও লাখখানেক বেশি। এছাড়া আগে থেকেই চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারে থাকেন। এতে মোট রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইনে পুলিশ ক্যাম্প ও সেনা আবাসে বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এর জেরে সন্ত্রাসীবিরোধী অভিযানের নামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুর ওপর নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। ফলে লাখ লাখ মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য চলে আসছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিগত দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে নতুন করে দেশটির উত্তর-পূর্ব রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। গত বছরের অক্টোবরেও প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমার সফরে যাবেন ॥ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন আগামী ১৫ নবেম্বর মিয়ানমার সফর করবেন। রাখাইনে সামরিক অভিযানের মুখে ছয় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার প্রেক্ষিতে সৃষ্ট সঙ্কটের মধ্যেই মিয়ানমার সফরে আসছেন টিলারসন। এশিয়ার কয়েকটি দেশ সফরের অংশ হিসেবে তিনি নেপিডো আসবেন। বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ১৫ নবেম্বর ফিলিপিন্স থেকে মিয়ানমারের নেপিডো পৌঁছবেন টিলারসন। সেখানে তিনি রাখাইনে সৃষ্ট সঙ্কটের সমাধানে দেশটির উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন। টিলারসন মিয়ানমারের গণতন্ত্রে রূপান্তর প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা করবেন বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহে টিলারসনের এশিয়া সফর শুরু হবে। এ সফরে তিনি মিয়ানমারসহ জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, ভিয়েতনাম ও ফিলিপিন্স ভ্রমণ করবেন। বিবৃতি অনুসারে, ৫-৭ নবেম্বর জাপান, ৭-৮ নবেম্বর দক্ষিণ কোরিয়া, ৮-১০ নবেম্বর চীন, ১০ নবেম্বর ভিয়েতনাম, ১২-১৩ নবেম্বর ফিলিপিন্স সফর করবেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়া ১৪ নবেম্বর টিলারসন ইএএস প্লেনারি অধিবেশনে মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধিত্ব করবেন।
×