ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়ানডেতেও কঠিন পরীক্ষার মুখে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ১৪ অক্টোবর ২০১৭

ওয়ানডেতেও কঠিন পরীক্ষার মুখে বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ টেস্টে কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়েছে বাংলাদেশ। চ্যালেঞ্জ এতটাই কঠিন ছিল যে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে লজ্জা মিলেছে। নাজেহাল হয়েছে। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। কিম্বার্লিতে প্রথম ওয়ানডে দিয়ে রবিবার থেকে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু হচ্ছে। এ নির্ধারিত ওভারের সিরিজেও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখেই পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে যাচ্ছে মাশরাফিবাহিনী। প্রস্তুতি ম্যাচ সে আভাসই দিয়েছে। ওয়ানডে সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকার যারা খেলবেন, তাদের মধ্য থেকে মাত্র দুইজন প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলেছেন। দুইজনই ছিলেন ব্যাটসম্যান। জেপি ডুমিনি ও এবি ডি ভিলিয়ার্স। এ দুইজন আবার খুব আহামরি কিছু করেছেন, এমনও নয়। তবুও আনকোরা ব্যাটসম্যান-বোলারদের কাছেই ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে একমাত্র একদিনের প্রস্তুতি ম্যাচে ৬ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে দুই হাফসেঞ্চুরিয়ান সাকিব আল হাসান ও সাব্বির রহমান রুম্মন ছাড়া কিছুই করতে পারেননি বাকিরা। আর বল হাতে ব্যর্থতার পাল্লাই ভারি। ব্যাট হাতে ২৫৫ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। বল হাতে দক্ষিণ আফ্রিকার ৪ উইকেটের বেশি তুলে নেয়া যায়নি। তাতেই বোঝা যাচ্ছে, ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের সামনে বিপদই আছে! স্পিনার এ্যারোন ফানগিসো, পেসার এরিক হেনরিকস, রবি ফ্রাইলিংক, মালুসি সিবোতো, বুলেলো বুদাজা, উইলেম মুলদারের মতো আনকোরা বোলারদের কাছেই হার মেনেছেন মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, ইমরুল, সৌম্য, লিটন, নাসিররা। ফানগিসো ছাড়া আর কোন বোলারেরই ওয়ানডের জার্সি গায়ে জড়ায়নি। জাতীয় দলের হয়ে খেলার অভিজ্ঞতাই নেই! অথচ এ বোলাররাই ধসে দিয়েছে বাংলাদেশের ইনিংস। ব্যাট হাতে এইডেন মার্করাম ও ম্যাথু ব্রিজকেই বাংলাদেশের বারোটা বাজিয়ে ছেড়েছেন। জাতীয় দলের হয়ে দুইজনেরই কোন নির্ধারিত ওভারের ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নেই। ব্রিজকেরতো কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলারই অভিজ্ঞতা নেই। সেঞ্চুরির কাছাকাছি থাকা এ দুই ওপেনার মিলেই ১৪৭ রানের জুটি গড়ে দেখিয়েছেন। এতটাই অসহায় ছিলেন বাংলাদেশ বোলাররা, একটি উইকেট পেতেই নাভিশ্বাস ওঠে! এরপর ডুমিনি ও ভিলিয়ার্স মিলে দলের জয় নিশ্চিত করতে দলকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। যে দুই সেরা ক্রিকেটার ডুমিনি ও ভিলিয়ার্সই আতঙ্ক হওয়ার কথা, তা না হয়ে আনকোরা ক্রিকেটাররাই বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের পরীক্ষা নিয়েছেন। জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা তাহলে কী করবেন? দুই দলের ক্রিকেটারদের দিকে লক্ষ্য করলেই তা অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যাবে। বাংলাদেশ দলের ওপেনিংয়ে খেলবেন তামিম ইকবাল। তার সঙ্গী হবেন সৌম্য সরকার নিশ্চয়ই। বাংলাদেশ দল সর্বশেষ এ বছর জুনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেই ওয়ানডে খেলেছে। সেই টুর্নামেন্টে সৌম্য বেহাল দশার মধ্যে কাটালেও এর আগে তিন জাতি সিরিজে যে দারুণ খেলেছেন। তাছাড়া প্রধান কোচ চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহের ২০১৯ সালের বিশ্বকাপের ভাবনাতেও তো সৌম্য ভালভাবেই আছেন। তাই তামিমের সঙ্গী হবেন সৌম্য তা ধরেই নেয়া যায়। কিন্তু তামিম কি খেলতে পারবেন? তা নিয়ে এখনও শঙ্কা দূর হয়ে যায়নি। যদি খেলেনও, মাংসপেশীতে চোট থাকায় যে দ্বিতীয় টেস্টে খেলতে পারেননি, ওয়ানডেতে খেলে কি নিজের ফর্ম ধরে রাখতে পারবেন? অস্বস্তিতে কি আর ভালভাবে ব্যাটিংটা হয়! তামিম যদি না খেলেন, তাহলে ইমরুলকেই ওপেনিংয়ে নামাতে হবে। আর তামিম যদি খেলেন, তাহলে ইমরুল তিন নম্বর পজিশনে থাকতে পারেন। প্রস্তুতি ম্যাচে মুমিনুল হককে না নামানোয় এবং তিন নম্বর পজিশনে লিটন কুমার দাস ব্যর্থ হওয়ায় ইমরুলই ভরসা মনে হচ্ছে। এরপর এক এক করে মুশফিক, সাকিব, মাহমুদুল্লাহ, সাব্বির তো রয়েছেনই। এখন নাসির প্রস্তুতি ম্যাচে খারাপ করায় মেহেদী হাসান মিরাজকেও খেলানো হতে পারে। না হলে নাসিরই থাকতে পারেন। পেস অলরাউন্ডার হিসেবে নবাগত সাইফউদ্দিন হয়ত টিকে যেতে পারেন। এরপর মাশরাফি ও মুস্তাফিজ তো থাকবেনই। বিশেষ পরিবর্তন হলে হয়ত একজন পেসার বাড়তি নিয়ে খেলা হতে পারে। সেক্ষেত্রে তাসকিন অথবা রুবেলকেই বেছে নেয়া হতে পারে। তখন নাসির কিংবা মিরাজ, কারোরই একাদশে জায়গা হবে না। কিন্তু এ স্কোয়াড নিয়ে কতদূর কী করা যাবে? দক্ষিণ আফ্রিকা একাদশে যারা থাকবেন, তারা যে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকছেন। শুরুতেই কুইন্টন ডি কক ও হাশিম আমলা থাকবেন। দুইজনই ওয়ানডেতে তুখোড় ফর্মে আছেন। এরপর অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিসও আছেন ফর্মে। ভিলিয়ার্স, মিলার আর ডুমিনি তো যে কোন দলের জন্যই ধ্বংস বয়ে আনতে সর্বদা প্রস্তুত। নিজের মাটিতে খেলবেন তারা। আলাদা রকম উত্তেজনা, আত্মবিশ্বাস তো থাকবেই আবার টেস্ট সিরিজ জেতায় মনোবলও চাঙ্গা আছে। এরপর বল হাতে পেসার কাগিসো রাবাদা, ওয়েন পারনেল, আনদিল পেহলুকওয়ায়ো যে বল হাতে কতটা বিধ্বংসী তা তো টেস্টেই বোঝা গেছে। এবার আবার বল হাতে যোগ হচ্ছেন এ মুহূর্তে সেরা স্পিনারদের একজন ইমরান তাহিরও। ব্যাটিং পজিশনগুলোতে ব্যাটসম্যানরা যেমন শক্তিশালী, বোলিংয়ে বোলাররাও তুখোড়। কিভাবে তাদের ঠেকানো যাবে? এরপরও সম্ভব? কারণ ফরমেটটি ওয়ানডে বলে। খেলাটি ৫০ ওভারের বলে। যে ফরমেটে বাংলাদেশও এ মুহূর্তে দুর্দান্ত দল। উইকেট যেমনই হোক। প্রতিপক্ষ যারাই থাকুক। কন্ডিশন যাই হোক। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জয় তুলে নিতে সক্ষম বাংলাদেশ। ২০১৪ সালের শেষ সময় থেকেই তাই প্রতিনিয়ত প্রমাণ হয়ে আসছে। আর এখানেই বাংলাদেশকে নিয়ে আশাও দেখা হচ্ছে। টেস্টে সাকিব না থাকলেও এবার ওয়ানডেতে যোগ দিয়েছেন। আছেন মাশরাফিও। যিনি দলকে সবসময়ই চাঙ্গা করে রাখতে জানেন। সিনিয়র ক্রিকেটারদের অভিজ্ঞতা আর জুনিয়রদের দলে টিকে থাকার যে প্রয়াস, তাতেই বাংলাদেশ জয়ের স্বপ্নও দেখছে। টেস্টের দুঃসহ স্মৃতি ভুলে ওয়ানডেতে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা করছে। প্রস্তুতি ম্যাচে কী ঘটেছে, তা দূর আকাশের তারা ভেবেই এগিয়ে যেতে চাচ্ছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা আমন্ত্রিত একাদশের অধিনায়ক ডুমিনি যে বলেছেন, ‘কোন সন্দেহ নেই সাকিবের উপস্থিতি উজ্জ্বীবিত করবে বাংলাদেশকে। অবশ্যই ওরা সাকিবের অভাব টেস্টে অনুভব করেছে। সে তাদের বড় একজন খেলোয়াড় এবং ম্যাচ উইনার। আমি মনে করি, ওয়ানডে সিরিজ আমাদের জন্য অনেক কঠিন হবে। আমাদের দল টেস্ট সিরিজে খুব ভাল করেছে আর প্রায় প্রতিটি দিন কর্তৃত্ব দেখিয়েছে। ওয়ানডের দিক থেকে সম্প্রতি বাংলাদেশ নিজেদের খেলা এগিয়ে নিয়েছে। ওদের হারাতে আমাদের খুব ভাল ক্রিকেট খেলতে হবে।’ বাংলাদেশকে ডুমিনির কথাগুলোও আশা দেখাতে পারে। স্পিনার ইমরান তাহির তো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির কথাই স্মরণ করিয়ে দিলেন। যে টুর্নামেন্টে সেমিফাইনালে খেলেছিল বাংলাদেশ। ইমরান বলেছেন, ‘চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তারা নিজেদের প্রমাণ করেছে। ওরা সেমিফাইনালে উঠেছে। সহজ দল তারা নয়। আমাদের নিজেদের সেভাবে তৈরি করতে হবে। এটা একটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ। কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। যেভাবে আমরা খেলি, সেভাবে খেলতে হবে। গত দু-তিন বছর আমরা যেভাবে খেলছি, সেভাবে খেললে অবশ্যই আমরা যে কোন দলকে হারাতে পারব।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমরা জিততে চাই। তবে একটা আন্তর্জাতিক দলের বিপক্ষে খেলছি। কাজটা মোটেও সহজ নয় যে এলাম, হাত ঘুরালাম আর ওদের হারিয়ে দিলাম। এটার জন্য আমাদের তৈরি থাকতে হবে, জয়ের জন্য দুর্দান্ত খেলতে হবে।’ বাংলাদেশকে হাল্কাভাবে নেয়ার কোন সুযোগই নেই। তা ভাল করেই জানে প্রোটিয়ারা। এরপরও টেস্ট সিরিজের ধাক্কায় বাংলাদেশ যে ছন্নছাড়া, তাও বোঝে তারা। তাইতে ডুমিনি বলেছেন, ‘আমরা অবশ্যই বাংলাদেশকে একটা ধাক্কা দিতে চাইব। টেস্ট সিরিজে হেরে ওদের আত্মবিশ্বাস নড়বড়ে হয়ে আছে। সেটাকে আরও নাড়িয়ে দিতে চাই আমরা।’ আর এখানেই ভয়। বাংলাদেশ যে টেস্টে কঠিন পরীক্ষায় ‘ফেল’ হওয়ার পর ওয়ানডেতেও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।
×