ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্লুমফন্টেইন টেস্ট

ফলোঅনে পড়ে ধুঁকছে মুশফিকরা

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ৮ অক্টোবর ২০১৭

ফলোঅনে পড়ে ধুঁকছে মুশফিকরা

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ব্লুমফন্টেইনে অনেক পুরনো চেহারায় ফিরল বাংলাদেশ দল। সাড়ে তিন বছর পর আবার ইনিংস পরাজয় দরজায় কড়া নাড়ছে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে। তাও আবার মাত্র দুইদিনে এই পরিস্থিতিতে পড়েছে মুশফিকুর রহীমের দল। বৃষ্টির কারণে দেড়ঘণ্টা পর খেলা শুরু হলেও আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ৪ উইকেটে ৫৭৩ রান নিয়ে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং দৈন্যদশায় মাত্র ১৪৭ রানেই প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ ফলোঅনে পড়ে যায়। ৪২৬ রানের বড় ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে দ্বিতীয় দিন শেষে বিনা উইকেটে ৭ রান তুলেছে বাংলাদেশ। এখনও ৪১৯ রানের বিশাল ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে নিশ্চিত ইনিংস পরাজয়ের পথেই হাঁটছে সফরকারীরা। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ঢাকা টেস্টে শ্রীলঙ্কার কাছে ইনিংস ও ২৪৮ রানে হেরে গিয়েছিল স্বাগতিক বাংলাদেশ। তবে এরপর থেকে টেস্ট ক্রিকেটেও দারুণ সাফল্য পেতে শুরু করে তারা। বিশেষ করে ঘরের মাঠে হয়ে ওঠে টাইগার। এমনকি ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিধর দলের বিরুদ্ধেও জয় তুলে নেয়। এ কারণে দারুণ আত্মবিশ্বাস নিয়েই এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যায়। এমনকি মুশফিক বলেছিলেন, ‘এবার মাইলফলক অর্জন হতে পারে।’ কিন্তু প্রথম টেস্টে ৩৩৩ রানে হার এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ১০ বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ রানে গুটিয়ে যাওয়াতে সেটা বড় ধাক্কা যায়। প্রোটিয়া পেসারদের কাছেই মাথানত করে বাংলাদেশ দল। ব্লুমফন্টেইন টেস্টে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ দল। অন্যতম তিন পেসার ডেল স্টেইন, ভারনন ফিল্যান্ডার ও মরনে মরকেল নেই। তবু বাংলাদেশ দল দুর্বল হয়ে পড়া প্রোটিয়া পেস বোলিং আক্রমণের সামনে মাথানত করেছে প্রথম ইনিংসে। মাত্র ১৪৭ রানেই গুটিয়ে যায় প্রথম ইনিংস দুই পেসার কাগিসো রাবাদা ও ডুয়ান অলিভিয়েরের বোলিং তোপে। রাবাদা ৫ এবং অলিভিয়ের ৩ উইকেট নেন। অথচ, আগের দিন এই উইকেটেই দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছিল প্রোটিয়ারা। দুই ওপেনার ডিন এলগার ও এইডেন মার্করাম জোড়া সেঞ্চুরি হাঁকান বাংলাদেশের বোলারদের সঙ্গে ছেলেখেলায় মেতে ওঠে। যার কারণে একদিনেই ৩ উইকেটে ৪২৮ রান নিয়ে শেষ করেছিল তারা। সেখান থেকে দলকে আরও বিশাল সংগ্রহে নিয়ে গেছেন হাশিম আমলা ও অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস। ৮৯ রানে অপরাজিত ছিলেন আমলা এবং অধিনায়ক প্লেসিস ৬২ রানে। বাংলাদেশের বোলারদের অসহায় প্রমাণ করেছেন তারা। দ্বিতীয় দিন ব্যাট করতে নেমে সবচেয়ে আক্রমণাত্মক আমলা সেঞ্চুরি তুলে নেন। ক্যারিয়ারের ২৮তম সেঞ্চুরি ছিল তার এটি। সাবেক অধিনায়ক স্মিথ ১১৬ টেস্টে করেছিলেন ২৭ সেঞ্চুরি। আমলাকে দারুণভাবে সঙ্গ দিয়ে সেঞ্চুরি তুলে নেন প্লেসিসও। তিনি ক্যারিয়ারের সপ্তম শতক হাঁকান। আমলাকে অবশ্য শেষ পর্যন্ত শুভাশিষ রায় শিকার করেন। দারুণ বোলিং করা এ পেসার সরাসরি বোল্ড করে দেন তাকে। আমলা ১৬৩ বলে ১৭ চারে ১৩২ রানে সাজঘরে ফেরেন। চতুর্থ উইকেটে এ দু’জন ২৪৭ রান তোলেন। আমলা ফিরে যাওয়ার পরও উইকেটে ছিলেন প্লেসিস। তিনি ১৮১ বলে ১৫ চারে ১৩৫ রান করে অপরাজিত থাকেন। বাংলাদেশের বোলারদের অসহায়ত্ব এখান থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়। শুভাশিষ ছাড়া আর কোন বোলারই পাত্তা পাননি প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের সামনে। হয়েছেন তুলোধুনা। যার কারণে ওভারপ্রতি প্রায় ৫ (৪.৭৭) করে রান তুলেছে স্বাগতিক দল। ৪ উইকেটে ৫৭৩ রান করে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এটি তাদের নিজেদের মাটিতে সর্বোচ্চ রানের সংগ্রহ। এর আগের টেস্টেই ৩ উইকেটে প্রথম ইনিংসে ৪৯৬ রানই ছিল সেরা। শুভাশিষ ৩টি ও রুবেল ১টি উইকেট শিকার করেন। জবাব দিতে নেমে শুরু থেকেই দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাটিং চিত্র ফুটে ওঠে। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিংয়ে। শুধুমাত্র ইমরুল কায়েস লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনিও সাজঘরে ফেরেন চা বিরতির ঠিক পরেই ২৬ রান করে। আউট হওয়া বাকিদের মধ্যে আরও কেউ দুই অঙ্কের কোটায় পৌঁছুতে পারেননি। ৬ নম্বরে নেমে তরুণ লিটন কুমার দাস দারুণ ব্যাটিং করেছেন। তিনি প্রতিরোধ গড়েন প্রোটিয়া বোলিং তোপের মুখে। তার সঙ্গে স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের লজ্জা দেয়ার মতো ব্যাটিং করেছেন বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। সৌম্য সরকার (৯), মুমিনুল হক (৪), মুশফিকুর রহীম (৭), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (৪), সাব্বির রহমান (০) সাজঘরে ফিরে গেছেন উল্টোপাল্টা ব্যাট চালিয়ে। মাত্র ৬৫ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে বিপদে থাকা বাংলাদেশ এখন লিটন-তাইজুলের সপ্তম জুটিতে ৫০ রান যোগ করে কিছুটা প্রতিরোধ গড়েছিল। কিন্তু তাইজুল ১২ রান করে ফিরলে বিপদ ঘনিয়ে আসে আরও। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি হাঁকিয়ে নিজের সেরা ইনিংস উপহার দিয়ে লিটনও ৭০ রানে সাজঘরে ফেরেন। মাত্র ৭৭ বলে ১৩ চারে এ রান করেন তিনি। ১৪৭ রানে গুটিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের ইনিংসে বড় ধাক্কা দিয়েছেন রাবাদা ৫ উইকেট নিয়ে। আর ৩ উইকেট নেন অলিভিয়ের। ৪২৬ রানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১.২ ওভারে বিনা উইকেটে ৭ রান করেছে। দিন পড়ে আছে আরও তিনদিন। ফলোঅনে পড়া বাংলাদেশ পিছিয়ে ৪১৯ রানে। অস্বাভাবিক কিছু না ঘটলে নিশ্চিত পরাজয়, এমনকি ইনিংস ব্যবধানে হারের লজ্জাটাই এখন অনেক বড় শঙ্কা।
×