ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এ বিষয়ে ১২ অক্টোবর ট্রাম্পের ভাষণ

পরমাণু চুক্তি থেকে সরার ইঙ্গিত

প্রকাশিত: ০৩:৩২, ৭ অক্টোবর ২০১৭

পরমাণু চুক্তি থেকে সরার ইঙ্গিত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরানের সঙ্গে সম্পাদিত পরমাণু চুক্তি তার দেশের স্বার্থের অনুকূলে নয়। তিনি এ চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন। কংগ্রেসের অনিচ্ছা সত্ত্বেও এককভাবে তিনি এ কাজ করতে পারেন। আগামী সপ্তাহে তিনি চুক্তিটি ‘সত্যায়ন প্রত্যাহার’ করবেন। ওয়াশিংটন পোস্ট ও গার্ডিয়ান। যুক্তরাষ্ট্র ও আরও পাঁচটি দেশের সঙ্গে ইরানের ২০১৫ সালে পরমাণু চুক্তিটি হয়েছিল। এ চুক্তি অনুযায়ী, ইরান পরমাণু কর্মসূচী সীমিত করার বিনিময়ে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর কংগ্রেসে ইরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যা চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার স্পষ্ট ইঙ্গিত। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে তিনি এ চুক্তি বাতিল করতে ইচ্ছুক। কংগ্রেসের অনেক সিনিয়র নেতা, কূটনীতিক, সামরিক ও জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা মনে করেন সামান্য পরিবর্তন এনে হলেও চুক্তিটি বহাল রাখা প্রয়োজন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস এবং সেনাবাহিনী প্রধান জোসেফ ডানফোর্ড গত সপ্তাহে কংগ্রেসের এক শুনানিতে ওই চুক্তির পক্ষে মত দিয়েছেন। ম্যাটিস এ কথাও বলেছেন তিনি মনে করেন না যে চুক্তিটি অসত্যায়ন করলেও এর কার্যকারিতা শেষ হয়ে যাবে। এ মাসের ১২ তারিখ ট্রাম্প ভাষণ দেবেন। সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত এবং মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে অস্থিতিশীলতার জন্য বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনার একটি রূপ রেখা এখানে থাকতে পারে। তবে এ পরিকল্পনাতেও কিছু পরিবর্তন হতে পারে বলে কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন। তবে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে তার ভাষণের বিষয়বস্তু সম্পর্কে কোন ধারণা দেয়া হয়নি। এদিকে ইরান পরমাণু চুক্তি মেনে চলছে কিনা কিংবা ওই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থরক্ষা করছে কিনা সে বিষয়ে ট্রাম্পকে চলতি মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে কংগ্রেসকে সার্টিফাই করতে হবে। হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র মাইকেল এ্যান্টন বলেছেন, ‘ইরান পরমাণু কর্মসূচী চুক্তিটি ট্রাম্প প্রশাসনের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ। এ বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত যথাসময়ে প্রকাশ করা হবে।’ সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে চুক্তিটি হয়েছিল। ইরানের পরমাণু কর্মসূচী তখন যে গতিতে এগোচ্ছিল তাতে যুক্তরাষ্ট্র আশঙ্কা করেছিল দেশটি যে কোন সময়ে পরমাণু বোমা তৈরি করে ফেলতে পারে। ইরান অবশ্য বার বার দাবি করে এসেছে তাদের পরমাণু কর্মসূচী শান্তিপূর্ণ এবং পরমাণু বোমা তৈরির কোন ইচ্ছা তেহরানের নেই। ইরান ও ছয়টি দেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিতে ইরানকে একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত ইউরেনিয়াম এনরিচমেন্ট করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। চুক্তিটি হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞাগুলো শিথিল করা শুরু করেছিল। ইউরোপীয় দেশগুলোও ইরানের সঙ্গে একই পথ অনুসরণ করে। এখন ট্রাম্প একতরফাবে চুক্তি থেকে বেরিয়ে এলে ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য তৈরি হতে পারে। কারণ ইউরোপের দেশগুলো আগেই জানিয়েছে তারা চুক্তি প্রত্যাহার করবে না। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তারা বলছেন, তিনি কি করবেন তা এখনও ঘোষণা করেননি। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে নৈশভোজে ট্রাম্প বলেন, ‘ইরানের শাসকবর্গ সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করেন এবং তারা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। দেশটি এখনও পরমাণু উচ্চাভিলাষ ত্যাগ করেনি। ইরানের এই পরমাণু উচ্চাভিলাষ ও অস্থিতিশীলতা ছড়ানোর চেষ্টা আমাদের বন্ধ করতে হবে।’ ইরানের প্রেসিডেন্টন হাসান রুহানি গত মাসে বলেছিলেন তিনি চুক্তি নিয়ে আর দরকষাকষিতে যাবেন না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ লঙ্ঘন না করলে ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য চুক্তি থেকে ফিরে যাওয়া ঠিক হবে না।
×