ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

এশিয়া কাপ হকি এখনও বাকি অনেক কাজ

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ৩ অক্টোবর ২০১৭

এশিয়া কাপ হকি এখনও বাকি অনেক কাজ

রুমেল খান ॥ ‘সত্যি কথা বলতে কি, বাহফে এই আসরের প্রচারের বিষয়টি ঠিকমতো করতে পারেনি। স্বীকার করছিÑ আমরা এখন পর্যন্ত একটা ব্যানার, ফেস্টুনও লাগাতে পারিনি। ব্যর্থতার এই দায়ভার আমাদেরই।’ কথাগুলো আবদুর রশিদ সিকদারের। যার পরিচয় বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের (বাহফে) সহ-সভাপতি। ৩২ বছর পর যেখানে আবারও এশিয়া কাপ হকি আসরের আয়োজক হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ, সেখানে কোথায় বাহফে পরিকল্পনামাফিক তোরজোর করে আসর শুরুর নির্ধারিত সময়ের আগেই সবকিছু ঠিকঠাক করে ফেলবে, তা না; বরং আসর শুরুর নয় দিন আগেও তারা বলতে গেলে সংস্কার-প্রচার, নির্মাণ- কোন কিছুই শেষ করে উঠতে পারেনি। সোমবার এশিয়া কাপ হকি উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাহফের টুর্নামেন্ট কমিটি। কথা ছিল ফেডারেশনের নির্দিষ্ট কনফারেন্স রুমেই অনুষ্ঠিত হবে প্রেসমিটটি। কিন্তু সেখানে গিয়ে জানা গেল, প্রেসমিটটি অনুষ্ঠিত হবে খোলা টার্ফে ও মেঘলা আবহাওয়ায়। কারণ? সম্মেলন কক্ষের সংস্কার কাজ শেষ না হওয়াতে এই ‘বিকল্প’ ব্যবস্থা। অথচ অনায়াসেই এই প্রেসমিট অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশন কিংবা বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের সম্মেলন কক্ষে অনায়াসেই প্রেসমিটটি আয়োজন করা যেত। অথচ সে পথেই হাঁটেনি ‘বিচক্ষণ’ বাহফে কর্তাব্যক্তিরা। প্রেসমিট চলাকালে বৃষ্টি হলে বা কড়া রোদ উঠলে কেলেঙ্কারি হতো। বাহফের সৌভাগ্য, সে রকম কিছু হয়নি (তারা কি আগেভাগেই আবহাওয়া অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভাল আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে নিয়েছিল)। যদিও তারা বলেছে এ রকম পরিস্থিতি তৈরি হলে তারা সাংবাদিকদের পর্যাপ্ত সংখ্যক ছাতা সরবরাহ করত। যদিও বাহফের কারও কাছেই একটি ছাতাও দেখা যায়নি। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাহফের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাদেক, তিন সহ-সভাপতি খাজা রহমতউল্লাহ, রশিদ শিকদার এবং শফিউল্লাহ আল মুনীর (টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান), টুর্নামেন্ট কমিটির সেক্রেটারি মামুন-উর-রশীদ, সাবেক তারকা হকি খেলোয়াড় ফয়সাল আহসানউল্লাহ এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের জনসংযোগ প্রধান কর্মকর্তা শাহজাদা বাউনিয়া প্রমুখ। শাহজাদা বলেন, ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা হকিতে এসেছি। তাছাড়া আমরা মনে করি বাংলাদেশের হকির ভবিষ্যত খুবই উজ্জ্বল।’ মামুন বলেন, ‘এই আসর উপলক্ষে আমাদের সাংগঠনিক কাজ শেষ। তিন হোটেলে মোট আট দলের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফারস হোটেলে থাকবে ভারত, পাকিস্তান, ওমান ও চীন। পূর্বাণী হোটেলে থাকবে বাংলাদেশ, দক্ষিণ কোরিয়া ও মালয়েশিয়া। সোনারগাঁও হোটেলে থাকবে জাপান। এশিয়া হকি ফেডারেশনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঢাকা আসবেন ৬ অক্টোবর থেকে।’ মামুন আরও জানান, ‘এ পর্যন্ত টুর্নামেন্ট কভার করতে বাংলাদেশে আসার জন্য আবেদন করেছেন ২৬ বিদেশী সাংবাদিক। বাংলাদেশের সাংবাদিকরা আবেদন করেছেন ১২৫ জন। আশা করছি সব মিলিয়ে এ আসরটি কভার করবেন ১৭০-১৮০ সাংবাদিক। দলগুলো ঢাকা আসবে ৭/৮ অক্টোবর থেকে।’ ইলেক্ট্র্রনিক্স স্কোরবোর্ড ইতোমধ্যেই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকার মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে চলে এসেছে। ইন্সটল করে এটাকে আগামী দু’দিনের মধ্যেই সচল করে তোলা হবে। অবশ্য নতুন লিফট এখনও স্থাপন করার কাজ শেষ হয়নি। বহুল আলোচিত ফ্লাডলাইট স্থাপন করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই পরীক্ষামূলকভাবে জ্বালানোও হয়েছে। সোমবারই সন্ধ্যা ৭টায় ফ্লাডলাইটের আলোয় একটি পরীক্ষামূলক ম্যাচ খেলা হয়। যাতে অংশ নেন দেশের সাবেক হকি তারকা খেলোয়াড়রা। এর মাধ্যমে ফ্লাডলাইটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও হয়। স্টেডিয়ামের বাইরে প্রচুর ময়লা-আবর্জনা ও জঞ্ঝাল জমা হয়ে আছে। এ প্রসঙ্গে বাহফের ভাষ্যÑ এগুলো ৫ অক্টোবরের মধ্যে সরিয়ে ফেলা হবে। এখানে উল্লেখযোগ্য বিষয়Ñ উদ্বোধনীর চেয়ে সমাপনী অনুষ্ঠানেই বেশি গুরুত্বারোপ করছে বাহফে। কারণ একটাইÑ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাপনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। তাই সমাপনী অনুষ্ঠানটি বেশি আকর্ষণীয়ভাবে করবে বাহফে। আগের ৯ আসরের চেয়ে এই আসরের সমাপনী অনুষ্ঠানটি অনেকটাই ভিন্নমাত্রার হবে। এই অনুষ্ঠানের দায়িত্ব ইতোমধ্যেই দেয়া হয়েছে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট গ্রুপকে। সমাপনী অনুষ্ঠান হবে মোট ৪৫ মিনিটের। এতে থাকবে বর্ণিল আতশবাজি এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতি ফুটিয়ে তোলা হবে ডিসপ্লের মাধ্যমে। আর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে সাদামাটাভাবে। এর আয়োজনে থাকবে স্টার স্পোর্টস। স্থায়িত্ব ১০-১৫ মিনিট। টুর্নামেন্ট চলাকালে সুভ্যেনির বিক্রি করবে বাহফে। দর্শকরা বাংলাদেশের জার্সি, টি-শার্ট, কাপ, মগ ইত্যাদি কিনতে পারবে স্টেডিয়ামের নির্দিষ্ট স্টল থেকে। ঢাকায় অনুষ্ঠিত ১৯৮৫ সালের এশিয়া কাপ হকিতে অংশ নেয়া বাংলাদেশের সেই দলের খেলোয়াড়দের সংর্বধনা দেবে বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস এ্যাসোসিয়েশন (বিএসজেএ)। বাহফের কাজ সাংবাদিকরা করছে, তাহলে বাহফের কাজটা কি? এর উত্তরে মুনীরের কূটনৈতিক জবাব, ‘বাহফে-সাংবাদিক মহল হচ্ছে একই পরিবারের মতো। এখানে যারাই কাজ করবে, হকির উন্নয়নের জন্যই করবে। তাই হকির সাফল্য-ব্যর্থতা দুটোই বাহফে-সাংবাদিকদের সমান ভাগ করে নেয়া উচিত।’ বাংলাদেশের প্রস্তুতি ম্যাচ নিয়ে ধোঁয়াশাও সৃষ্টি হয়েছে। আগে শোনা গিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া ৮ অক্টোবর সকালে ঢাকা এসে ওইদিনই সন্ধ্যায় বাংলাদেশ জাতীয় দলের সঙ্গে একটি প্রীতি ম্যাচ খেলবে। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে শোনা গেল ভিন্ন কথা। জাতীয় দলের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম কামাল জানান, ‘এখনও ঠিক হয়নি আমরা কোন দলের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলব। চেষ্টা করা হচ্ছে জাপান এবং কোরিয়া দলের সঙ্গে অন্তত একটি করে ম্যাচ খেলার। তবে একটি ম্যাচ আমরা খেলব, এটা নিশ্চিত। এখন সেটি চূড়ান্তভাবে জানা যাবে ৭ অক্টোবর। আর প্রস্তুতি ম্যাচগুলো অবশ্য ৭০ নয়, ২০ বা ৩০ মিনিটের করে হবে।’
×