ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বোমার বদলে বোমা

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বোমার বদলে বোমা

উত্তর কোরিয়ার একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু পরীক্ষার কারণে গোটা বিশ্বের দৃষ্টি এখন সেই দেশটির ওপর। এ বছর পিয়ংইং ২২টি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করেছে এবং একটি হাইড্রোজেন বোমাও সাফল্যের সঙ্গে ফাটিয়েছে। খোদ আমেরিকার মতো পরাশক্তি সেখানে মনে করছে যে দেশটি পরমাণু বোমাবাহী ক্ষেপণাস্ত্র তার দিকেও ছুড়ে মারতে পারে সেখানে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও অন্যদের তো আরও শঙ্কিতবোধ করার কথা। দক্ষিণ কোরীয়দের একাংশ চায় আমেরিকা আবার পারমাণবিক বোমা তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে সিওলের প্রতি মার্কিন সমর্থনের প্রমাণ দিক এবং তাদের নিরাপত্তাবোধ বাড়িয়ে তুলুক। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, কোরিয়া যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র ৯৫০টি পরমাণু বোমা দক্ষিণ কোরিয়ায় মোতায়েন রেখেছিল। পরে ১৯৯১ সালে সেগুলো ওখান থেকে সরিয়ে নেয়। এর অল্প কিছু দিন পর দুই কোরিয়া এই উপদ্বীপকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত রাখতে একমত হয়। কিন্তু অচিরেই উত্তর কোরিয়া এই চুক্তি লঙ্ঘন করে এবং ১১ বছর আগে তার প্রথম পরমাণু বোমার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটায়। গত ৩ সেপ্টেম্বর উত্তর কোরিয়া হাইড্রোজেন বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর পর দক্ষিণ কোরিয়ার সর্ববৃহৎ বিরোধী দল লিবার্টি কোরিয়া মার্কিন পরমাণু বোমা তাদের দেশে নতুন করে মোতায়েনের আহ্বান জানিয়েছে। তবে দক্ষিণ কোরীয়রা আমেরিকার হাতে তাদের নিরাপত্তা ন্যস্ত করতে পারে এই মর্মে আগে তাদের মধ্যে যে নিশ্চয়তাবোধ কাজ করত তা উত্তরোত্তর কমে আসছে। গত জুন মাসে পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে বিশ্ব পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সঠিক কাজ করছেন এমন বক্তব্যের ওপর ৭৮ শতাংশ দক্ষিণ কোরিয়াবাসীর কোন আস্থা নেই। উত্তর কোরিয়ার সর্বশেষ পরীক্ষার জবাবে ট্রাম্প যা কিছু বলছেন বা করছেন তাতে তাদের এসব আশঙ্কা দূর হওয়ার কোন কারণ নেই। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস মাতিস হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন যে আমেরিকা ও তার মিত্রদের প্রতি কোন রকম হুমকি দেখা দিলে ত্বরিত গতিতে ব্যাপক সামরিক জবাব দেয়া হবে। অন্যদিকে ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানানোর জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুুন জায়ে ইনের সমালোচনা করেছেন। এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়া দেখতে পাচ্ছে যে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে তাদের তোষণমূলক আলোচনা কাজে দেবে না এবং আমিও তাদের এ কথাই বলেছিলাম।’ গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের মার্ক ফিজপ্যাট্রিক বলেন, ‘এটা একেবারেই ভুল জবাব।’ লিবার্টি কোরিয়ার নেতা হং জুন পিওয়ের যুক্তি হলো পরমাণু অস্ত্র পুনরায় দক্ষিণে মোতায়েন করা হলে সেটাই হবে দক্ষিণ কোরিয়াকে রক্ষা করতে আমেরিকার সঙ্কল্পের প্রমাণ। বেশ কিছু রক্ষণশীল পত্রিকাও এই ধারণা সমর্থন করেছে। ‘জুনগাং ইলবো’ নামে এক প্রভাবশালী পত্রিকা বলেছে ‘এটা হলে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর আমাদের আস্থা বাড়বে।’ গত আগস্ট মাসের এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে দক্ষিণ কোরিয়ার ২৭ শতাংশ মানুষ তাদের দেশকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত রাখার পক্ষপাতী। গত ৪ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে এক বৈঠকে দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পরমাণু অস্ত্র চাওয়া একটা বিকল্প যা পর্যালোচনা করা উচিত। তিনি এই ধারণার প্রতি দক্ষিণ কোরীয়বাসীর সমর্থনের কথাও তুলে ধরেন। দক্ষিণ কোরিয়ার আরেক বিকল্প হচ্ছে নিজস্ব পরমাণু অস্ত্র করায়ত্ত করা। ১৯৭০-এর দশকে দেশটি দু’-দু’বার সেই চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমেরিকার চাপে বাদ দেয়। বিশেষজ্ঞদের ধারণা চাইলে ওরা তিন বছরের মধ্যে নিজস্ব পরমাণু বোমার অধিকারী হতে পারে। চুসান ইলবো নামে আরেক পত্রিকায় এই বিকল্পটি বিবেচনায় নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, ‘পারমাণবিক হুমকি মোকাবেলার জন্য অবশ্যই পরমাণু বোমা থাকতে হবে। এর অন্য কোন বিকল্প নেই।’ তার পরও দক্ষিণ কোরিয়া সম্ভবত পরমাণু অস্ত্রমুক্ত থাকবে। কারণ নিজেরা বোমা বানাতে গেলে আমেরিকার সঙ্গে দক্ষিণের মৈত্রী জোট ভেঙ্গে যাবে এবং দক্ষিণের ওপর অবরোধের খ—গ নেমে আসবে। দক্ষিণ কোরিয়ার বর্তমান সরকার আমেরিকার কাছে পরমাণু বোমা চেয়ে নেয়ার বিরোধী। কখনও যদি চায়ওবা মার্কিন জেনারেলরা সম্ভবত দিতে চাইবে না। কারণ তা দিলে চীন ও রাশিয়া উভয়েই বিরোধিতা করবে। এক সাবেক মার্কিন কূটনীতিকের ভাষায় ‘আমেরিকার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে দক্ষিণ কোরিয়ায় পরমাণু বোমা মোতায়েন অপ্রয়োজনীয় ও বিপজ্জনক। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×