ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালে ১৬ বছর থেকে পাঠদান ব্যাহত

প্রকাশিত: ০১:২৪, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বরিশালে ১৬ বছর থেকে পাঠদান ব্যাহত

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ প্রধানশিক্ষক দাবিদার আব্দুল করিম ও সৈয়দ এনায়েত করিমের চরম বিরোধে ১৬ বছর ধরে পাঠদান বন্ধ রয়েছে জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের কোলচর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। ফলে শিক্ষাবঞ্চিত হচ্ছে ওই এলাকার কোমলমতি শিশুরা। স্থানীয়রা তাদের কোমলমতি শিশুদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দুই করিমের হাত থেকে রক্ষা পেতে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উধ্বর্তন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। গত ১৬ বছর ধরে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদে বহাল থাকা আব্বাস মোল্লা জানান, শিক্ষকদের দুই পক্ষের দ্বন্ধে উচ্চ আদালতে মামলা চলমান থাকায় গত ১৬ বছর ধরে বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। তিনি আরও জানান, একাধিকবার বিদ্যালয়টি চালুর উদ্যোগ নিয়েও তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। সর্বশেষ ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হওয়ার পরেও তিনি অসংখ্যবার বিদ্যালয়ের পাঠদান চালুর বিষয়ে উভয়পক্ষের শিক্ষকদের সাথে সমঝোতা বৈঠক করেও কোন সুফল পাননি। স্থানীয় চাঁদপাশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনিচুর রহমান সবুজের মতে, বিদ্যালয়টি যেহেতু সরকারীকরণ হয়েছে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে নতুন শিক্ষক দিয়ে ওই স্কুলের পাঠদান চালু করার জন্য আমি জোর দাবি করছি। বর্তমানে বিদ্যালয় ভবনের তিনটি কক্ষে স্থানীয় বাসিন্দারা পাটকাঠি ও লাকড়ি ভর্তি করে রেখেছে। পুরো ভবনটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে থাকায় ভবনের মেঝ ও দেয়ালের পলেস্তরা খসে পরছে। একটি কক্ষে এক জেলে পরিবার বসবাস করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ১৯৭৫ সালে এলাকার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিরা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আফসার উদ্দীনের নামে ‘শহীদ আফসার উদ্দীন প্রাথমিক বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন। পরে এটি নিবন্ধিত হয়। শুরুতে আব্দুল করিম হাওলাদার নামের এক ব্যক্তিকে প্রধানশিক্ষক ও অন্য তিনজনকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। ওইসময় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। ১৯৯০ সালের পর পরিচালনা কমিটি নিয়ে এলাকার দুটি পক্ষ দ্বন্ধে জড়িয়ে পরার পর স্থানীয় জাফর আলী ও আব্দুস ছাত্তার নামের দুই ব্যক্তি পাল্টাপাল্টি কমিটি গঠণ করেন। সূত্রে আরও জানা গেছে, আব্দুস ছাত্তার বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক আব্দুল করিমসহ তিনজন সহকারী শিক্ষকের পক্ষে অবস্থান নেয়। আর জাফর আলীর পক্ষে সৈয়দ এনায়েত করিমকে প্রধানশিক্ষক ও অপর তিনজনকে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ করা হয়। এরপর ১৯৯৮ সালে বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য এলজিইডি বিভাগ থেকে সেখানে প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি একতলা ভবন নির্মাণের পর দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি নিজেদের শিক্ষক দাবি করায় সেখানে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এরপর প্রায়ই বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ থাকে। প্রধানশিক্ষক দাবিদার আব্দুল করিম জানান, বিদ্যালয়টি নিবন্ধিত হলে তাতে শিক্ষক হিসেবে তিনি প্রধানশিক্ষক ও তার পক্ষের তিনজন সহকারী শিক্ষক নিবন্ধিত শিক্ষক হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। এর বিরুদ্ধে অপর প্রধানশিক্ষক দাবিদার সৈয়দ এনায়েত করিমসহ তার পক্ষের তিনজন সহকারী শিক্ষক আপত্তি দিয়ে নিজেদের বৈধ শিক্ষক দাবি করে শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন করেন। ফলে তিনি (আব্দুল করিম) ২০০১ সালে বরিশাল সহকারী জজ আদালতে নিজেদের বৈধ শিক্ষক দাবি করে বেতন-ভাতা পাওয়ার জন্য একটি মামলা করেন। ওই মামলাটি সহকারী জজ আদালত, জেলা জজ আদালত হয়ে এখন উচ্চ আদালতে আপিল চলছে। ফলে ২০০১ সাল থেকে বিদ্যালয়টির পাঠদান সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। আব্দুল করিম দাবি করেন, তিনি ও তার পক্ষের শিক্ষকরাই বৈধ শিক্ষক। এজন্য আদালতে তারা মামলা করেছিলেন। আদালত তাদের পক্ষে রায় দিয়েছেন। সৈয়দ এনায়েত করিমের পক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন। অন্যদিকে এনায়েত করিমের পুত্র সাইফুল ইসলাম দাবি করেন, তারা জমি দিয়ে বর্তমান বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করার পর তার বাবা সৈয়দ এনায়েত করিম প্রধানশিক্ষক এবং অপর তিনজন সহকারী শিক্ষক হিসেবে ওই স্কুলে যোগদান করেছেন। সাইফুল ইসলাম আরও জানান, তাদের প্রচেষ্টায়ই বিদ্যালয়টি নিবন্ধিত হয়েছে। এরপর আব্দুল করিম আদালতে মামলা করায় দীর্ঘদিন থেকে বিদ্যালয়টির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের কোমলমতি শিশুদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে প্রধানশিক্ষক দাবিদার দুই করিমের হাত থেকে বিদ্যালয়টি রক্ষা করতে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উধ্বর্তন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
×