ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হিমাগারের আলু তুলছেন না ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: ০৭:১৮, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

হিমাগারের আলু তুলছেন না ব্যবসায়ীরা

সংবাদদাতা, বদরগঞ্জ, রংপুর, ২৩ সেপ্টেম্বর ॥ বদরগঞ্জে হিমাগারে আলু রেখে লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। এ অঞ্চলে প্রতিদিনেই পাল্লা দিয়ে কমছে আলুর দাম। উৎপাদন মৌসুমের চেয়ে জাতভেদে দাম কমে যাওয়ায় বস্তাপ্রতি ৩০০ থেকে ৪০০শ’ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ কারণে হিমাগারে থেকে আলু তুলছেন না কৃষকেরা। এদিকে হিমাগারে আলু রেখে কৃষকেরা যে ঋণ নিয়েছেন, তা পরিশোধে হিমাগার কর্তৃপক্ষ চাপ সৃষ্টি করেছেন বলে জানিয়েছেন তারা।স্টোরেজ মালিকরা জানান, এ উপজেলায় শাহাজালাল ও এবিএল নামে দুটি হিমাগার রয়েছে। শাহাজালাল হিমাগরে ১ লাখ ৭৫ হাজার টন ও এবিএল স্পেশালাইজ হিমাগারে ১ লাখ ১৫ হাজার টন আলু রয়েছে। অন্য বছরগুলোতে এ সময়ে ৭৫ ভাগ আলু হিমাগার থেকে বেরিয়ে গেলেও এবারে দাম কম হওয়ায় এখন ২০ ভাগ আলুও বের হয়নি। শানিবার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলুর মৌসুমে প্রতিবস্তা (৮৫ কেজি) এ্যাসটেরিক আলু ৯শ’ ৫০ টাকা, গ্র্যানুলা ৬শ’ ৫০ টাকা, সাদা ১৪শ’ টাকা, কার্টিলাল ৯শ’ টাকা, লাল পাকড়ী ১১শ’ টাকা, সিল ১৫শ’ টাকা, ডায়মন্ড ৮শ’ ৫০ টাকা করে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু বর্তমান বাজারে এ্যাসটেরিক আলু প্রতিবস্তা (৮৫ কেজি) ৯শ’ টাকা, গ্রানুলা ৭শ’ টাকা, সাদা ১৫শ’ টাকা, কাটিলাল ৮শ’ ৫০ টাকা, লাল পাকড়ী ১১শ’ ৫০ টাকা ও সিল বিলাতী আলু ১৭শ’ টাকা, ডায়মন্ড ৮শ’ ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমান বাজারমূল্য, ৩শ’ টাকা হিমাগার ও ২০ টাকা পরিবহন ভাড়া দিয়ে প্রতিবস্তা আলুতে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের ৩শ’ টাকা থেকে ৪শ’ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। তবে পাইকারি আলুর বাজারে ধস নামলেও খুচরা বিক্রেতারা প্রতিকেজি আলু ১৮ থেকে ২৬ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছে।আলু ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ৭শ’ টাকা দরে মৌসুমে ৭শ’ ৫০ বস্তা এ্যাসটেরিক আলু কিনে শাহাজালাল কোল্ড স্টোরে রেখেছি। কিন্তু বর্তমানে প্রতিবস্তা আলু ৭শ’ টাকা বিক্রি হচ্ছে। হিসাব করে দেখছি হিমাগার ও পরিবহন ভাড়া মিলে বস্তাপ্রতি ৪শ’ টাকা লোকসান হবে। তিনি আরও বলেন, প্রতিবস্তা আলুতে হিমাগার থেকে ৫শ’ টাকা করে ঋণ নিয়েছি। কিন্তু এখন প্রতিদিনেই হিমাগারের লোকজন ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছে। বাজারের অবস্থা এ রকম থাকলে বাড়ি ছেড়ে পালানো ছাড়া কোন উপায় থাকবে বলে তিনি জানান। শাহাজালাল হিমাগারের হিসাবরক্ষক আহসান হাবিব লাইজু বলেন, এবারে শাহাজালাল কোল্ড স্টোরেজে এক লাখ ৭১ বস্তা আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত বিগত বছরগুলোতে স্টোরেজ থেকে ৭৫ ভাগ আলু কৃষকেরা বের করে নিয়ে যায়। কিন্তু এবারে এ পর্যন্ত দশ ভাগ আলু বের হয়নি। তিনি আরও বলেন, কৃষক ও ব্যবসায়ীরা স্টোর থেকে ৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন ব্যবসায়ী আলু তুলতে আসছেন না। এ কারণে আমরা চিন্তায় পড়ে গেছি। এবিএল কোল্ড স্টোরেজের মালিক পিয়েল খান ও বাসুদেব দাস জানান, আলু ব্যবসায়ীদের তিন কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। কিন্তু লোকসানের ভয়ে কোন আলু ব্যবসায়ী আলু তুলতে আসছেন না। উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা কনক চন্দ্র রায় বলেন, আলুর প্রতিকেজি উৎপাদন খরচ ৮ থেকে ৯ টাকা পড়েছে। এখন আলুর যে দাম তাতে কৃষককে অনেক টাকা লোকসান গুনতে হবে।
×