ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা নিয়ে ব্যবসায় মেতেছে বিভিন্ন সিন্ডিকেট

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা নিয়ে ব্যবসায় মেতেছে বিভিন্ন সিন্ডিকেট

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে কোন বাধা দেয়া হচ্ছে না মানবতার দোহাই দিয়ে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে মিয়ানমারের পাশেই কি শুধু বাংলাদেশ। কেন চীন ও ভারতে এদের প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। কারণ ওই দুটি দেশসহ বিশ্বের বেশকটি দেশ এখন রোহিঙ্গাদের ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশকে বাহবা দিতে শুরু করেছে। তবে রোহিঙ্গারা একবার গেড়ে বসলে আর ফিরে যাবে না এটা অতীতের রেকর্ড। ৯০-এর দশক থেকে বিংশ শতাব্দী পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা এদেশে প্রবেশ করেছে অবৈধভাবে। দীর্ঘ ৩০ বছরেও তাদের ফেরত পাঠাতে পারেনি কোন সরকার। এবার আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজার-টেকনাফ দিয়ে প্রবেশ করেছে এদেশে। অভিযোগ রয়েছে, অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই এরা কক্সবাজার ছাড়াও তিন পার্বত্য এলাকায় রাতের আঁধারে আস্তে আস্তে অবস্থান নিতে শুরু করেছে। টেকনাফ হয়ে ইয়াবার চালানে র‌্যাব সেভেনের অভিযানে যেমন অনেক রোহিঙ্গা চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছে, তেমনি আগামীতে এসব রোহিঙ্গা অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান যোগাতে গিয়ে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে এমন অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা। কাজ না পেলে তারা জড়াবে অপরাধের সঙ্গে এমন আশঙ্কা সচেতনদের। রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবতা দেখাতে গিয়ে দেশী অসাধু সিন্ডিকেটের কারসাজি শুরু হয়েছে। ফলে রোহিঙ্গা নিয়ে ব্যবসায় মেতেছে বিভিন্ন সিন্ডিকেট। টেকনাফ হয়ে নৌকায় প্রতি রোহিঙ্গা বহনে নেয়া হচ্ছে ৩/৫ হাজার টাকা। শরণার্থী শিবিরে মানবতার নামে নিজেদের অবস্থান চাঙ্গা করছে এনজিও সংস্থাগুলো। কারণ এসব রোহিঙ্গাদের সাইনবোর্ড বানিয়ে ফান্ড কালেকশনে নেমেছে বাংলাদেশে বিদ্যমান বিভিন্ন এনজিও সংস্থা। রোহিঙ্গাদের পানিসহ বিভিন্ন খাবার সরবরাহের যোগান দিতে গিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীর দাম বাড়িয়ে অতি মুনাফা অর্জন করছে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। খোলা আকাশের দোহাই দিয়ে চড়া দামে বিক্রয় করতে প্লাস্টিক ও বাঁশ সংরক্ষণে ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রামের জেল রোড ও পার্বত্য অঞ্চল থেকে কালেকশনে নেমেছে। তবে, প্রশ্ন উঠেছে এসব রোহিঙ্গাদের কাছে দেশীয় টাকা এলো কিভাবে। তবে এসব রোহিঙ্গা শেষ পর্যন্ত আমাদের নিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ কুতুপালং ও উখিয়া দিয়ে রোহিঙ্গারা দলে দলে প্রবেশ করছে। এ পর্যন্ত চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুর অনুপ্রবেশ ঘটেছে। গত কয়েকদিন আগেও রোহিঙ্গা পুশব্যাকের কথা বললেও বর্তমানে এদের সহযোগিতা করছে এদেশী সিন্ডিকেট। উখিয়া সড়কের দুইপাশে রোহিঙ্গারা বস্তি গড়ে তুলছে, প্লাস্টিক ও বাঁশ দিয়ে মাথা গোজার ঠাঁই করে তুলছে। ফলে আমাদের কক্সবাজার পর্যটনশিল্প আগামী তিনমাসের মধ্যে ধসের মুখে পড়বে। পর্যটকরা ইতোমধ্যে শঙ্কিত হয়ে যাত্রা বাতিলের ঘটনা ঘটাচ্ছে এমন অভিযোগ কক্সবাজারকেন্দ্রিক হোটেল ও মোটেল ব্যবসায়ীদের। এদিকে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৯০ শতাংশ চট্টগ্রামের ভাষায় কথা বলে। ফলে খুব সহজে রোহিঙ্গারা চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মানুষকে অন্তত আঞ্চলিক ভাষা দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছে। কিন্তু আগামীতে ওইসব অঞ্চলে কাল হয়ে দাঁড়াবে এসব অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড়ের ঢালে ঢালে শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গারা গেড়ে বসার আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে রোহিঙ্গা নিবন্ধনের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সরকার। তবে এ ফিঙ্গারপ্রিন্ট একদিকে নিবন্ধন হলেও অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের তথ্য কালেকশন হবে। অভিযোগ রয়েছে, সরকারের এই নিবন্ধন ব্যবস্থাকে সাইনবোর্ড বানিয়ে অবস্থানরত এনজিও সংস্থাগুলোকে তহবিল সংগ্রহের সুযোগ করে দিল সরকার এমন মন্তব্য স্থানীয়দের।
×