ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

৮৮ রানে এগিয়ে

মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় দিনও বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২৯ আগস্ট ২০১৭

মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় দিনও বাংলাদেশের

মিথুন আশরাফ ॥ দুই দলের মধ্যে পার্থক্য একজনই। তিনি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। অস্ট্রেলিয়া দলে এরকম কোন অলরাউন্ডার নেই। আর সেই স্থানেই বাংলাদেশ এগিয়ে গেছে। সাকিব তা বুঝিয়েও দিয়েছেন। ৫ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসকে তো তিনিই ধসে দিয়েছেন। আর তাতে করে দ্বিতীয় দিনশেষে বাংলাদেশ ৮৮ রানে এগিয়েও গেছে। প্রথমদিনের মতো দ্বিতীয়দিনটিও নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মিরপুর টেস্টটি এখন বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণেও আছে। সেই দিন আর এই দিনের মধ্যে কত পার্থক্য! ২০০৬ সালেও অস্ট্রেলিয়া যখন সর্বশেষ টেস্ট সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে এসেছিল তখন বাংলাদেশ কোনভাবে পাঁচদিনে খেলা নিয়ে যেতে পারবে কিনা সেই শঙ্কা ছিল। আর এখন বাংলাদেশ সব টেস্টেই জয়ের জন্য খেলে। এই অস্ট্রেলিয়া এখন হারের আতঙ্কে ভোগে। প্রতিটি দিন এখন বাংলাদেশ নিজেদের করে নেয়। আর অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয়দিনেও বেকায়দাতেই পড়ে থাকে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের করা ২৬০ রানের জবাবে প্রথম ইনিংসে সাকিব (৫/৬৮) ও মেহেদী হাসান মিরাজের (৩/৬২) স্পিন ঘূর্ণির সামনে পড়ে ২১৭ রানের বেশি করতে পারেনি অসিরা। পঞ্চম উইকেটে রেনশ (৪৫) ও হ্যান্ডসকম্ব (৩৩) এবং নবম উইকেটে এ্যাগার (৪১*) ও কামিন্স (২৫) মিলে যদি হাল না ধরতেন তাহলে অস্ট্রেলিয়ার ঘাড়ে এখনই বিপদ এসে পড়ত। এরপর বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে ১ উইকেট হারিয়ে ৪৫ রান করে এগিয়ে আছে। ওপেনার তামিম ইকবাল (৩০*) ও তাইজুল ইসলাম ব্যাট হাতে আছেন। সৌম্য শেষবেলায় ভুল না করলে ১০ উইকেটই হাতে থাকত বাংলাদেশের। আজ তামিম, তাইজুল, ইমরুল, সাব্বির, সাকিব, মুশফিক, নাসির, মিরাজরা মিলে যদি এগিয়ে থাকাটাকে ৩০০ রান বা তার বেশি করতে পারেন তাহলে অস্ট্রেলিয়া হারের খপ্পরেই পড়ে যাবে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে যে ২০৯ রানের বেশি করে জেতার রেকর্ড নেই। ২০১০ সালে ইংল্যান্ড এই রান করে বাংলাদেশের বিপক্ষে জিতেছিল। বোঝাই যাচ্ছে অসিদের সামনে বড় একটি টার্গেট দাঁড় করাতে পারলেই হবে। তবে গত বছর অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৭৩ রানের টাগেট দিয়েও জিতেছিল বাংলাদেশ। সেই রকম টার্গেট হলেও স্পিন আক্রমণ দিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো সম্ভব। স্পিনেই অসিদের যত ভয়। টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে সেই ভয় জয় করার অনেক বিশ্বাসী কথাই অসিদের মুখে মিলেছে। কিন্তু মাঠে থরথর করে কেঁপেছে। অস্ট্রেলিয়ার ১০ উইকেটের মধ্যে ৯ উইকেটই বাংলাদেশ স্পিনারদের শিকার হয়েছে। প্রথমদিনই শেষবেলায় তিন উইকেট হারিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। করেছিল ১৮ রান। ২৪২ রানে পিছিয়ে ছিল। দ্বিতীয়দিন যেভাবে সাকিব, মিরাজ, তাইজুল মিলে অস্ট্রেলিয়া ব্যাটসম্যানদের ছন্নছাড়া করে দেন তাতে একটা সময় মনে হয়েছিল ১৫০ রানও করতে পারবে না অসিরা। দিনের প্রথম সেশনেই আরও ৩ উইকেট হারিয়ে বসে। তাও আবার এ মুহূর্তে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান স্মিথ, হ্যান্ডসকম্ব ও প্রথমদিনে ব্যাট হাতে থাকা রেনশকে সাজঘরে পাঠান স্পিনাররা। স্মিথ আউটের পর রেনশ ও হ্যান্ডসকম্ব মিলে বড় জুটির শঙ্কা জাগান। কিন্তু পারেননি। ৬৯ রানের বেশি জুটি গড়তে পারেননি। হ্যান্ডসকম্বকে আউট করে দিয়ে এ জুটি ভেঙ্গে দেন তাইজুল। অস্ট্রেলিয়া ব্যাটিংয়ের যেন বারোটা বাজে। দেখতে দেখতে ১৪৪ রানে ৮ উইকেটেরও পতন ঘটে যায়। কিন্তু এরপর এ্যাগার ও কামিন্স মিলে হাল ধরেন। এ দুইজনকে আউট করার অনেক চেষ্টা করে যান স্পিনাররা। কিন্তু কোনভাবেই পারছিলেন না। সঙ্গে মুস্তাফিজও যোগ দেন। তাতেও কাজ হয় না। ১৫০ রান অতিক্রম করে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। দেখতে দেখতে ২০০ রানের কাছেও চলে যায়। স্কোরবোর্ডে রান যত বাড়বে ততই অস্ট্রেলিয়ার জন্য সুবিধা হতে থাকবে। তা জানা সত্ত্বেও দুই বোলার এ্যাগার ও কামিন্সকে আটকানো যাচ্ছিল না। তারা যেন ব্যাটসম্যান হয়ে ওঠেন। শেষ পর্যন্ত ১৯৩ রানে গিয়ে কামিন্সকে আউট করে দেন সাকিব। দুইজনের জুটি ৪৯ রানেই ভেঙ্গে যায়। সাকিব ভেঙ্গে দেন। ২১৭ রানে হ্যাজলউডকেও সাজঘরে ফিরিয়ে ৫ উইকেট শিকার করেন সাকিব। শফিউল যদি সাকিবের বলে একটি ক্যাচ হাতছাড়া না করতেন তাহলে আরও আগেই অলআউট হয়ে যেত অস্ট্রেলিয়া। এরপরও অসিদের যেখানে আটকানো গেছে তাতে টেস্ট থেকে বাংলাদেশের সাফল্যের ইঙ্গিতই মিলছে। সাকিব তো সেই সাফল্যের রূপকার হয়ে উঠেছেন। প্রথমদিন ব্যাট হাতে দলের সর্বোচ্চ ৮৪ রান করার পর দ্বিতীয়দিন বল হাতেও উজ্জ্বলতা ছড়িয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই শুধু সাকিবের এক ইনিংসে ৫ উইকেট নেয়া বাকি ছিল। সেটিও নিয়ে নিলেন। এখন আরেকটি ইনিংস বাকি আছে। ব্যাট ও বল হাতে সাকিব আরও কিছু করতে পারবেন সেই আশাই করছেন সবাই। ম্যাচ জিততে হলে যে সাকিবকে ব্যাট অথবা বল হাতে হাল ধরতে হবে। বাংলাদেশ ৮৮ রানে এগিয়ে যাওয়ার পর আজ তৃতীয়দিনে ব্যাটসম্যানদের হাতেই সব থাকছে। তারা ভাল রান স্কোরবোর্ডে যোগ করার পর বোলারদের নৈপুণ্য দেখাতে হবে। তাহলে ম্যাচ থেকে ফল বের করা সম্ভব হবে। আর বোলারদের নৈপুণ্য দেখানো মানে তো স্পিনারদের দিকেই ইঙ্গিত করা। দুই দলের স্পিনাররাই প্রথম দুইদিনে যে বোলিং করে দেখিয়েছেন তাতে মিরপুর টেস্ট যে স্পিন দক্ষতাতেই জেতা সম্ভব তা বোঝা হয়ে গেছে। দুইদিনে দুই দলের ২১ উইকেট পড়েছে। এরমধ্যে বাংলাদেশের ১১টি ও অস্ট্রেলিয়ার ১০টি উইকেট পড়েছে। বাংলাদেশের ৮ উইকেটই অসি স্পিনাররা (লিয়ন ৩টি, এ্যাগার ৪টি, ম্যাক্সওয়েল ১টি) শিকার করেছেন। আর অস্ট্রেলিয়ার ৯ উইকেট শিকার করেছেন বাংলাদেশ স্পিনাররা (সাকিব ৫টি, মিরাজ ৩টি, তাইজুল ১টি)। বাংলাদেশ স্পিনাররাই এগিয়ে আছেন। এই এগিয়ে থাকা অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় ইনিংসেও বজায় থাকলে টেস্টের ফল বাংলাদেশের দিকেই ঝুঁকবে। স্পিন আক্রমণে নেতৃত্ব দিতে হবে আবার সাকিবকেই। যিনি এ মুহূর্তে দুই দলের মধ্যে সেরা স্পিনারও। তিনি যদি দ্বিতীয় ইনিংসেও সফল হন তাহলে টেস্টটি সাকিবময়ই হয়ে যাবে। প্রথম দুইদিনে তো তিনিই নায়ক। তার নায়কোচিত নৈপুণ্যে তো মিরপুর টেস্ট এখন বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণেও আছে।
×