ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাখাইনে গণহত্যা

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২৯ আগস্ট ২০১৭

রাখাইনে গণহত্যা

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমারে রাখাইন প্রদেশে সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষীদের রোহিঙ্গা নিধন অভিযান আরও জোরালো হয়েছে। সশস্ত্র সেনাসদস্যদের বর্বরতায় সেখানকার তিনটি টাউনশিপ মংডু, বুচিদং ও রাচিদং শহর জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমান সভ্য দুনিয়ার ইতিহাসে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিধন অভিযানের এ ঘটনা নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হওয়া সেনা, বিজিবি ও পুলিশের যৌথ অভিযানে সোমবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে বলে সীমান্তের ওপার থেকে বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে মৃতের সংখ্যা আট শতাধিক বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। রোহিঙ্গা কিলিং অপারেশন এতই ভয়াবহ ও নৃশংস পর্যায়ে উপনীত হয়েছে, শুক্রবার ভোর রাত থেকে সোমবার পর্যন্ত নতুন করে অর্ধলক্ষাধিক রোহিঙ্গা বসতবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে সীমান্ত এলাকা ও পাহাড়-পর্বতে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া রাখাইন রাজ্যে বর্তমানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সকল সদস্য অর্থাৎ প্রায় ১০ লাখ নারী-পুরুষ ও শিশু দিবারাত বলবতকৃত কার্ফুর মধ্যে প্রাণ বাঁচানোর লড়াইয়ে রত। খাদ্য, পানীয় ও প্রয়োজনীয় বিভিন্ন জিনিসপত্রের অভাবে চলছে হাহাকার। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, সেখানকার সেনা, পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী দমন-নির্যাতন, হত্যা, গুম, জ্বালাও-পোড়াও কেবলই বৃদ্ধি করে চলেছে। গণহারে হত্যার শিকার হচ্ছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। সেনা, পুলিশ ও সীমান্তরক্ষীদের পাশাপাশি মিয়ানমার নাগরিকদের কণ্ঠে একটি আওয়াজ ‘ম’রো একা লা-লিবা (তোরা এখান থেকে চলে যা)। সর্বশেষ অবৈধ অনুপ্রবেশকালে আটককৃত ১৪১ রোহিঙ্গা নর-নারীকে রবিবার পুশব্যাক করেছে বিজিবি ও পুলিশ। গত তিনদিনে পুশব্যাক হয়েছে ৫৫১ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্য। বিজিবিপ্রধান মেজর জেনারেল আবুল হোসেন সোমবার ঢাকায় আবারও বলেছেন, সীমান্তের ক্রিটিক্যাল পয়েন্টগুলোতে সর্বোচ্চ নজরদারি আরোপ করা হয়েছে। তবে সীমান্তের প্রতিটি স্থানে বিজিবি সদস্যদের নিয়োগ সম্ভব নয়। আমরা সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা বলবত করেছি। কিন্তু বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন মহলের প্রশ্ন উঠেছে, মিয়ানমার সরকারের নির্দেশে সে দেশের সেনা, পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী যেভাবে রোহিঙ্গা নিধন অব্যাহত রেখেছেÑএর শেষ কোথায়। মানবিক বিপর্যয় ঘটার পরও রোহিঙ্গাদের নিয়ে বিশ্ববিবেক কেন জানি কঠোর অবস্থান গ্রহণে অনেকটা নিষ্ক্রিয়। রোহিঙ্গাদের নিয়ে দফায় দফায় এ ধরনের অমানবিক আচরণ ও হত্যা নিধনযজ্ঞ নিয়ে ইতোমধ্যে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে যত কিছু বলা হোক না কেন এর কার্যকরে শক্তিশালী রাষ্ট্রসমূহের কোন পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। যা মানবতার প্রতি উপহাসমূলক বলেও রব উঠেছে। সীমান্তে যৌথ অভিযান চালাতে মিয়ানমারকে ঢাকার প্রস্তাব সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে সীমান্তে যৌথ অভিযান চালাতে মিয়ানমারকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। সীমান্তবর্তী রাখাইন প্রদেশে সেনা অভিযানের মধ্যেই এমন প্রস্তাব দিল বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, সোমবার মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিভাগের মহাপরিচালক মঞ্জুরুল করিম ও বাংলাদেশে মিয়ানমারের শার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স অং মিন্টের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই প্রস্তাব দেয়া হয়। সূত্র জানায়, এ ধরনের প্রস্তাব নিয়ে অনেকদিন ধরেই বাংলাদেশের চিন্তাভাবনা চলছিল। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে এটি দেয়া হলো। প্রস্তাবের বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন বলে জানিয়েছেন মিয়ানমারের শার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স। সূত্র আরও জানায়, বৈঠকে মহাপরিচালক মঞ্জুরুল করিম রাখাইনের রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশ ঠেকাতে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ইস্যুতে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় মিয়ানমারকে। এদিকে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য ১৩৪ কিলোমিটারব্যাপী সীমান্তের প্রতিটি পয়েন্টে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশু আটকা পড়েছে। বিজিবি, কোস্টগার্ড এবং পুলিশের কড়া নজরদারির মধ্যেও ফাঁকফোকর অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। এ সংখ্যা কমপক্ষে ২০ সহস্রাধিক বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। সোমবার মিয়ানমার সরকারের এ অভিযানে রাখাইন প্রদেশ থেকে তাদের বিপুল সংখ্যক নাগরিকদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে। বুলডোজার দিয়ে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি যেমন গুঁড়িয়ে দেয়া হচ্ছে তেমনি গানপাউডার ছিটিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। সেন্টমার্টিনের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে মিয়ানমার সীমানায় তিনটি যুদ্ধজাহাজ অবস্থান নিয়েছে। ফলে মিয়ানমারসংলগ্ন বাংলাদেশী সাগর এলাকায় সোমবার থেকে জেলেদের মাছ ধরা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের ইউনিয়ন পরিষদ, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর বরাত দিয়ে সোমবার দিনব্যাপী মাইকিং করা হয়েছে। সেন্টমার্টিনের ইউপি চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ জানিয়েছেন, সেন্টমার্টিনের দক্ষিণে মিয়ানমারের মেরুল্ল্যা ও হাইস সুরাতা এলাকায় আগুনের লেলিহান শিখা এপার থেকে দেখা যাচ্ছে। এর আগে সরকারের নির্দেশে রাতের বেলা নাফ নদীর বাংলাদেশী অংশে মাছ ধরা নিষিদ্ধ রয়েছে। এখন দিনের বেলাও মৎস্যজীবীদের মৎস্য আহরণ বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া টেকনাফ থেকে মিয়ানমারের সিটওয়ে বন্দর হয়ে সীমান্ত বাণিজ্যে অচলাবস্থা নেমে এসেছে। এছাড়া প্রতিবছর কোরবানির আগে মিয়ানমার থেকে যে গবাদিপশু আসত এবার তা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। পাশাপাশি টেকনাফ-মংডু-টেকনাফ তিনদিন ও ৮ দিনের ইমিগ্রেশন পাস নিয়ে দুই দেশের লোকজনের চলাচল গত অক্টোবরের ঘটনার পর থেকে বন্ধ থাকার পর তা এখন অনির্দিষ্টকালের জন্য গলিয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে টেকনাফ-মংডু-টেকনাফ সে দেশের সরকারের ইমিগ্রেশন বিভাগের অনুমোদনে তিনদিনের জন্য অবস্থান করা যেত। এছাড়া বিজিবির পাস নিয়ে প্রতিদিন ৮ ঘণ্টার জন্য টেকনাফ-মংডু জনচলাচল চলত উভয় পারের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের জন্য। এদিকে, মিয়ানমারে গুলিবিদ্ধ ও আগুনে পোড়া আরও ৮ রোহিঙ্গাকে রবিবার রাতে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর আগে দু’দিনে ভর্তি হয় ৫ জন। তন্মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার রাত ১১টার পর ভর্তি হওয়াদের মধ্যেÑ নুরুল হাকিম (২৬), পারভেজ (২০), মামুনুর রশিদ (২৭) সাকের (২৭), ছাদেক (২০), জাহেদ (২০), নুরুল আলম (১৫), নুরুল আমিনের (২০) নাম জানা গেছে। জখমপ্রাপ্ত চিকিৎসা নিয়েছে আরও ৬ জন। এছাড়া কক্সবাজার-টেকনাফ-উখিয়া-রামু অঞ্চলের বিভিন্ন হাসপাতাল ক্লিনিকে গুলিবিদ্ধ ও বিভিন্নভাবে জখম হওয়া রোহিঙ্গাদের চিকিৎসার জন্য লাইন পড়েছে। সোমবার সকাল ১০টার দিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের এপারে আবারও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গুলি এসে পড়েছে। ফলে ১০টার পরই সেখানকার সব স্কুল ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে সীমান্তের ওপার থেকে ছোড়া গুলি এপারে এসে পড়ার ঘটনায় রবিবার বিজিবিপ্রধান মেজন জেনারেল আবুল হোসেন সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করে ঘটনার প্রতিবাদ ও হুঁশিয়ারি জানিয়ে গেছেন। পাশাপাশি অবনতিশীল পরিস্থিতিতে ১৫ হাজার অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েনের যে ঘোষণা দিয়েছেন তা সোমবার থেকে কার্যকর শুরু হয়েছে। অতিরিক্ত বিজিবি মোতায়েনের এ প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে চলবে বলে সংস্থার দায়িত্বশীল সূত্রে জানানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার রাত থেকে রাখাইনে সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গা কিলিং অপারেশন অব্যাহত রয়েছে। সোমবার ভোর থেকে মংডুর দক্ষিণ-পূর্বে রাচিদংসংলগ্ন এলাকার ধুংচিপাড়ার চারটি রোহিঙ্গা গ্রামে একের পর এক মর্টার নিক্ষেপ করেছে। এতে আগুন ধরে পুড়ে গেছে ধুংচি ইউনিয়নের মংচিঘোনা, বড়পাড়া, পূর্বপাড়া ও কুয়েশ্চাং রোহিঙ্গা পল্লীগুলো। মংডু পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের আশপাশে রোহিঙ্গা পল্লীতে সরকারী বাহিনীর সহায়তায় অগ্নিসংযোগ করেছে রাখাইনরা। দাউ দাউ করে জ্বলছে রোহিঙ্গাদের বসতঘর। সকালে এ ঘটনা ঘটে। সেখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত জ্বলছে রোহিঙ্গাদের বসতবাড়ি। সূত্র জানিয়েছে, শত শত রাখাইন ও সৈন্য মিলে মংডুর বড় ফুটবল মাঠের উত্তর ও পূর্ব পাশের রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে প্রথমে আগুন দেয়। এর পর একেক করে সব গ্রামে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। এ সময় সাধারণ রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে দিগি¦দিক ছুটে পালালে সৈন্যরা বেপরোয়া গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে বেশকিছু রোহিঙ্গা ঝিলের মধ্যে ঢলে পড়েছে। রক্তে রঞ্জিত বুচিদং চৌপ্রাং রোহিঙ্গাদের রক্তে রঞ্জিত হয়ে উঠেছে বুচিদং থানার চৌপ্রাং ইউনিয়নাধীন বিভিন্ন গ্রাম। সোমবার দিনব্যাপী ওই এলাকায় হত্যালীলা চালিয়েছে সৈন্যরা। শিশু, নারী, বৃদ্ধ, যুবক কেউ বাদ পড়েনি সেনাদের হাত থেকে। যাকে যেখানে পেয়েছে সেখানে গুলি করেছে। বন্দুকের বাঁট দিয়ে মেরে থেঁতলে দিয়েছে অনেক রোহিঙ্গার মাথা ও মুখসহ পুরো শরীর। সোমবারও এহেন তা-বে লিপ্ত ছিল মিয়ানমারের সেনা, পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী। এ প্রক্রিয়ায় সেনাদের বুলেট বিদ্ধ হয়ে সোমবারও মারা গেছে অন্তত অর্ধশত রোহিঙ্গা। রক্ষা পায়নি মায়ের কোলে থাকা নিষ্পাপ শিশুরাও। একটি শিশুকে মায়ের কোল থেকে টেনে নিয়ে মায়ের সামনে পদদলিত করে নাড়িভুঁড়ি বের করে ফেলার ঘটনা ঘটিয়েছে সেনাসদস্যরা। এর আগে চৌপ্রাং এলাকায় সেনাগমন হচ্ছে জেনে রোহিঙ্গারা প্রাণপণে দিগি¦দিক ছুটে পালাতে থাকে। এ সময় খোলা বিলে ছুটতে থাকা রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে ব্রাশফায়ার করে সেনারা। এতে বহু রোহিঙ্গা বিলের মধ্যে আছড়ে পড়ে। সৈন্যরা রোহিঙ্গাদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালায়। বহু যুবতী ও নারী ইতোমধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলেও খবর আসছে। সীমান্তজুড়ে হাহাকার পরিবেশ প্রায় দশ কিলোমিটার পাহাড়ী পথ পাড়ি দিয়ে ২ মাস বয়সী কন্যাসন্তান নিয়ে সোমবার বাংলাদেশ সীমান্তে পৌঁছেছে রশিদা বেগম। ঘন জঙ্গলে হিংস্র প্রাণীর বিপদসঙ্কুল পরিবেশকে তোয়াক্কা না করে বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে ছুটে যায় সে। যাওয়ার সময় উঁচু-নিচু পাহাড়ে বার দু’য়েক গড়িয়ে পড়লেও হামাগুড়ি দিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। রশিদা জানায়, পাহাড়ের হিংস্র প্রাণীর চেয়ে বেশি হিংস্র প্রাণী হলো বর্মী মিলিটারি। তারা আমাদের লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু গুলি চালিয়েছে। যাকে যেখানে পাচ্ছেÑ সেখানে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাচ্ছে এবং গুলি করছে। নারী, পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধ কেউ বাদ যাচ্ছে না। যুবকদের পেলে তো কথাই নেই। আমার স্বামী বেঁচে আছে কি মরে গেছে তা জানি না। ওপারে শত শত নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও যুবক সীমান্তে খোলা আকাশের নিচে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে যুবকদের সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম। পরিধানের কাপড় ছাড়া অধিকাংশের কাছে কিছুই নেই। তবে কারও হাতে সুটকেস, বস্তা, থলে ও হাঁড়ি-পাতিল দেখা গেছে। এদের অনেকে শনি ও রবিবার পৌঁছেছে সীমান্তে। আবার অনেকে রয়েছে সীমান্তের পথে। সর্বশেষ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, প্রায় দশ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা সীমান্তের জিরো পয়েন্টে জড়ো হয়েছে। এরা ওপারে রয়েছে সেনা কর্ডনে। আর যারা সীমান্ত গলে বাংলাদেশ এলাকায় পৌঁছেছে তারাও রয়েছে বিজিবি কর্ডনে। খাদ্য, বাসস্থানের অভাবে এরা রয়েছে মানবেতর জীবন। দুর্গম পথ পাড়ি দেয়ায় অনাহারে থাকায় শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ছে আশ্রয় প্রার্থীরা। শিশুদের হাউমাউ কান্নায় ভারি হয়ে উঠছে মিয়ানমার সীমান্তের পরিবেশ। তবে যারা বাংলাদেশে কৌশলে ঢুকে পড়েছে, তাদের অনেককে খাদ্য ও চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে বিজিবি ও স্থানীয়রা। আরাকান রাজ্যের (রাখাইন স্টেট) বিরোধপূর্ণ মংডুসহ এলাকায় সীমান্তে সামরিক হেলিকপ্টার ও জাহাজ যাতায়াত করছে। রবিবার বিকেলে উত্তরাঞ্চলীয় এলাকায় হেলিকপ্টার এসে প্রত্যক্ষ করা ছাড়াও রোহিঙ্গা পল্লীতে বিস্ফোরক নিক্ষেপ করেছে। হেলিকপ্টারে এসে উর্ধতন কর্মকর্তার নির্দেশনা পেয়ে কপ্টারটি চলে যাওয়ার পর মিয়ানমার সেনারা নির্যাতন আরও বৃদ্ধি করেছে। সাগরেও মাছ ধরা বন্ধ নাফ নদীর বাংলাদেশী অংশে রাতের বেলা মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণার পর এবার সেন্টমার্টিন দ্বীপসংলগ্ন সাগর এলাকা মাছ ধরা স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর বরাত দিয়ে মাইকিং করে সাগরে মাছ ধরার ইঞ্জিন নৌকা ও ট্রলারগুলোকে সেখানে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকবে বলে মাইকে প্রচার চালানো হয়েছে দিনভর। ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ নুর আহমদ জানান, সেন্টমার্টিনের দক্ষিণে মিয়ানমারের মেরুল্লা ও হাইসসুরাতা এলাকায় ব্যাপক আগুনের লেলিহান শিখা দেখা গেছে। বঙ্গোপসাগরে দেখা গেছে মিয়ানমার নৌবাহিনীর ৩টি জাহাজ। এ কারণে কোন মাছ ধরা নৌকাকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সেন্টমার্টিনের দক্ষিণ ও পূর্বে না যেতে বলা হয়েছে। রাখাইনদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে আরাকানের রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান দমন-নিপীড়ন ও গুলিবর্ষণের ঘটনার চেয়ে আরও বড় ধরনের হত্যাযজ্ঞ চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সেখানকার সেনাবাহিনী। এ খবর জানা গেছে, মুঠোফোনে সেখানকার বিভিন্ন সূত্রে। রাখাইন রাজ্য থেকে এ কারণে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে সেখানকার নাগরিকদের। রাখাইন গ্রাম থেকে এ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ সহস্রাধিক নারী-পুরুষকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। গত শনিবার রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে একদিনে চার সহস্রাধিক নাগরিককে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়। রবি-সোমবারও সরিয়ে নেয়া হয়েছে অনেককে। স্থানীয়দের পক্ষ থেকে ধারণা দেয়া হয়েছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে আরও বড় ধরনের কোন হত্যা ও নিধনযজ্ঞের প্রস্তুতি নিচ্ছে মিয়ানমার সরকার। কারণ শুধু সে দেশের নাগরিকদের সরিয়ে নেয়ার দৃশ্য লক্ষণীয় হওয়ায় ধারণা জন্মেছে। বড় ধরনের আরও সশস্ত্র অভিযান আসন্ন। সহস্রাধিক রোহিঙ্গার মৃত্যু গত ২৪ আগস্ট রাতে সেনাদের কিলিং অপারেশনের প্রস্তুতির সময় রোহিঙ্গা স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনকারীরা বাধা প্রয়োগ করলে, প্রশাসন ক্ষিপ্ত হয়ে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বরতা শুরু করে। গত তিনদিনে মংডু, বুচিদং ও রাচিদং- এলাকার সহস্রাধিক রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। আহত হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে পাঁচ হাজারেরও বেশি। এছাড়া উদ্বাস্তু হয়ে পাহাড়-পর্বত ও বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থান করছে প্রায় ২০ সহস্রাধিক। সেখানে একের পর এক রোহিঙ্গা গ্রামে অগ্নিসংযোগ করে জ্বালিয়ে দেয়া অব্যাহত রয়েছে। মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুও হানাদার বাহিনীর নৃশংসতা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। সোমবার সকাল ৮টায় সেনাবাহিনী কামানবাহী ট্যাঙ্কার থেকে গোলা নিক্ষেপ করতে করতে ক্রমশই রোহিঙ্গা পল্লীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, সীমান্তে জড়ো হওয়া রোহিঙ্গারা পুনরায় ফিরে যাওয়ার সাহস করতে না পারে। সীমান্তে রোহিঙ্গা বস্তি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা হাজার হাজার রোহিঙ্গা জড়ো হয়েছে কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্তের জিরো পয়েন্টগুলোতে। তাদের আটকাতে কড়া পাহারা রেখেছে বিজিবি সদস্যরা। সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে ব্যর্থ হয়ে সেখানেই ঝুপড়িঘর বানিয়ে অপেক্ষা করছে অধিকাংশ রোহিঙ্গা। তবে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন সোমবার আবারও জানিয়েছেন, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করা হলেও, সহজে কাউকে বাংলাদেশ ভূখ-ের ভেতরে ঢুকতে না দেয়ার জন্য সব ধরনের সতর্কাবস্থা বলবত করা হয়েছে। পার্বত্য বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্তের জিরো পয়েন্টে হাজার হাজার রোহিঙ্গারা দু’দিন ধরে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আছে। রাখাইন রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান ও সহিংসতা শুরুর পর থেকে পালিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে আসতে থাকে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুরা। কাঁটাতারের বেড়া বন জলকাদা পেরিয়ে প্রাণ বাঁচাতে তারা খুঁজছে নিরাপদ আশ্রয়। সীমান্ত পার হয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অনেকেই জানিয়েছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যাকে যেখানে পাচ্ছে সেখানেই গুলি করছে। বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিবি অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে। সীমান্তে পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে না পেরে জিরো পয়েন্টেই অপেক্ষা করছে মিয়ানমারের এসব রোহিঙ্গা। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তের জিরো পয়েন্টে অস্থায়ী বস্তি (ঝুপড়ি) স্থাপন করে আশ্রয় নিয়েছে আনুমানিক ২০ সহস্রাধিক রোহিঙ্গা। শনিবার থেকে সোমবার তিনদিনে ওই রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করতে সীমান্তের জিরো লাইনে আসে। মিয়ানমারের ঢেকিবুনিয়ার বাসিন্দা রোহিঙ্গা আবুল কালাম, আবুল শামা, মিয়ার পাড়ার শাহ আলম, ফকিরাপাড়ার নুরুল বশর ও চাকমা কাটার নুরুল আলম জানায়, রাখাইন রাজ্যে সেনা ও রাখাইনদের নির্যাতনের কারণে ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার জন্য পৃথক পৃথকভাবে আসা অন্তত ২০ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা অস্থায়ী ঝুপড়ি স্থাপন করে অবস্থান করছে। ঘুমধুম জলপাইতলি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে অভ্যন্তরে চলে আসা রোহিঙ্গা আলী জোহার (৫৫) বলেন, শনিবার দুপুরে অতর্কিতভাবে তাদের বাড়িঘর লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে স্ত্রী সনজিদা, পুত্র মোঃ হাসেম, মোঃ খান, মেয়ে নুর কায়েদা, ছৈয়দ আলম বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসে। রোহিঙ্গা লোকমান হাকিম ও তার ভাই নোমান বলেন, তারা স্ত্রী, ছেলে জায়গা-জমি, গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি ফেলে জীবন বাঁচাতে চলে এসেছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে বিজিবির হাতে আটক অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয় গ্রামবাসীর সহযোগিতায় রাতে এবং সকালে খিচুড়ি ও গুড়, চিড়া, মুড়ি সরবরাহ করা হয় অসহায় এসব রোহিঙ্গাদের। তুমব্রু বিজিবি ক্যাম্পের সুবেদার হাকিম জানান, উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সীমান্তে কড়া নজরদারি রয়েছে। যেন একজন রোহিঙ্গাও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে। তবে চোরাইপথে কিছু রোহিঙ্গা বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্পে অবস্থান নিয়েছে। সহস্রাধিক রোহিঙ্গা পুশব্যাক টেকনাফে সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশকালে ১৪১ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে পুশব্যাক করেছে বিজিবি ও পুলিশ। রবিবার ভোর রাত হতে সোমবার ভোর রাত পর্যন্ত সময়ে হোয়াইক্যং ও উনছিপ্রাং সীমান্ত এলাকা থেকে এসব রোহিঙ্গাদের আটক করা হয়। এর আগে টেকনাফ সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ১৪৬, ৭১ ও ১৪৫ জনসহ সহস্রাধিক রোহিঙ্গাকে পুশব্যাক করেছে টেকনাফ বিজিবি সদস্যরা। কঠোর বিজিবি বিজিবি কক্সবাজারের সেক্টর কমান্ডার লে. কর্নেল আনোয়ারুল আজিম সোমবার জানিয়েছেন, ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে কিছু সমস্যা হওয়ায় কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা সীমান্তে জড়ো হয়েছে। কিন্তু কাউকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়া হয়নি। সীমান্তে বিজিবির আরও জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং সার্বক্ষণিক সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য, আরাকান একটি সমৃদ্ধ জনপদ। ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিকভাবে আরাকান একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ও রোহিঙ্গা স্বাধীন অধিবাসী ছিল। ১৭৮৪ সালে বর্মীরাজ বোধাপায়ার আরাকান দখলের বহু আগে থেকেই রোহিঙ্গারা সেখানে বংশ পরম্পরায় বসবাস করে আসলেও বার্মা সরকার তাদের বাঙালী আখ্যা দিয়ে গণহত্যা চালাচ্ছে। বর্তমান রোহিঙ্গা ইস্যুটি ৭০ বছর ধরে চলে আসা সুপরিকল্পিত রোহিঙ্গা গণহত্যার চূড়ান্ত পর্ব ও ক্ষুদ্র এ জাতি গোষ্ঠীর সদস্যদের নিধনে সে দেশের সরকারের ঘৃণিত ফর্মুলার অংশ। বর্তমান পরিস্থিতি পুলিশ ক্যাম্পে হামলার প্রতিক্রিয়া নয় বরং সেটি একটি উপলক্ষ মাত্র। ১৯৬২ সালে সামরিক আইন জারির পথ রোহিঙ্গা নির্যাতন, ১৯৮২ বিতর্কিত নাগরিক আইন পাশ হচ্ছেÑরোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার কেড়ে নেয়া, সর্বশেষ ২০১৫ সালের নির্বাচনে রোহিঙ্গাদের ভোটাধিকার হরণ এই পরিকল্পনার অংশ। রোহিঙ্গারাই একমাত্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী, যারা পর্বতসম নির্যাতন ভোগ করেও গণতান্ত্রিক সরকারের অপেক্ষায় ছিলেন। দুর্ভাগ্যক্রমে সেই বহু কাক্সিক্ষত গণতান্ত্রিক সরকারের অধীনে গণহত্যার চূড়ান্ত পর্ব শুরু করেছে। অন্যদিকে অন্যান্য নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী তথা শান, কেয়াং কারেনসহ অন্যরা বহু আগেই অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে। গত শুক্রবার থেকে রাখাইন ফের রোহিঙ্গাদের গণহত্যা শুরু করেছে সে দেশের মিয়ানমার সরকার। সোমবার নাফ নদীতে এক শিশুর নিথর দেহ ভাসতে দেখা গেছে। রাখাইন রাজ্যে চলমান এ ঘটনায় সর্বত্র প্রশ্ন উঠেছে বিশ্বমানবতা আজ কোথায়? রাখাইন রাজ্যে মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে? এ হত্যাযজ্ঞের শেষ কোথায়? রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে জন্য চরম ‘মাথা ব্যথা’র কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশের অবস্থান করার পরও নতুন আরও রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের প্রবেশের চেষ্টা করছে। মিয়ানমারের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার জের রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে দিকে ধেয়ে আসছে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ঠেকাতে কঠোর হলেও তাতে স্বস্তি মিলছে না। দেশে অবস্থান করা বিপুল রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ ও নতুন করে ধেয়ে আসা রোহিঙ্গাদের স্রোত ঠেকাতে পুরো প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই ইস্যু নিয়ে মাথা ঘামাতে গিয়ে কক্সবাজারে প্রশাসনের সামগ্রিক কর্মকা-ে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। একই সঙ্গে কক্সবাজারের অর্থনৈতিকসহ পুরো সামাজিক পরিবেশে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাওয়ায় বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনসহ স্থানীয় লোকজনকে ভাবিয়ে তুলছে। সূত্র মতে, আশির দশক থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটছে। সেই থেকে মিয়নামারে জাতিগত সহিংসতাকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েক দফায় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এছাড়াও বিচ্ছিন্নভাবেও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ হয়ে আসছে। সব মিলে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গার সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। বছরের পর বছর এ দেশে জনগোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা বেড়ে ১২ লাখ পেরিয়েছে। বিভিন্ন সূত্রের দাবি মতে, উখিয়ার বালুখালী, পালংখালী, উলুবনিয়া ও টেকনাফের হোয়াইক্যং, লম্ববিল, উনছিপ্রাং, ঝিমংখালী, খারাংখালী, হ্নীলার পুলের ডেইল, রঙ্গীখালী ও চৌধুরীপাড়া সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে কৌশলে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশ করছে। শুক্রবার বিকেলে নাফ নদী পাড়ি দেয়া প্রায় ৫ হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে বিজিবি ঠেকাতে পারলেও রাতের বেলা তারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। তারা টেকনাফের নয়াপাড়া, লেদা, উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী শরণার্থী ক্যাম্পেগুলোতে অবস্থান করছে বলে জানা গেছে। প্রশাসনের বিভিন্ন সূত্র মতে, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কক্সবাজারের পুরো প্রশাসনের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। স্থানীয় প্রশাসন থেকে জেলা প্রশাসন পর্যন্ত দৌড়ের ওপর রয়েছে। একই সঙ্গে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এই নিয়ে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, ধেয়ে আসা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে উখিয়া, টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে বিজিবি কড়া পাহারা বসিয়েছে। এ জন্য বিজিবির বিপুল সংখ্যক অতিরিক্ত সদস্য নিযুক্ত করা হয়েছে। তারা রাতদিনে সমান কড়াভাবে সীমান্ত পাহারায় রেখেছে। এর মধ্যে বালুখালী, পালংখালী, উলুবনিয়া ও টেকনাফের হোয়াইক্যং, লম্ববিল, উনছিপ্রাং, ঝিমংখালী, খারাংখালী, হ্নীলার পুলের ডেইল, রঙ্গীখালী ও চৌধুরীপাড়া সীমান্ত পয়েন্ট বিশেষ পাহারায় রাখা হয়েছে। অন্যান্য পয়েন্টগুলোতেও বিশেষ পাহারা বসানো হয়েছে। বিজিবির সঙ্গে কোস্টগার্ডের সদস্যরা জলসীমানা পাহারা দিচ্ছে। কোস্টগার্ডও দু’শতাধিক রোহিঙ্গাকে আটক করে ফিরিয়ে দিয়েছে। বিজিবি, কোস্টগার্ড ছাড়াও লোকালয়ে পুলিশী পাহারা বসানো হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে এখন পুরো প্রশাসন ব্যস্ত। জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, স্থানীয় পর্যায়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ওসি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দৌড়ের ওপর রয়েছেন। জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনকে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই নির্দেশ অনুসারে জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন সার্বক্ষণিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। ইতোমধ্যে দফায় দফায় জেলা প্রশাসনের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে সংশিষ্ট সকল সংস্থার সদস্যকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশরোধে সর্বোচ্চ সতর্ক ও কঠোর থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একইভাবে বিজিবির কক্সবাজার সেক্টর কমান্ডার, কক্সবাজার বিজিবি, টেকনাফ বিজিবি ও নাইক্ষ্যংছড়ি বিজিবির অধিনায়করাও দিনরাত কাজ করে চলেছেন। সীমান্ত এলাকার প্রতিমুহূর্তের খবর সরকারের উচ্চ পর্যায়ে অবহিত করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা নিপীড়ন বন্ধের দাবি সাংবাদিক মঞ্চের মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দমন-নিপীড়নের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী সাংবাদিক মঞ্চ। সোমবার মঞ্চের পক্ষে এক যৌথ বিবৃতিতে ঢাকার অর্ধশতাধিক সাংবাদিক এ নিন্দা জ্ঞাপন ও অবিলম্বে নিপীড়ন বন্ধের দাবি জানান। মিয়ানমার বাহিনীর বর্বরতায় রক্তাক্ত হয়ে প্রাণ বাঁচাতে মিয়ানমার ছেড়ে আসা শরণার্থীদের সাময়িক আশ্রয় প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং রাখাইন রাজ্যে মুসলিম নিপীড়ন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জাতিসংঘসহ বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান সাংবাদিকরা। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন উইউজের জিএস সোহেল হায়দার চৌধুরী ও সাবেক জিএস কুদ্দুস আফ্রাদ এবং গাজী টিভির রাজু আহমেদ ও দৈনিক কালের কণ্ঠের আজিজুল পারভেজ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু, দৈনিক জনকণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি তপন বিশ্বাস, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ফিরোজ মান্না, বিভাষ বাড়ৈ, রাজন ভট্টাচার্য, রশীদ মামুন, নিখিল মানখিন, তৌহিদুর রহমান ও অপূর্ব কুমার ও প্রতিবেদক আরাফাত মুন্না প্রমুখ।
×