ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অপরিকল্পিত নগরায়ন ॥ থাবা পড়ছে ফসলি জমির ওপর

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ৩০ জুলাই ২০১৭

অপরিকল্পিত নগরায়ন ॥ থাবা পড়ছে ফসলি জমির ওপর

সমুদ্র হক ॥ অপরিকল্পিতভাবে নগরায়নের থাবা পড়েছে ফসলি জমির ওপর। কমে যাচ্ছে আবাদি বা ফসলি জমি। বগুড়ায় এ অবস্থা আশঙ্কাজনক। গত বারো বছরে বগুড়ায় আবাদি জমি কমেছে প্রায় ৩৭ হাজার হেক্টর। এ পরিমাণ জমি থেকে উৎপাদন কমেছে আড়াই লাখ টনেরও বেশি। বগুড়া উত্তরাঞ্চলের মধ্যবর্তী নগরী হওয়ায় এ এলাকার জমির দাম অনেক বেশি। জমির দাম দিন দিন জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। চাকরি বা নানা কারণে যারা ঢাকা ও বাইরের জেলা থেকে বগুড়ায় আসেন তাদের বড় একটি অংশই শেষ পর্যন্ত বগুড়ার অধিবাসী হয়ে যান। প্রথমে তারা ভাড়া বাড়িতে থাকেন। তারপর বসতবাড়ি গড়ার জন্য জায়গা কেনেন। একপর্যায়ে বাড়ি নির্মাণ করনে। কেউ ইনস্টলমেন্টে ফ্ল্যাট বাড়ি কেনেন। বগুড়া নগরীতে হালে ডেভেলপারের সংখ্যা বেড়ে গেছে, যারা নগরীর ভেতরে বিভিন্ন পাড়া ও মহল্লা ছাড়াও শহরতলী এলাকা এবং পৌর এলাকার বাইরে জমি কিনে বহুতল ফ্ল্যাট বাড়ি নির্মাণ করছেন। ডেভেলপাররা যাদের জায়গা কিনে ফ্ল্যাট বানাচ্ছেন তাদের সঙ্গে চুক্তি থাকে। বহুতল ভবনের কয়েকটি ফ্লাট ভূমির মালিকের জন্য বরাদ্দ করা হয়। একই সঙ্গে নগরীর আশপাশে বসতবাড়ি, সরকারী ও বেসরকারী ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ নানা ধরনের স্থাপনা নির্মিত হচ্ছে। এর পাশাপাশি পরিবারগুলো ভেঙ্গে খ-িত হওয়ায় অর্থাৎ নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি বেড়ে যাওয়ায় অধিক মানুষের বাসস্থান গড়তে ব্যবহার হচ্ছে ফসলি জমি। এভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে নগরায়ন প্রক্রিয়া। বগুড়া নগরীর কাছাকাছি স্বল্প দূরত্বের উপজেলাগুলোতে একই ভাবে আবাদি জমিতে ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারী-বেসরকারী স্থাপনা গড়ে উঠছে। বিশেষ করে পূর্বের গাবতলী, পশ্চিমের কাহালু, দক্ষিণের শাজাহানপুর ও শেরপুর উপজেলায় এ প্রবণতা বেশি। এ চার উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটাই ভাল যে, লোকজন পনেরো মিনিট থেকে আধা ঘণ্টার মধ্যে যান্ত্রিক যানবাহনে (বাস, মিনিবাস, সিএনজিচালিত অটোরিক্সা) বগুড়া নগরীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। যাদের নিজস্ব গাড়ি আছে তারা নগরীর উপকণ্ঠে বসবাসের আমেজ পান। দিন দিন বগুড়া নগরীও উন্নতমানের নগরীতে পরিণত হচ্ছে। রাজধানী ঢাকার মতো শপিংমল, কেন্দ্রীয়ভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসহ বহুতল শপিং কমপ্লেক্স, বড় কোম্পানি ও বহুজাতিক কোম্পানির কাস্টমার কেয়ার সেন্টার, অত্যাধুনিক মার্কেট, ফোরস্টার মর্যাদার হোটেলসহ উন্নত অবকাঠামো গড়ে উঠছে। সর্বোপরি বগুড়ার মহাস্থানগড় দেশের সবচেয়ে প্রাচীন নগরী হওয়ায় বগুড়া পর্যটক নগরীতে পরিণত হয়েছে। বেশিরভাগ উন্নত স্থাপনা গড়ে উঠছে আবাদি জমির ওপর, যে কারণে আবাদি জমি বিক্রির হারও বেড়ে গেছে। এক সূত্র জানায়, এক যুগ আগে বগুড়ায় আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার হেক্টর। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার হেক্টরে। এর বাইরে যে ৪৫ হাজার হেক্টর অনাবাদি জমি ও ভিটা ছিল সেখানেও স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। বগুড়ায় যে আবাদি জমির ওপর স্থাপনা নির্মিত হয়েছে এ জমি ছিল তিন ফসলি। প্রতি মৌসুমেই কোন না আবাদ হতো। কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, আবাদি ভূমি কমেছে ঠিকই, তবে উৎপাদনের ওপর তেমন প্রভাব পড়বে না। বর্তমানে কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে এবং সব ফসলের উচ্চ ফলনশীল জাত আসায় কম জমিতে অধিক পরিমাণ ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। বর্তমানে বগুড়ায় খাদ্যশস্য উদ্বৃত্তের পরিমাণ প্রায় ৬ লাখ টন। গত বছর থেকে খাদ্য রফতানি শুরু হয়েছে।
×