ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাহফুজকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ঢাকায় ভারতীয় তদন্ত দল

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৬ জুলাই ২০১৭

মাহফুজকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ঢাকায় ভারতীয় তদন্ত দল

গাফফার খান চৌধুরী ॥ গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলায় অস্ত্র গোলাবারুদ সরবরাহকারী জঙ্গী নেতা হাতকাটা মাহফুজকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ৩ সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের ভারতীয় তদন্তকারী দল বাংলাদেশে এসেছেন। তারা ভারতের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে জেএমবির আস্তানা স্থাপন, আস্তানায় গ্রেনেড তৈরির সময় বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা, ভারতে জেএমবির কার্যক্রম, জঙ্গী অর্থায়ন, সদস্য সংখ্যা, আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগসহ নানা বিষয়ে মাহফুজকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। মাহফুজ বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনায় ভারতের মোস্টওয়ান্টড। তাকে জীবিত অথবা মৃত ধরিয়ে দিতে ১০ লাখ রুপী পুরস্কার ঘোষণা করেছে ভারত সরকার। পুরস্কারের অর্থ স্বল্প সময়ের মধ্যেই ভারত সরকার বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করছে। এদিকে রিমান্ডে থাকা মাহফুজকে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষিত বহুল আলোচিত মেজর জিয়া সম্পর্কে কড়া জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও কোন তথ্য মেলেনি। তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জভিত্তিক জঙ্গী কর্মকা-, জঙ্গী নেতা ও বেশ কিছু সদস্য সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে মাহফুজ। সেই তথ্য মোতাবেক চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাড়াও সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে ধারাবাহিক সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ সদর দফতরের একটি উচ্চপর্যায়ের সূত্রে জানা গেছে, শনিবার ভারতীয় প্রতিনিধি দলটি ঢাকায় এসে পৌঁছান। প্রতিনিধি দলের সবাই ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) সদস্য। তারা এনআইএয়ের জঙ্গীবাদ সম্পর্কে কাজ করেন। আসার পরপরই তারা পুলিশ সদর দফতরের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক করেন। বৈঠকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। ভারতীয় প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশে আসার খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন পুলিশ সদর দফতরের গোপনীয় শাখার সহকারী মহাপুলিশ পরিদর্শক (এআইজি) মোঃ মনিরুজ্জামান। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তাদের বেশ কয়েক দফায় বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে প্রতিনিধি দল হাতকাটা মাহফুজের জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছেন। দলটি মূলত ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমানের খাগড়াগড়ে জেএমবির আস্তানা গড়ে তোলা, ভারত ও বাংলাদেশে জেএমবির বা অন্য কোন জঙ্গী সংগঠনের তৎপরতা, জঙ্গীদের আর্থিক, প্রযুক্তিগত ও অস্ত্র গোলাবারুদের সক্ষমতা, বিস্ফোরক ও অস্ত্র গোলাবারুদের যোগান, ভারতীয় বা বাংলাদেশী বা অন্য কোন বিদেশী জঙ্গী সংগঠন বা সামাজিক বা রাজনৈতিক সংগঠন বা বিশেষ কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সঙ্গে কি ধরনের যোগাযোগ, ভারত ও বাংলাদেশে নব্য জেএমবি বা জেএমবি বা অন্য কোন দেশের জঙ্গী সংগঠনগুলোর কি পরিমাণ সদস্য রয়েছে, তাদের কি ধরনের সক্ষমতা রয়েছে, তাদের নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি, মদদদাতা, জঙ্গী নেটওয়ার্ক তৈরির নেপথ্য কারণ, জালমুদ্রার ব্যবসা, ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী বা জঙ্গীদের কি পরিমাণ সংগঠনের সঙ্গে কি পরিমাণ ভারতীয়, বাংলাদেশী বা অন্য কোন দেশের জঙ্গী সংগঠন বা রাজনৈতিক সংগঠন বা কোন বিশেষ ব্যক্তি পর্যায়ের কি ধরনের যোগাযোগ রয়েছে তা জানতে চায় প্রতিনিধি দলটি। এ ব্যাপারে তারা জঙ্গী নেতা মাহফুজকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। তবে দলটি কত দিন জিজ্ঞাসাবাদ করবে বা কতদিন বাংলাদেশে থাকবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। প্রতিনিধি দলটি তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়ার পরেই দেশে ফিরে যাবেন। স্বল্প সময়ের মধ্যেই প্রতিনিধি দলটি দেশে ফিরে যাবেন বলে জানিয়েছেন। মাহফুজ ভারতের মোস্টওয়ান্টেড জঙ্গী। তাকে ধরিয়ে দিতে ভারত সরকার ১০ লাখ রুপী পুরস্কার ঘোষণা করেছে। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের খাগড়াগড়ে জেএমবির একটি বোমা তৈরির কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের হতাহতের ঘটনা ঘটে। ওই সময় দুই নারীকে গ্রেফতার করে ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এআইজি মনিরুজ্জামান জনকণ্ঠকে জানান, পুরস্কারের অর্থের বিষয়ে প্রতিনিধি দল খোলামেলা আলোচনা করেছেন। তারা দ্রুত পুরস্কারের অর্থ বাংলাদেশ সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে চায়। স্বল্প সময়ের মধ্যেই পুরস্কারের অর্থ ভারত সরকার বাংলাদেশকে দিচ্ছে। বাংলাদেশ পুলিশ যেহেতু মাহফুজকে গ্রেফতার করেছে, এ জন্য ভারতীয় প্রতিনিধি দলটি পুরস্কারের অর্থ বাংলাদেশ সরকার চাইলে সরাসরি পুলিশকে দিতেও আগ্রহী। পুলিশ সদর দফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে জানান, ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ ও ভারতীয় জঙ্গী সংগঠন ও বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোর ওপর কাজ করছে। এমনকি পার্শ্ববর্তী একটি মুসলিম দেশের জঙ্গী সংগঠনগুলোর ওপর কাজ করছেন। তার একটি ফিরিস্তিও তারা তৈরি করেছেন।
×