ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ছয় বিতরণ সংস্থার চারটিই লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করতে পারেনি

বিদ্যুতের বকেয়া বিল সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১ জুন ২০১৭

বিদ্যুতের বকেয়া বিল সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

রশিদ মামুন ॥ বিদ্যুত বিলের বকেয়া আদায়ে ছয় বিতরণ সংস্থার চারটিই লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করতে পারেনি। গ্রাহকের কাছে বকেয়া পড়ে আছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। বিতরণ কোম্পানিগুলোর তরফ থেকে বিদ্যুত বিভাগকে জানানো হয়েছে, বকেয়া আদায়ের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যদিও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হওয়ায় বিতরণ কোম্পানির সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বেসরকারী বিলের তুলনায় সরকারী বিভিন্ন সংস্থা এবং দফতর বিদ্যুত বিল নিয়ে বেশি ভোগাচ্ছে বলে বিতরণ কোম্পানির প্রতিনিধিরা জানান, সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বারবার দিলেও বিদ্যুত বিল পরিশোধ করতে চায় না। ইচ্ছা করলেই এসব প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুত সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা যায় না। সরকারী বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে বিদ্যুত বিল আদায়ে ব্যর্থ হয়ে সরাসারি মন্ত্রণালয়ের দারস্থ হয় কোম্পানিগুলো। বিদ্যুত বিভাগ এ নিয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার আয়োজন করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং দফতরের বাজেট বরাদ্দ থেকে সরাসারি বকেয়া বিদ্যুত বিল দিয়ে দেয়ার অনুরোধ করলেও তাতে খুব একটা কাজ হয়নি। সরকারী বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে বিদ্যুত বিল কিভাবে আদায় করা যায় এ বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একটি প্রতিবেদন দেয়ার জন্য চলতি সপ্তাহে পাওয়ারসেলকে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি বিদ্যুত বিভাগে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বিতরণ কোম্পানিগুলো বিদ্যুত বিল আদায়ে অপারগতা প্রকাশ করার প্রেক্ষিতে এ নির্দেশ দেয়া হয়। জানতে চাইলে পাওয়ারসেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন জনকণ্ঠকে বলেন, সরকারী বিদ্যুত বিল আদায়ের জন্য একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করা হয়েছে। এতে মন্ত্রণালয়গুলোকে অনুরোধ করা হয়েছে যেন বিদ্যুত বিল প্রদানে তারা হস্তক্ষেপ করে। আমরা আশা করি এ জটিলতা নিরসন হবে। বিদ্যুত বিভাগে সবশেষ বিতরণ কোম্পানিগুলো যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে দেখা যায়, বিতরণ কোম্পানিগুলোর মোট বকেয়ার পরিমাণ ৫ হাজার ৩৫৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা। এ বকেয়া আদায়ে বিদ্যুত বিভাগ যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছিল তা ঢাকার দুই বিতরণ কোম্পানি ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) এবং ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) ছাড়া আর কোন কোম্পানি অর্জন করতে পারেনি। দুই বিতরণ কোম্পানির মধ্যে ডেসকোর বকেয়া রয়েছে ৪৩৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা। কোম্পানিটিকে সর্বোচ্চ এক দশমিক ৮০ মাসের সমপরিমাণ বিদ্যুত বিল বকেয়া রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়। কোম্পানিটি তাদের বেঁধে দেয়া সীমার মধ্যেই বকেয়া রেখেছে। তাদের বকেয়া মোট আদায় হওয়া বিদ্যুত বিলের এক দশমিক ৪৯ মাসের সমান। একইভাবে ডিপিডিসির বকেয়ার পরিমাণ ৮৯৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা। কোম্পানির বেঁধে দেয়া সীমা ছিল দুই মাসের বকেয়া বিদ্যুত বিলের সমপরিমাণ। কিন্তু কোম্পানিটি ১ দশমিক ৯৫ মাসের সমপরিমাণ বিল বকেয়া রেখে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের তালিকায় প্রবেশ করেছে। এর বাইরে আর চার বিতরণ কোম্পানির কোনটিই বিদ্যুত বিল আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। তবে বকেয়া বিদ্যুত বিল আদায়ে বরাবরের মতোই খারাপ অবস্থায় রয়েছে পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (পিডিবি)। প্রতিষ্ঠানটির এক হাজার ৩২০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা গ্রাহকের কাছে পড়ে আছে। এ পরিমাণ অর্থ তাদের মোট বিদ্যুত বিলের ২ দশমিক ৬৯ মাসের সমান। বিডিবিকে ২ দশমিক ২৫ মাসের বিদ্যুত বিলকে লক্ষ্য ধরে দেয়া হয়েছিল। পিডিবির আওতা থেকে বের হয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলে নবগঠিত কোম্পানি নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (নওজোপাডিকো) অবস্থা আরও খারাপ। স্বাভাবিকভাবে পিডিবির সব দায়ও এখন এ কোম্পানিকে বহন করতে হচ্ছে। কোম্পানিটিকে আড়াই মাসের সমপরিমাণ লক্ষ্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়। কিন্তু তারা অর্জন করেছে তিন দশমিক ৮৯ মাসের সমপরিমাণ। টাকার অঙ্কে তাদের বকেয়ার পরিমাণ ৫৩৫ কোটি ১১ টাকা।
×