ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আজ সংসদে পেশ হবে;###;৬০ লাখ মানুষকে আনা হচ্ছে নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে;###;বাড়ছে করমুক্ত আয়ের সীমা;###;থাকতে পারে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ

আসছে মেগা বাজেট

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১ জুন ২০১৭

আসছে মেগা বাজেট

কাওসার রহমান ॥ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বিশাল ব্যয়ের এক বড় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন। এই বাজেটেই অর্থমন্ত্রী ভোক্তাস্বার্থ বিরোধী ‘মানি মেশিন’ খ্যাত নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছেন। ভ্যাটের পাশাপাশি আবগারি শুল্ক ও উৎসে করের খ—গও বসছে সাধারণ মানুষের ওপর। আমানতের সুদ হার কমে গিয়ে একেবারেই তলানিতে। ফলে আমানতকারীরা সঞ্চয়পত্রের ওপর ভরসা করে দুই পয়সা পাচ্ছিলেন। সঞ্চয়পত্রের সেই সুদেও কাঁচি চালাতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। আবার ব্যাংকেও যারা নিম্ন সুদের যুগে কষ্ট করে টাকা সঞ্চয় করে রেখেছেন, সেখানে আবগারি শুল্ক দ্বিগুণ করা হচ্ছে। অর্থাৎ লাখ টাকার ওপর আমানতে আবগারি শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা করা হচ্ছে। আর ৬২ খাতে বাধ্যতামূলকভাবে ৫ শতাংশ হারে উৎসে কর বসছে। ফলে আমদানিকারক, উৎপাদন ও ভোক্তা সর্বক্ষেত্রেই বাড়বে করের বোঝা। নির্বাচনের বছরে ভোটার নাখোশকারী এমন সব অপ্রিয় পদক্ষেপ আসছে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের নতুন বাজেটে। নির্বাচন ২০১৮ সালের শেষদিকে, অথবা ২০১৯ সালের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিত একদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ফলে নির্বাচনের বছরে ভোটার তুষ্টির পরিবর্তে এক বছর পিছিয়ে ভ্যাটের মতো অপ্রিয় একটি আইন কেন বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছেন তা সরকারের নীতি নির্ধারক মহলই ভাল বলতে পারবেন। এবারের বাজেটে থাকছে না নতুন কোন চমক। তবে চমক না থাকলেও বাজেটে থাকছে বড় বড় সব লক্ষ্য। এই বাজেট আকারের দিক দিয়ে যেমন বড় হচ্ছে, তেমনি রাজস্ব আয়েও বড় ধরনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাজেট ঘাটতি নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করতে যাচ্ছে। এই প্রথম বাজেট ঘাটতি লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। প্রায় ৪ লাখ ২৭০ কোটি টাকার এই বিশাল ব্যয়ের এ বাজেটে ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে এক লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকা। যা জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। চলতি বাজেটে যা ছিল ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ। বর্তমানে ১০ মেগা প্রকল্পসহ সহস্রাধিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশ উন্নয়নের মহাসড়ক পথে এগিয়ে চলছে। সেই এগিয়ে চলাকে আরও গতিময় করতেই নানা প্রয়াস নেয়া হচ্ছে আগামী অর্থবছরের বাজেটে। সেই সঙ্গে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি, স্বাস্থ্য, বিদ্যুত, কৃষি, জ্বালানি, ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগের গতি সঞ্চারের মাধ্যমে আগামী বাজেট জনকল্যাণমুখী করার চেষ্টা চালানো হয়েছে। সে লক্ষ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ‘উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের’ শীর্ষক বাজেট পেশ করতে যাচ্ছেন আজ। এবারের বাজেটে অগ্রাধিকার খাতে থাকছে সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি। সবার জন্য সামাজিক সুরক্ষা-২০২২ বাস্তবায়নে আগামী বাজেটে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। দারিদ্র্যবিমোচন কর্মসূচীকে আরও গতিশীল করা হচ্ছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে প্রায় ৬০ লাখ মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ভাতাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়া হবে। বাড়ানো হতে পারে বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী, হিজড়া, বেদে, দরিদ্র মা ও কর্মজীবী মায়ের মাসিক ভাতার পরিমাণ। ৫০০ টাকা বাড়ানো হতে পারে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের বছরে দুটি উৎসব ভাতা দেয়ার ঘোষণাও আসতে পারে। প্রস্তাবিত নতুন বাজেটের বৈশিষ্ট হচ্ছেÑ দীর্ঘ ২৫ বছর পর নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আইন কার্যকর, সর্বক্ষেত্রে ৫ শতাংশ উৎসে কর বাধ্যতামূলক, ব্যাংক আমানতের ওপর আরোপিত আবগারি শুল্ক দ্বিগুণ, করমুক্ত আয়ের সীমা বৃদ্ধি, রফতানি উন্নয়নে তহবিল গঠন, ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খলা রোধে ব্যাংকিং কমিশন গঠন, ব্যাংকের আমানতের ওপর আরোপিত আবগারি শুল্ক দ্বিগুণ, বিমানের টিকেটের ওপর আবগারি শুল্ক আরোপ, মুক্তিযোদ্ধাদের বৈশাখী ভাতা প্রদান, প্রবৃদ্ধি ৭.২ শতাংশ, জমি রেজিস্ট্রেশনের সর্বনিম্ন মূল্য প্রত্যাহার প্রভৃতি। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আজ দুপুর দেড়টায় জাতীয় সংসদে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে চতুর্থ বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন। আর আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার মধ্যদিয়ে অর্থমন্ত্রী মুহিত টানা নবম বাজেট উপস্থাপনের নতুন রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন তিনি। টানা নয় বাজেট দেয়ার এমন নজির উপমহাদেশে তো বটেই, সম্ভবত বিশ্বের আর কোন দেশে নেই। আর এই বাজেট নিয়ে তার দেয়া বাজেটের সংখ্যা দাঁড়াবে ১১। তবে সংখ্যার দিক থেকে এখন পর্যন্ত প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান শীর্ষে আছেন। তিন দফায় তিনি বিএনপি সরকারের পক্ষে ১২টি বাজেট দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী মুহিত ২০০৯-১০ অর্থবছরে এক লাখ ১৩ হাজার ৮১৫ কোটি টাকার বাজেট দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন। আর আগামী অর্থবছর এই বাজেটের আকার চার লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় অর্জন হলো ছয় শতাংশ প্রবৃদ্ধির বৃত্ত ভাঙ্গা। সেই বৃত্ত ভেঙ্গে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ইতোমধ্যে সাত শতাংশ অর্জিত হয়েছে। চলতি অর্থবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭.২ শতাংশ। ইতোমধ্যে পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাথমিক হিসাবে এই প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে চলেছে। প্রবৃদ্ধির সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার লক্ষ্যেই আগামী অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭.২ শতাংশ। আগামী অর্থবছরের বাজেট শুধু আকারের দিক থেকেই নয়, ঘাটতির দিক থেকেও অতীতের রেকর্ড ভাঙবে। আসন্ন বাজেটে ঘাটতি ধরা হতে পারে ১ লাখ ২৯ হাজার ১০ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। চলতি বাজেটে যা ছিল ৯৭ হাজার ৮৫৩ কোটি টাকা। এ ঘাটতি মেটাতে বিদেশী উৎস থেকে (নিট) নেয়া হতে পারে ৫৪ হাজার ২৩০ কোটি টাকা। আর ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়া হতে পারে ৪৮ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা। এছাড়া ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে ২৫ হাজার ৮২০ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হতে পারে। প্রস্তাবিত বাজেটে অনুন্নয়নসহ অন্যান্য ব্যয় খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা। এই বাজেটের একটি বড় অংশই চলে যাবে সরকারী কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও ঋণের সুদ পরিশোধে। প্রায় ৪ লাখ ২৭০ কোটি টাকার বিশালাকার বাজেটের ৯৫ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা খরচ হবে এ দুই খাতে। চলতি অর্থবছরে এ দুই খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৮২ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। সে হিসেবে আগামী বাজেটে আলোচিত এ দুই খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ১২ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের বাজেটে সরকারী সাড়ে ১২ লাখ কর্মচারীর বেতন-ভাতা পরিশোধে ৫২ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৪৯ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ২ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা। শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের বৈশাখী ভাতা দেয়ার সিদ্ধান্তের কারণে আসন্ন বাজেটে এ ব্যয় বাড়ছে বলে জানা গেছে। এছাড়া বাজেটে ৭০ বছরের উর্ধে শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের প্রতিস্থাপনের সুযোগ দেয়ার ঘোষণাও আসতে পারে। এছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এছাড়াও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো নিজস্ব তহবিল থেকে আরও ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। ফলে সবমিলিয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেটে উন্নয়নের ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে এক লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৯১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ২ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা, যা মোট রাজস্বের ৮৫ শতাংশ। এনবিআর বহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১১ হাজার কোটি টাকা। আর কর বহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আদায় হবে ৩২ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়ে আগামী অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে মূল্য সংযোজন কর তথা ভ্যালু এডেড ট্যাক্সের (ভ্যাট) ওপর। আগামী অর্থবছরে মূল্য সংযোজন কর থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে ৮৭ হাজার ৮৮৭ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের মূল লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ১৫ হাজার কোটি টাকা বেশি। এই রাজস্ব আদায়ে আগামী অর্থবছর থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন ভ্যাট আইন। এই আইনে ব্যাপকভাবে ১৫ শতাংশ হারে পণ্য ও সেবা খাতে ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। নতুন ভ্যাট আইনের আগ্রাসী তৎপরতা থেকে ভোক্তাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে ১২৭টি পণ্য ও সেবা খাতে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দেয়া হতে পারে। এতে চাল, ডাল, ডিম, ফল, তরল দুধ, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ, মরিচ, মাংস, মুড়ি, চিঁড়া, আলুসহ কয়েক শ’ নিত্যপণ্য ক্রয়ে কোন ভ্যাট থাকছে না। বৈশ্বিক উদারীকরণের কারণে আমদানি শুল্ক থেকে রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ায় ভ্যাটের পাশাপাশি আবগারি শুল্কের ওপরও জোর দেয়া হচ্ছে। আগামী বাজেটে আবগারি শুল্ক সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে গ্রাহকদের ব্যাংকে সঞ্চিত রাখা অর্থের ওপর আবগারি শুল্ক (এক্সাইজ ডিউটি) দ্বিগুণ করা হচ্ছে। ফলে ব্যাংকে গ্রাহকের এক লাখ টাকার ওপরে জমা থাকলে আবগারি শুল্ক বাবদ এক হাজার টাকা কেটে নেবে সরকার। বর্তমানে লাখে আবগারি শুল্ক নেয়া হয় ৫০০ টাকা। আগামী অর্থবছরের সব ক্ষেত্রেই উৎসে কর বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন খাতে বিদ্যমান দেড় শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত উৎসে কর সর্বক্ষেত্রে পাঁচ শতাংশ করা হচ্ছে। বর্তমানে ৫২ খাত থেকে উৎসে কর আদায় করা হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে ৬২ খাত থেকে এই উৎসে কর আদায় করা হবে। এতে আমদানিকারক, উৎপাদন ও ভোক্তা সর্বক্ষেত্রেই করের বোঝা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া ২০০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতারা কিছুটা রেহাই পাচ্ছেন। বাড়ছে তাদের করমুক্ত আয়সীমা। বর্তমানে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় থাকলে তাকে কর দিতে হয় না। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে এ সীমা বাড়িয়ে দুই লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। অর্থাৎ ২৫ হাজার টাকা বাড়ানো হচ্ছে। এর ফলে কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। অব্যাহতভাবে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়াসহ মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে এবার করমুক্ত আয়সীমা দুই লাখ ৭৫ হাজার টাকা করা হচ্ছে। টানা দুই অর্থবছর এ অবস্থা শেষে এবার তাতে পরিবর্তন আসছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে করমুক্ত আয়সীমা আড়াই লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়। নতুন বাজেটে থাকছে বিনিয়োগবান্ধব নানা উদ্যোগ। উন্মুক্ত করা হতে পারে কালো টাকার বিনিয়োগ। উঠিয়ে নেয়া হতে পারে জমির কেনাবেচায় সরকার নির্ধারিত মূল্য। এতে কালো টাকা পাচার কম হবে, বাড়বে দেশীয় বিনিয়োগ। অর্থমন্ত্রী মনে করেন, জমি কেনাবেচায় অপ্রদর্শিত অর্থই কালো টাকার অন্যতম উৎস। পরবর্তীতে এ কালো টাকা তারা বিদেশে পাচার করে। তাই পাচার বন্ধে আগামী বাজেটে জমির সর্বনিম্ন নির্ধারিত মূল্য পদ্ধতি তুলে দেয়া হতে পারে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রফতানি খাতে সহায়তা করতে ৩৫ কোটি ডলারের একটি তহবিল গঠন করা হচ্ছে। যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় দুই হাজার ৮০০ কোটি টাকা। রফতানিকারকরা এ তহবিল থেকে কম সুদে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ নিতে পারবেন। বর্তমানে রফতানি উন্নয়ন তহবিল থেকে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি খাতের রফতানিকারকরাই কেবল ঋণ পান। এ ঋণের মেয়াদও কম। পরিমাণও কম। ফলে এটি অনেকেরই কাজে আসে না তাদের বাধ্য হয়ে বেশি সুদে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয়। নতুন এ তহবিল চালু হলে দেশের রফতানি আয়ে ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এ তহবিলের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে দেয়া হবে ২০ কোটি ডলার বা এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা। বাকি ১৫ কোটি ডলার বা এক হাজার ২০০ কোটি টাকা অন্যান্য খাত থেকে যোগান দেয়া হবে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে ভর্র্তুকির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ২৮ হাজার কোটি টাকা। আগামী বাজেটে চলতি বাজেটের তুলনায় ভর্তুকিতে বরাদ্দ কমছে ৫০০ কোটি টাকা। ফলে প্রস্তাবিত বাজেটে ভর্তুকি বাবদ ২৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। পাঁচ বছর আগে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ভর্তুকিতে বরাদ্দ ছিল সাড়ে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। ওই বছর পুরো অর্থই খরচ হয়েছে; যা ওই অর্থবছরের জিডিপির প্রায় ৩ শতাংশ ছিল। এরপর থেকেই ভর্তুকি কমতে শুরু করেছে। সে হিসেবে পাঁচ বছরে বাজেট ভর্তুকি কমেছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা।
×