ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফল প্রকাশের পর কলেজে ভর্তির লড়াই শুরু হচ্ছে ৯ মে

কাক্সিক্ষত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিয়ে এবারও উদ্বিগ্ন মেধাবীরা

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৭ মে ২০১৭

কাক্সিক্ষত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিয়ে এবারও উদ্বিগ্ন মেধাবীরা

বিভাষ বাড়ৈ ॥ এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর এবার শুরু হচ্ছে কলেজে ভর্তির লড়াই। এবারও ফলের ভিত্তিতে অনলাইন এবং এসএমএসের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। ভর্তির জন্য আবেদন শুরু হচ্ছে আগামী ৯ মে। চলবে ৩১ মে পর্যন্ত। প্রত্যেককে এবার আবেদনের সময় কমপক্ষে ৫টি ও সর্বোচ্চ ১০টি কলেজ চয়েজ দিতে হবে। একাদশে ক্লাস শুরু ১ জুলাই। এদিকে ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে কলেজে আসন সঙ্কটের নানা খবরে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে পাস করা শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মাঝে। ফলে কলেজে ভর্তি হতে পারবে কিনা তা চিন্তা করে উদ্বিগ্ন মেধাবীরা। তবে জানা গেছে, ভাল মানের কলেজের সংখ্যা কম হওয়ায় মেধাবীরা কাক্সিক্ষত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে ঠিকই, কিন্তু মোট আসনে কোন সঙ্কট হবে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা বোর্ড, শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোসহ (ব্যানবেইস) সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল দফতরই সকলকে আশ্বস্ত করে বলেছে, কলেজে ভর্তিতে আসন স্বল্পতা নেই। বরং মাধ্যমিক পাস করা সকলে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ভর্তি হওয়ার পরও প্রায় আট লাখ আসন ফাঁকা পড়ে থাকবে। তবে দেশে প্রতিষ্ঠিত বা অপেক্ষাকৃত ভাল মানের কলেজ কম থাকায় ভাল ফল করেও অনেকেই ভাল মানের কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে না। ভাল ফল অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের ভাল মানের কলেজে ভর্তি নিশ্চিত করতে এবার পর্যাপ্ত অবকাঠামো সুবিধাসম্পন্ন কলেজের আসন আরও বাড়ানো হতে পারে। প্রয়োজন অনুযায়ী জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অবকাঠামো সুবিধাসম্পন্ন কলেজগুলোতেও আসন বৃদ্ধি করা হতে পারে। শিক্ষা বোর্ডগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের জন্য ভাল মানের কলেজে ভর্তি নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এবার যেখানে মাধ্যমিকে পাস করেছে ১৪ লাখ ৩১ হাজার পরীক্ষার্থী সেখানে সারাদেশে কলেজে শিক্ষার্থী ধারণ ক্ষমতা আছে কমপক্ষে ২২ লাখ। তাছাড়া প্রতিবছরই পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুই লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী সাধারণ শিক্ষায় না থেকে সরকারী বেসরকারী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ৪ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হয়। কারিগরি বোর্ড থেকে পাস করা বেশ কিছু শিক্ষার্থী কলেজ ভর্তি না হয়ে কাজে যোগদান করে। ফলে আসন নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। এদিকে অনেকে ভর্তি হতে পারবে নাÑ এমন খবরকে বিভ্রান্তিকর অভিহিত করে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, প্রতিবছরই ফল প্রকাশের পর এ ধরনের গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়। বাস্তবে দেশের কোথাও কোনদিন একজন শিক্ষার্থীও খুঁজে পাওয়া যায়নি যে সে আসনের অভাবে কোথাও ভর্তি হতে পারেনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই নতুন বছরের জন্য কলেজ ভর্তি নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে। আজ কালের মধ্যেই শিক্ষা বোর্র্ডগুলো স্ব স্ব ওয়েবসাইটে নীতিমালা প্রকাশ করবে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার জানিয়েছেন, এবারও একাদশে অনলাইন এবং এসএমএসের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হবে। আবেদন আগামী ৯ মে শুরু হয়ে ৩১ মে শেষ হবে। এবারও ফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হবে। তবে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই এবার নির্বাচিত কলেজে ভর্তি নিশ্চয়ন করতে পারবে। এতে দুর্নীতিরও সুযোগ বন্ধ হবে এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কলেজের কেউ প্রতারণা করতে পারবে না। জানা গেছে, ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী আবেদনের পর প্রথমবার কোন কলেজে চান্স না পেলে আরও দু’বার ফি ছাড়াই আবেদন করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। দু’বার মাইগ্রেশনের সুযোগ পাবে এবং মনোনীতদের তালিকা তিনবার প্রকাশ করবে বোর্ড কর্তৃপক্ষ। প্রত্যেকবার নতুনরা আবেদন করতে পারবে। জানা গেছে, একাদশ শ্রেণীর ভর্তিতে গত বছরের জটিলতার অভিজ্ঞতার কারণে এবার ভর্তি নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। নির্বাচিত কলেজেই শিক্ষার্থীদের ভর্তি হতে হবে। তবে কেউ যদি ওই কলেজে থাকতে না চায় তাহলে তাদের ভর্তির পর মাইগ্রেশনের সুযোগ থাকবে। মাইগ্রেশন করে তারা মেধার ভিত্তিতে অন্য কলেজে ভর্তি হতে পারবে। বোর্ড চেয়ারম্যানরা বলছেন, অনলাইনে আগের জটিলতা এবার এড়াতে চায় বোর্ডগুলো। তবে যাতে কোন জটিলতায় পড়তে না হয় সেজন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করেই নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়। এর আগে ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো একাদশ শ্রেণীতে অনলাইনে ভর্তি পদ্ধতি চালু হয়। ওইবার শিক্ষার্থীদের পাঁচটি কলেজ পছন্দের সুযোগ দেয়া হয়। সেখান থেকে একটি কলেজ নির্বাচন করে দেয়া হয়। কিন্তু সে সময়ে সফটওয়্যার জটিলতার কারণে শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যায় পড়তে হয়। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। পরে একাধিক মেধাতালিকা করে সেই পরিস্থিতির সামাল দিতে হয়। এরপর গত বছর সেই পদ্ধতি তুলে দিয়ে ১০টি কলেজ পছন্দের সুযোগ দেয়া হয়। আর শিক্ষার্থীদের ১০টি কলেজেই মেধাক্রম তৈরি করে দেয়া হয়। শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের যে কোন কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়। এদিকে ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে কলেজে আসন সঙ্কটের নানা খবর নিয়ে তোলপার চলছে। এতে ভীতি ছড়িয়েছে মাধ্যমিক পাস করা শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মাঝে। তবে জানা গেছে, সারাদেশে উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার ৬০০টি। আসন সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ। সরকারী কলেজের সংখ্যা ৩২৯টি। এর মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক রয়েছে ৩০০টি কলেজে। আর এতে একাদশ শ্রেণীর আসন সংখ্যা প্রায় তিন লাখ। রাজধানীতে ১৫১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণী রয়েছে। এসব কলেজে মোট আসন আছে প্রায় এক লাখ হাজার। তবে এর মধ্যে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের চাহিদামতো ভাল মানের কলেজ আছে ৩০-৩৫টি। আসন সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। ফলে শিক্ষার্থীদের একাদশ শ্রেণীতে ভর্তিতে মোট আসনের কোন সঙ্কট না থাকলেও ভাল মানের কলেজের সঙ্কট রয়েছে। কারণ অধিকাংশ শিক্ষার্থীরই পছন্দের কলেজ প্রায় একই। পরিসংখ্যান বলছে, এসএসসিতে সর্বোচ্চ স্কোর করা শিক্ষার্থীদের জন্য ভাল মানের কলেজে ভর্তির জন্য ব্যাপক প্রতিযোগিতা করতে হবে। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেকেরই লক্ষ্য থাকে ভাল মানের কলেজে ভর্তি হওয়া। এবার সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৪ হাজার ৭৬১ জন। রাজধানীর বিভিন্ন কলেজে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নটর ডেম কলেজে আসনসংখ্যা দুই হাজারের কিছু বেশি। ঢাকা কলেজ, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজে, ঢাকা সিটি কলেজ, সরকারী বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, সরকারী বাঙলা কলেজ, সরকারী সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সরকারী কবি নজরুল কলেজ, ঢাকা কমার্স কলেজে আসন সংখ্যা এক থেকে দেড় হাজারের মধ্যে। এছাড়া বিএএফ শাহীন কলেজ, সামসুল হক খান কলেজ, সরকারী বিজ্ঞান কলেজ, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজ, হলিক্রস কলেজ, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ, খিলাগাঁও ন্যাশনাল আইডিয়াল, ক্যাম্ব্রিয়ান কলেজসহ বেশকিছু কলেজে আসন সংখ্যা এক হাজারের কিছু বেশি। এ কলেজগুলোই ঢাকার ভাল কলেজ হিসেবে পরিচিত। ঢাকার পাশের সরকারী কলেজগুলোর বাইরে নরসিংদীর কাদির মেল্লা সিটি কলেজ সাম্প্রতিক সময়ে আছে সকলের আগ্রহের কেন্দ্রে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতেও এই কলেজগুলো। অনলাইনে ভর্তির ক্ষেত্রে অন্য কলেজগুলোতে খুব একটা আবেদন না পড়লেও এসব কলেজে এক আসনের বিপরীতে শতাধিক আবেদনও পড়তে দেখা যায়। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, গত বছর প্রায় সাত লাখ আসন খালি ছিল। এবার এ সংখ্যা আরও বাড়বে। কারণ গত বছরের চেয়ে এবার উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। ভাল প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য প্রতিযোগিতা সারা বিশ্বেই হয়। কারণ সবাই ভাল কলেজে ভর্তি হতে চায়, এটাই স্বাভাবিক। তবে গ্রামাঞ্চলে ভাল মানের কলেজ কম। এজন্য শিক্ষার্থীরা শহরমুখী হয়। কিন্তু গত বছর ঢাকায়ও বিপুলসংখ্যক আসন খালি ছিল। আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত বছর সারাদেশের অনুমোদিত কলেজে সাত লাখ ৬৪ হাজার আসন শূন্য ছিল। ২০১৫ সালে ৯টি শিক্ষা বোর্ডের ৫৬টি কলেজে কোন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি এবং প্রায় দেড়শ কলেজে দুই থেকে সর্বোচ্চ ৩০ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। ২০১৬ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় তিন শতাধিক। এর মধ্যে কোন শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়ায় ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের-৭৯টিসহ সারাদেশের শতাধিক কলেজ বন্ধ করে দিয়েছে শিক্ষা বোর্ড।
×