ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

আকাশে মেঘ দেখলেই আতঙ্ক বাড়ে, শিলা পড়লে সব বরবাদ!

বগুড়ায় ফসল ক্ষতির আশঙ্কা নেই, তবু শঙ্কিত কৃষক

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ৬ মে ২০১৭

বগুড়ায় ফসল ক্ষতির আশঙ্কা নেই, তবু শঙ্কিত কৃষক

সমুদ্র হক ॥ কৃষক ধান কাটছে। কেউ কাটতে পারছে না। বোরোর মাঠে জলাবদ্ধতা। কোথাও আধাপাকা ধান নেতিয়ে পড়েছে পানির ওপর। এই ধান কাটতেই হচ্ছে। তা না হলে এই ধান আর রক্ষা হবে না। সোনালী রং ধারণ করে যা প্রায় পেকে গেছে তা কেটে নিয়ে যাচ্ছে কৃষক। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে ধান ৮০ শতাংশ পরিপক্ক হলেই কাটতে বলা হয়েছে। কৃষক তাই-ই করছে। বলা যায় না প্রকৃতির যে মতিগতি। কখন কী হয়। আকাশে কালো মেঘ দেখলেই শঙ্কিত কৃষক। ঝড় হবে না, ভারি বৃষ্টি হবে। মাঝারি বৃষ্টি হলেও ক্ষতি নেই। ভারি বৃষ্টির সঙ্গে শিলাপাত হলে সর্বনাশ। মাঠের কৃষকের বলাবলিÑ মৌসুমে এবার হচ্ছে টা কি! কোন কুলকিনারা করতে পারছে না। ধান পাকার সময় তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এবার তাও নেই। দিনে কিছুটা গরম তবে তা সহনীয়। মাঝরাতে শীতল হয়। যা বোরোর জন্য ভাল নয়। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক প্রতুল চন্দ্র সরকার জানালেন, এবার এপ্রিলে আবহাওয়ার এক অস্বাভাবিকতা ছিল। সাধারণত এই সময়ে গরমে শরীর হাঁসফাঁস করে, এবার তা হয়নি। তাপমাত্রা ছিল ২২ থেকে ২৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা অনেকটাই শীতল। এই অবস্থায় ধানে ব্লাস্ট হতে পারে। তা শুরু হয়েছিলও। তবে দ্রুত তা নিয়ন্ত্রণ করা গেছে। বললেন, আবহাওয়া টানা একই ধরনের থাকলে, বৃষ্টি, ঝড়, শিলাপাত হলে বোরো আবাদ নিয়ন্ত্রণ করা যেত না। তা এখনও হয়নি। যে ক্ষতি হয়েছে তা খুবই সামান্য। এর কোন প্রভাব পড়ে না। বগুড়া অঞ্চলে বিআর-২৮, বিনা-২৯, স্থানীয় কিছু জাত এবং মিনিকেট ধানের উৎপাদন বেশি হয়। এবারও তাই হয়েছে। খাদ্য উদ্বৃত্ত অঞ্চল হিসেবে অধিক পরিচিত বগুড়ায় এবার বোরো আবাদের টার্গেট করা হয় ১ লাখ ৯০ হাজার ১৩৮ হেক্টর জমি। যা থেকে চাল হিসেবে উৎপাদনের আশা করা হয় ৭ লাখ ৫৩ হাজার ১২২ মেট্রিক টন। তবে এবার এর চেয়ে কিছুটা বেশি জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। যে কারণে ফসলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। তারপরও কথা থাকেÑ যদি প্রকৃতি বিরূপ ও খেয়ালি আচরণ করতেই থাকে তাহলে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে। বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার শালিখা গ্রামের কৃষক মোতালেব আলী ১২০ বিঘা স্কিমের আওতায় ১৫ বিঘা জমিতে মিনিকেট জাতের আবাদ করেছিলেন। আবাদ করা অর্ধেক জমি ডুবে যায়। আধা ডুবে যাওয়া জমির ধান তাকে কাটতে হয়। সেখানেও বিপাকে পড়তে হয়। মেলে না ধান কাটার কামলা কিষান। মিললেও দর বেশি। ধান কাটতেও এবার বিড়ম্বনা। গত কয়েক বছরে মজুর সঙ্কট ছিল না। এবার হয়েছে। ধান কাটার কামলা কিষানের দরও বেড়েছে। পানিতে নেমে তারা সহজে ধান কাটতে চায় না। ধান পানির ওপর থাকলে প্রতি বিঘার কাটার দর ৩ হাজার টাকা। ধান তলিয়ে গেলে প্রতি বিঘা কাটতে ৪ হাজার টাকা। কৃষি মজুরদের এই দর বগুড়া ও আশপাশের এলাকার। মোতালেব আলী বললেন, মিনিকেটের উৎপাদন প্রতি বিঘায় সাধারণত ২৫ থেকে ৩০ মণ। এবার উৎপাদন কমবে। বৃহস্পতিবার থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। আশা করা হচ্ছে, পরবর্তী দুর্যোগ না এলে বাকি ধান রক্ষা পাবে। এদিকে হাওড়ের জল উত্তরাঞ্চলের একাংশে কেমন করে যে ঢুকে পড়ল, তাও ঠাহর করা যাচ্ছে না। কৃষি বিভাগ, আবহাওয়া বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), জলবায়ু গবেষকদের মাথায় হাত। কী আভাস দেবে, আর কি নির্দেশনা দেবে। বগুড়ার শাজাহানপুরের খরনা এলাকার কৃষক আবুল কালাম বললেন ঢলের পানি নেমে তার দুই বিঘা জমি আংশিক ডুবে যায়। ধানের গাছ সবুজ হওয়ার পর কেবলই দুধ ধান হয়ে পাকার দিকে যাচ্ছে তখনই সব গরমিল করে দিল। এই ধান না কাটলে সবই বরবাদ হয়ে যাবে। যতটা সম্ভব পানির ওপর থেকে কেটে নেয়া হচ্ছে। চলনবিলের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। তারা ডিসেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে আগাম বোরো ধান রোপণ করে। বিলপাড়ের নিচু এলাকার এই ধান এবার ডুবে যায়। উঁচু এলাকায় যে ধান অর্ধেক ডুবে ছিল তা কেটে নিয়েছে। চলনবিল পাড়ে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি বেশিরভাগ ভূমি ডুবে যায়। কৃষকের যখন মাথায় হাত, হাপিত্যেশ তখনই পানি নামতে শুরু করে। এই কয়েক দিনেই যা ক্ষতি তা হয়ে যায়। এদিকে উত্তরাঞ্চলের কৃষক বোরো আবাদের এক নতুন নিয়ম চালু হয়েছে।
×