ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

দুই মন্ত্রীর উপস্থিতিতে রুদ্ধদ্বার বৈঠক

সড়ক পরিবহন আইন প্রতিহত করার ঘোষণা মালিক-শ্রমিকদের

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৭ এপ্রিল ২০১৭

সড়ক পরিবহন আইন প্রতিহত করার ঘোষণা মালিক-শ্রমিকদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মালিক-শ্রমিকদের বিরুদ্ধে একতরফা শাস্তির অভিযোগ এনে যে কোন মূল্যে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৭’ চূড়ান্তভাবে পাস হতে না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। আইনে শাস্তি কমাতে সারাদেশে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের সিদ্ধান্তও নিয়েছে তারা। বুধবার সড়ক পরিবহন আইন-২০১৭ ও সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসকল্পে মালিক শ্রমিক প্রতিনিধি সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ মালিক শ্রমিক ঐক্যপরিষদ। রাজধানীর কাজী বশির মিলনায়তনে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠক থেকেই এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠকে সরকারের প্রভাবশালী দুই মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। টানা পাঁচ ঘণ্টা বৈঠক চলে। এতে দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলার পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে মতামত তুলে ধরেন। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, নেতাদের অনেকেই আইনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে কঠোর কর্মসূচী ঘোষণার দাবি জানান। কেউ কেউ সারাদেশে লাগাতার পরিবহন ধর্মঘট করারও প্রস্তাব দেন। কারও কারও মত সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে বিভাগীয় পর্যায়ে পরিবহন ধর্মঘট করার। তারা বলেন, এই আইন পাস হলে শ্রমিকরা রাস্তায় গাড়ি নামাবে না। তাই যে কোন মূল্যে আইনটি চূড়ান্ত পাস হওয়ার আগে প্রতিহত কারার ঘোষণা দেন তারা। উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৭ মার্চ মন্ত্রিপরিষদে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৭ এর খসড়া অনুমোদন হয়। পাঁচ বছরের বেশি সময় পরে আইনটির খসড়া অনুমোদন হলেও মালিক-শ্রমিকরা বলছেন, এটি তাদের স্বার্থবিরোধী। কালো আইন বলেও আখ্যায়িত করেছেন অনেকে। বৈঠকে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেছেন, প্রয়োজনে সরকারে থাকব না। তবুও মালিক-শ্রমিক স্বার্থবিরোধী কালো আইন পাস হতে দেব না। তিনি বলেন, এই আইন পাস হলে পরিবহন সেক্টরে অরাজকতা সৃষ্টি হবে। সঙ্কট বাড়বে। আমরা চাই না আইনটি এভাবে পাস হোক। আশা করি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে। তাছাড়া প্রস্তাবিত আইন মালিক-শ্রমিকদের স্বার্থবিরোধী হয়েছে বলে মনে করেন সংগঠনের নেতারা। তাই সব অসঙ্গতি দূর করে আইনটি চূড়ান্ত করার দাবি জানানো হয়েছে। সভায় দেশের সব জেলা ও উপজেলা মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। বৈঠকে পরিবহন সেক্টরে অবৈধ চাঁদা আদায় বন্ধে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এই কমিটি প্রতি জেলা-উপজেলায় টার্মিনাল কেন্দ্রীক গাড়িপ্রতি যৌক্তিক চাঁদা নির্ধারণ করবে। যেন নির্ধারিত চাঁদার বেশি কেউ আদায় করতে না পারে। বৈঠকে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৭ শ্রমিক বিরোধী উল্লেখ করে আইনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তনের দাবি জানান মালিক ও শ্রমিক নেতারা। তারা বলেন, এক কথায় বললে পুরো আইনটিতে শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা হয়নি। ইচ্ছেমত শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে। কিছু মানুষের চাপের মুখে সরকার নতি স্বীকার করেছে এমন অভিযোগ করে নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা চাইব সরকার শ্রমিকদের উপলব্ধির কথা বুঝবে। তাদের কষ্টের কথা বিবেচনায় নিয়ে আইনটি চূড়ান্ত করার আগে অনেক কিছু সংশোধন করবে। অন্যথায় এটি একটি কালো আইন হিসেবে বিবেচিত হবে। আইনের অনেক ধারা অসামাঞ্জস্য দাবি করে নেতৃবৃন্দ বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ২৫ হাজার থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদ-ের বিধান রাখা হয়েছে। যা কোনভাবেই যৌক্তিক নয়। তারা বলেন, আইনের বিভিন্ন ধারা সংস্কার চেয়ে দেশের সব জেলা উপজেলায় স্থানীয় প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে ২০ মে মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হবে। প্রতি জেলা-উপজেলার মালিক ও শ্রমিক নেতারা জেলা প্রশাসন, ইউএনও, এসপি থেকে শুরু করে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে আইনের বিভিন্ন ধারা নিয়ে বৈঠক করবেন। এ বিষয়ে জনমত গড়ে তোলা হবে। প্রয়োজনে সংবাদ সম্মেলন করে আইনের অসঙ্গতি তুলে ধরা হবে। এছাড়া কেন্দ্রীয়ভাবে পরিবহন মালিক শ্রমিকরা সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়সহ আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে নতুন সড়ক পরিবহন আইন নিয়ে আলোচনা করবেন। সেইসঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সব জেলায় শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। স্থানীয় মালিক-শ্রমিকদের যৌথ উদ্যোগে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওসমান আলী বলেন, বৈঠকে যোগ দেয়া দুই মন্ত্রী বলেছেন প্রয়োজনে আইন ঠেকাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা সাক্ষাত করব। আগামী ২০ মে মধ্যে জেলা নেতাদের বলা হয়েছে, আইন বাস্তবায়ন হলে কি ধরনের সমস্যা হতে পারে তা লিখিত আকারে কেন্দ্রে জানাতে। তাছাড়া তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মন্ত্রীদের প্রশ্ন করে বলেছেন, আপনারা মন্ত্রিপরিষদে থাকতে কিভাবে এই আইন হচ্ছে। রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় বৈঠকে ছয় দফা সিদ্ধান্তের কথা। এসব সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে, আগামী ২০ মে মধ্যে প্রতি জেলায় মালিক-শ্রমিক সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৭ এর অগ্রহণযোগ্য ধারাগুলো চিহ্নিত করে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা। একই সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে স্থানীয় সাংসদ, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়রসহ স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা, প্রতি জেলায় মালিক শ্রমিক সমন্বয়ে ১০ সদস্যের কমিটি গঠন করে একই সময়ের মধ্যে করণীয় শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় অফিসে জানানো প্রভৃতি।
×