ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সন্ত্রাসবাদ নিয়ে প্রার্থীদের মধ্যে মতভেদ বেড়েছে

ফ্রান্সে আজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ২৩ এপ্রিল ২০১৭

ফ্রান্সে আজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

ফ্রান্সে রবিবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই নির্বাচনের ওপর সন্ত্রাসী হামলা একটি দীর্ঘ কালোছায়া ফেলেছে। সম্প্রতি চ্যাম্পস এলিসিসে গুলিতে এক পুলিশ নিহত হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ আরও তীব্র হয়েছে। খবর গার্ডিয়ান অনলাইনের। এই হত্যাকা-ের জবাবে কি পদক্ষেপ নেয়া যায় তা নিয়ে প্রার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গীর মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য দেখা গেছে। এ নিয়ে তারা প্রকাশ্যে একে অন্যের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়েছেন। ভোটগ্রহণ শুরুর ৭২ ঘণ্টারও কম সময় আগে আইএস ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে সংঘটিত ওই হামলায় একজন পুলিশ নিহত ও অপর দুইজন গুরুতর আহত হয়। হামলাকারীর নাম কারিম শরফি এবং তার বয়স ৩৯ বছর বলে ফ্রান্সের পুলিশ শুক্রবার জাানিয়েছে। পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে একাধিক হামলা ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের ভ্যান লক্ষ্য করে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল দিয়ে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে লোকটি নিহত হয়। তাকে গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে রাখা হলেও জিহাদী হামলার আশঙ্কা করা হয়নি। নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকা প্রার্থী ইমানুয়েল ম্যাক্রন তার প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীকে উদ্দেশ্য করে বলেন যে তারা ওই হামলা নিজ নিজ প্রচারের স্বার্থে ব্যবহার করছেন। যে দুই জন প্রার্থী তার এই আক্রমণের লক্ষ্য ছিল তারা হলেন উগ্র ডানপন্থী ন্যাশনাল ফ্রন্টের মেরি লিপেন এবং ডানপন্থী ফ্রাঁসোয়া ফিলোঁন। লিপেন এবং ফিলোন দুজনই বলেছেন দেশ এখন র‌্যাডিক্যাল ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত অবস্থায় আছে। তাদের ভাষায় এটি এক সংগঠিত, সম্প্রসারণশীল, কর্তৃত্ববাদী ও বর্বর শক্তি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লিপেনকে একজন ‘শক্তিশালী’ প্রার্থী অভিহিত করে পরোক্ষভাবে তার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। ট্রাম্প শুক্রবার টুইটারে বলেন, (বৃহস্পতিবারের) হামলার বড় ধরনের প্রভাব পড়বে নির্বাচনের ওপর। শুক্রবার রাতে করা জনমত জরিপে দেখা গেছে, প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকা চারজন প্রার্থীর মধ্যে দুজনকে নিয়ে আগামী মাসের ৭ তারিখ দ্বিতীয় দফা ভোটগ্রহণ হতে পারে। এদিকে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে ফরাসী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বার্নার্ড কাজেনেউভ জানিয়েছেন। তিনি অকারণে ভীত না হওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সাবেক ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী ম্যাক্রন এবারের নির্বাচনে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। তিনি এ হামলার ঘটনাকে দেশবাসীর জন্য ‘দায়িত্ববোধের চেতনায় জাগ্রত হওয়ার’ সতর্ক বার্তা হিসেবে দেখছেন। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ফরাসীরা যখন তাদের ভবিষ্যত নির্ধারণের জন্য তৈরি হচ্ছে এমন সময় সন্ত্রাসী হামলাটি করা হলো। এ নিয়ে কাউকে অযথা আতঙ্ক ছড়ানো কিংবা নির্বাচনে ফায়দা লোটার চেষ্টা করতে দেয়া উচিত হবে না।’ চরমপন্থী ইসলামের উত্থানকে একটি নৈতিক ও সভ্যতার প্রতি চ্যালেঞ্জ আখ্যায়িত করে ম্যাক্রন বলেন, ‘প্রেসিডন্ট নির্বাচিত হলে তিনি চরমপন্থীদের রোখার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করবেন। প্রতিপক্ষ লিপেন যেমন দাবি করেছেন তিনি ক্ষমতায় থাকলে হামলাগুলো প্রতিহত ও জনগণকে রক্ষা করতে পারতেন সেটি সঠিক নয় বলে দাবি করেন ম্যাক্রন। প্রার্থীদের মধ্যে লিপেন এ পর্যন্ত নিজেকে সবচেয়ে কঠোর হিসেবে হিসেবে তুলে ধরেছেন। নিরাপত্তা ইস্যুতে লিপেন সবচেয়ে শক্ত কর্মসূচী তুলে ধরেছেন। অন্যদিকে ইসলামী চরমপন্থাকে অভিহিত করেছেন, ‘বর্বর, দানবীয় ও কর্তৃত্ববাদী আদর্শ’ হিসেবে। তিনি আরও বলেন, ‘ফ্রান্স এখন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত। কিন্তু কোন সরকারই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘ফ্রান্সে ইসলামপন্থী, সালাফি মতাদর্শের কোন জায়গা নেই। তাদের নিষিদ্ধ ও দেশ থেকে বিতাড়িত করতে হবে। যারা এসব মতাদর্শ প্রচার করে তাদের মসজিদগুলো বন্ধ করে দিতে হবে।’
×