ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

সুধীর বরণ মাঝি

শারীরিক শিক্ষা কেন জরুরী?

প্রকাশিত: ০৮:৪০, ২২ এপ্রিল ২০১৭

শারীরিক শিক্ষা কেন জরুরী?

শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া শিক্ষক, হাইমচর কলেজ, হাইমচর-চাঁদপুর। মোবাইল : ০১৭৯৪৭৭৭৫৩৫ ক্রীড়াই শক্তি, ক্রীড়াই দেহমন, ক্রীড়াতে বিশ্ব জয়। শারীরিক শিক্ষাকে বলা হয় দেহ ও মনের অতন্দ্র প্রহরী। শারীরিক শিক্ষা দেহ ও মনের সামঞ্জস্য বিধান ও উন্নয়ন সাধন করে। শারীরিক শিক্ষা ছাড়া শিক্ষার পূর্ণতা আসেনা। শারীরিক শিক্ষা শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ।শরীর থেকে মনকে যেমন আলাদা করা যায় না তেমনি শারীরিক শিক্ষাকে সাধারণ শিক্ষা থেকে আলাদা করা যায় না। যে সব গুন থাকলে দেশের প্রতিটি নাগরিক সুস্থ, সবল, দেশপ্রেমিক ও দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন হয়ে গড়ে ওঠে এবং নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়, শারীরিক শিক্ষা সেইসব গুনাবলী অর্জণে প্রত্যক্ষ অবদান রাখে।শারীরিক শিক্ষা তাত্বিক ও ব্যবহারিক জীবনের সমন্বয় সাধন করে জীবনকে করে তোলে অর্থবহ। নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্ব গঠনেও শারীরিক শিক্ষার অবদান অসামান্য। দেহ মনের আধার। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ না থাকলে শিক্ষা ক্ষেত্রে কাঙ্খিত ফলাফল লাভ করা যায় না। এ জে.বি. ন্যাশের ভাষায়,”শারীরিক শিক্ষা গোটাশিক্ষার এমন একদিক যা মাংসপেশির সঠিক সঞ্চালন ও এর প্রতিক্রিয়ার ফল হিসেবে ব্যক্তির দেহের ও স্বাভাবের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সাধন করে।” পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই শারীরিক শিক্ষা, খেলাধুলা ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞানকে ভিন্ন ভিন্ন নামে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত বাধ্যতামূলক করে রাখা হয়। শারীরিক শিক্ষা হলো ব্যক্তির শারীরিক, সামাজিক ও অন্যান্য দিকের সুষম উন্নতি ঘটিয়ে ব্যক্তিসত্তার সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধনের চেষ্টা করা এবং শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক দিক সমূহের সুসমন্বিত বিকাশ সাধন। দেশ- বিদেশের বিচিত্র খেলাধুলা চর্চার ভিতর দিয়ে শিক্ষার্থীরা যেন নিজেকে কর্মক্ষম সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারে, তার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয় শারীরিক শিক্ষায়। আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা দৈহিক ও মানসিক বিকাশের উপর সমান গুরুত্ব আরোপ করেছে।দেশের মানব সম্পদকে সঠিকভাবে বিকশিত করা এবং আজকের শিশুকে আগামী দিনের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উপর ন্যস্ত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রথম কাজ হলো শিশু-শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত বিকাশ সাধন। এর মধ্যে শিক্ষার্থীর শারীরিক,মানসিক ও আত্মিক দিক অন্তর্ভুক্ত। আর দ্বিতীয়টি হলো শিক্ষর্থীর জৈবিক সত্তাকে রূপান্তরিত করা। এর মধ্যে শিশুর চারিত্রিক ও মূল্যবোধের উন্নতি এবং সামাজিক বিকাশ অন্তর্ভুক্ত। শিক্ষার্থীর সর্বাঙ্গীণ বিকাশের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শারীরিক শিক্ষার প্রয়োজন হয়। মাসালো শারীরিক শিক্ষার প্রয়োজনকে তিনটি স্তরে বিন্যস্ত করেছেন। যেমন, ১) শারীরিক ও শরীরবৃত্তীয় প্রয়োজন ঃ শারীরিক শিক্ষা শিক্ষা শিক্ষার্থীর গতিশীল কাজের জৈবিক প্রয়োজন পূরণ করে । শিক্ষার্থীর দৈহিক গঠন সুন্দর ও মজবুত করে।শারীরিক সক্ষমতা ও কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়,খেলাধুলার কৌশল শেখার মাধ্যমে খেলাধুলায় পারদর্শিতা অর্জন করে এবং সুস্থ দেহে সুস্থ দেহ গড়ে তোলে। ২) মানসিক ও আত্মিক পরিপূর্নতার প্রয়োজন ঃ শিশুর মানসিক ও বুদ্ধিমত্তার ভিত গড়ে তোলে। পড়াশোনার একঘেয়ামি দূর করে। শিক্ষার্থীর চারিত্রিক গুনাবলীর বিকাশ ঘটায় এবং আত্মসচেতনতা, আত্মনির্ভরতা, আত্মোপলদ্ধিও আত্মসম্মান বাড়িয়ে তোলে। পরিবেশের সাথে মানিয়ে চলতে সাহায্য করে ও সৃজনশীলতার অনুভূতি জাগ্রত করে। ক্ষতিকর নেশা থেকে দূরে রাখে এবং চিত্তবিনোদন ও অবসর সময় কাটানোর উপায় নির্বচনে সাহায্য করে। ৩) সামাজিক প্রয়োজন ঃ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সহযোগিতার মনোভাব জাগিয়ে তোলে। খেলাধুলায সামাজিক সম্পর্কের প্রতিফলন ঘটে ও মানসিক গুন অর্জনে সহায়তা করে। দেশ ও সমাজের সংস্কৃতির সাথে পরিচয় ঘটায় এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সৌভ্রাত্ববোধ জাগিয়ে তোলে। শিক্ষার্থীর উদার মানসিকতা ও সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ জাগ্রত করে। আধুনিক শারীরিক শিক্ষা শিশুর ব্যক্তিসত্তার পূর্ণ বিকাশের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক এবং শিক্ষাশ্রয়ী প্রচেষ্টা। তাই এ শিক্ষার কার্যক্রম গড়ে উঠেছে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও তথ্যের উপর ভিত্তি করে। শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য দৈহিক, মানসিক ও সামাজিক দিকের বৈশিষ্ট্য ও প্রয়োজন অনুযায়ী শারীরিক শিক্ষাসূচি প্রণীত হয়। তাই শারীরিক শিক্ষার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি গড়ে উঠেছে এই শিক্ষার সাথে সম্পর্কযুক্ত জীববিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান এবং সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞানের সমন্বয়ে।শারীরিক শিক্ষা শিক্ষার্থীর বন্ধু ও পথপ্রদর্শক। শারীরিক শিক্ষা শুধুমাত্র শরীরের শিক্ষা নয়, ব্যক্তিসত্তার সর্বাঙ্গিন বিকাশ সাধনই হলো শারীরিক শিক্ষা।শারীরিক শিক্ষা এমন একটি বিষয় যার সাথে শিক্ষার সমাজবিজ্ঞান, পুষ্টিবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান এবং পদার্থবিজ্ঞান সম্পৃক্ত। প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত শারীরিক শিক্ষাকে যদি জনপ্রিয় করা যায় তবে অপসংস্কৃতি ও নৈতিক অবক্ষয়ের চর্চা চলছে তা থেকে জাতিকে রক্ষা করা যাবে। ক্রীড়া ক্ষেত্রে ভালো ফলাফলের জন্য শারীরিক শিক্ষার বিকল্প নেই। প্রতিযোতিামূলক খেলাধুলা প্রতিষ্ঠিত করেছে বিজ্ঞানের অনুশীলন। খেলাধুলার সাফল্যের প্রধান উৎস হলো শারীরিক উৎকর্ষতা। দেহের স্বাভাবিক সঞ্চালন, হৃৎপিন্ডের ক্ষমতা, রক্তসঞ্চালন ক্ষমতা রেচন ক্ষমতা, পেশিীর সম্প্রসারণ ও সংকোচন ক্ষমতা এবং নার্ভের ক্ষমতার উপর নির্ভর করে শারীরিক উৎকর্ষতা। শারীরিক শিক্ষা উক্ত বিষয়গুলোর উন্নতির জন্যে স্পোর্টস মেডিসিন, বায়োমেকানিক্স, এক্সারসাইজ ফিজওলজি, কিনসিওলজি, স্পোর্টস সাইকোলজি প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্তর্ভূক্ত করেছে। আমাদের দেশে যে হারে ডাইবেটিস, উচ্চ রক্তচাপসহ জটিল ও কঠিন রোগের প্রার্দুভাব বাড়ছে তা থেকে মুক্তি পেতে হলে ব্যাপক হারে শারীরিক শিক্ষার প্রচলন করতে হবে। শারীরিক শিক্ষা এবং খেলাধুলার প্রধান উদ্দেশ্য হলো শিশুদের সর্বাঙ্গিক উন্নয়ণ। যা শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য পূরণ করে।
×