ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বার্ডক্লাবের আয়োজন

এক শ’ প্রজাতির পাখির ছবি, মুগ্ধ হয়ে দেখা

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২২ এপ্রিল ২০১৭

এক শ’ প্রজাতির পাখির ছবি, মুগ্ধ হয়ে দেখা

মোরসালিন মিজান ॥ চিরদিন পুষলাম এক অচিন পাখি/ভেদ পরিচয় দেয় না আমায়/ঐ খেদে ঝরে আঁখি...। লালনের এই পাখির ভেদ পরিচয় জানা সহজ কথা নয়। তবে বাংলাদেশের আকাশে যেসব পাখি উড়ে বেড়ায় তাদের পরিচয় জানার চেষ্টা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট সফল বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব। এই ক্লাবের সদস্যরা ক্যামেরার চোখে পাখি দেখেন। সারাদেশের প্রতি প্রান্তে ছুটে যান। সেই পাখিপ্রেমীদের তোলা ছবি নিয়ে এখন চলছে বিশেষ প্রদর্শনী। জাতীয় জাদুঘরে আয়োজিত প্রদর্শনীতে এক শ’ প্রজাতির পাখির আলোকচিত্র। দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। বাংলাদেশের প্রকৃতি পরিবেশ পাখির জন্য খুব অনুকূল- এমন কথা বলা যাবে না। এর পরও এখানে আছে ৭০০ প্রজাতির পাখি। সব প্রজাতির সঙ্গে পাখিপ্রেমীদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন আয়োজকরা। সেই লক্ষ্যে চলছে ধারাবাহিক প্রদর্শনী। এবার তৃতীয় আয়োজন। প্রদর্শনীতে মোট ৫১ আলোকচিত্রীর ১০০ পাখির আলোকচিত্র স্থান পেয়েছে। ‘পাখির দেশ বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রদর্শনী দারুণ উপভোগ করছেন দর্শনার্থীরা। জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারির প্রতিটি দেয়ালে এখন পাখির ছবি। পাখিদের বিভিন্ন পরিবারে ভাগ করে উপস্থাপন করা হয়েছে। একটি দেয়ালে ফুলঝুরি পরিবারের একাধিক সদস্য। আর ফুলঝুরি পরিবার মানেই সবচেয়ে ছোট পাখিদের সমাবেশ। মেটেঠোঁট-ফুলঝুরি আবার ছোটদেরও ছোট! ক্যামেরাবন্দী করেছেন হুমায়রা মাহমুদ। জানা গেল, ছবিতে যেটুকু দেখাচ্ছে বাস্তবে পাখিটি তার চেয়েও ছোট! পাশেই আরও দুটি প্রজাতি। একটির নাম হলদেতলা-ফুলঝুরি। অন্যটি ঠোঁটমোটা-ফুলঝুরি। মৌটুসী পরিবারের সদস্যরাও আকারে ছোট। তারেক উদ্দীন আহমেদের তোলা চুনিমুখ-মৌটুসির গায়ে একাধিক রং। দেখতে বেশ লাগে। সবচেয়ে বড় পাখির খোঁজ করতে গিয়ে দেখা গেল, ওরা কেউ একলাটি হয়ে থাকে না। দুজন পাশাপাশি হাঁটে। উড়ে বেড়ানোর বেলায়ও দুজন। নাম তাই মানিকজোড়। গলার অংশ যাদের সাদা তাদের ধলাগলা মানিকজোড় নামে ডাকা হয়। আর যাদের গলা কালো রঙের তাদের ডাকা হয় কালাগলা মানিকজোড়। শাহাদ আহমেদ রাজু এবং শাহরিয়ার কবিরের তোলা ছবির দিকে তাকিয়ে দেখা যায়, এই প্রজাতির পাখি কিছুটা বকের মতো। তবে পা অস্বাভাবিক রকমের লম্বা। লিকলিকে। খুব দুর্লভ প্রজাতির মধ্যে পড়ে ইউরেশীয় ঝিনুকমার। সায়েম ইউ চৌধুরীর পাখিটিকে প্রথমবারের মতো ক্যামেরা বন্দী করেছেন। জলরাশির উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় তোলা ছবিতে সাদা কালো রঙের মিশেল। সরু লম্বা ঠোঁট। একটি দেয়াল সাজানো হয়েছে শুধু প্যাঁচার ছবি দিয়ে। এই পরিবারের তিন সদস্য পাশাপাশি বসা। লক্ষ্মী প্যাঁচাটি দেখামাত্রই চেনা গেল। মুখের আকৃতি পান পাতার মতো। খয়রা শিকরে প্যাঁচার গোল গোল চোখ যেন জ্বলছিল। খুবই ভয়ঙ্কর দেখতে। যেন গিলে খাবে। তবে সবচেয়ে দুর্লভ প্যাঁচাটির নাম মেটে মেছোপ্যাঁচা। হন্যে হয়ে খুঁজলেও নাকি পাওয়া যায় না। সেই প্যাঁচাকে ক্যামেরাবন্দী করেছেন নাজমুল হাসান। আরেকটি দুর্লভ পাখি দেশী নীল রবিনের ছবি তুলেছেন সৌরভ মাহমুদ। এভাবে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি যত দেখা যায় ততই মুগ্ধ হতে হয়। আলোকচিত্রের পাশাপাশি প্রদর্শনীতে রয়েছে শিল্পী কামরুল হাসানের আঁকা পাখির ছবি, পাখির টেরাকোটা ও পাখির ছবি আঁকা একাধিক নকশিকাঁথা। সব মিলিয়ে চমৎকার আয়োজন। চলবে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত।
×