ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সাতক্ষীরায় প্রাথমিক পরীক্ষা নিয়ে তুঘলকি কা-

টাকার বিনিময়ে বৃত্তির ফল পাল্টে দেয়ার অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২১ এপ্রিল ২০১৭

টাকার বিনিময়ে বৃত্তির ফল পাল্টে দেয়ার অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ সাতক্ষীরা জেলায় টাকার বিনিময়ে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় প্রাপ্তনম্বর পাল্টে কম মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অভিযোগের তদন্তে একটি উপজেলাতেই দশটি অনিয়মের সত্যতা মিলেছে। ইতোমধ্যে সাতক্ষীরার আরও চারটি উপজেলা থেকে ৩৩ অভিভাবক তাদের সন্তানদের খাতা পুনর্মূল্যায়নের জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছেন। ইতোমধ্যে তদন্ত শেষে ১০ ফল পরিবর্তনের অভিযোগে কালিগঞ্জ উপজেলার সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফারুক হোসেন ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ভবতোষ সরকারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের পক্ষ থেকে অধিদফতরে সুপারিশ করা হয়েছে। এদিকে দুর্নীতির দায় থেকে মুক্তি পেতে কালিগঞ্জ উপজেলার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফারুক হোসেন ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মন্ত্রণালয়, অধিদফতরসহ বিভিন্ন স্থানে দরবার শুরু করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অনিয়মের সঙ্গে জড়িত কালিগঞ্জ উপজেলার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফারুক হোসেন তিনদিনের ছুটি নিয়ে ঢাকায় গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন কালিগঞ্জে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল হাকিম। তবে এই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলেও এখনও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি জানিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার বলেন, এখনও ফারুক হোসেন সহকারী শিক্ষা অফিসার হিসেবে এবং ভবতোষ সরকার ডাটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এ বছর প্রাথমিক বৃত্তির ফল ঘোষণার পরই কালিগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফারুক হোসেন ও ডাটা এন্ট্রি অপরেটর ভবতোষ সরকারের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে কম মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে কয়েক অভিভাবক প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে অধিদফতরে প্রেরণ করেন। মেধাবী শিক্ষার্থীদের পক্ষে মঞ্জুরুল হক নামে এক অভিভাবক মন্ত্রণালয়, অধিদফতর, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট প্রতিকার চেয়ে অভিযোগ করেন। মন্ত্রণালয়, অধিদফতর, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি আমলে নিয়ে জরুরী তদন্তের নির্দেশ দেন। নির্দেশ অনুযায়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ অহিদুল আলম বর্তমান কালিগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল হাকিমকে দিয়ে তদন্ত করান এবং তিনি নিজেও ঘটনাস্থলে গিয়ে খোঁজ নেন। অপরদিকে, কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষ থেকেও অভিযোগ তদন্তের জন্য পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তদন্তে নাম্বার পাল্টে বৃত্তি পাইয়ে দেয়ার অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পেয়েছেন বলে জানান ইউএনও। অন্য তদন্ত কমিটি প্রায় ১০ শিক্ষার্থীর নাম্বার বদলে দেয়ার সত্যতা পেয়েছেন বলে তিনি জানান। অভিযোগ, কালিগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার ফারুক হোসেন ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ভবতোষ সরকার প্রতিটি ফল বদলে দেয়ার জন্য ১০ থেকে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে কম নাম্বারপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের বেশি নম্বর দিয়ে ন¤ার সিট তৈরি করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে প্রেরণ করেন। জেলা শিক্ষা অফিস থেকে সেই নম্বর সিট অধিদফতরে প্রেরণ করা হয়। প্রাপ্ত বৃত্তির তালিকায়ও অনেক কম মেধাবী শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পেয়েছে বলেও দেখা যায়। এছাড়া তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফারুক হোসেন ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটর তাদের নিকটাত্মীয়সহ একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে নম্বর পাল্টে দিয়ে বৃত্তি পাইয়ে দেয়ার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ অহিদুল আলমের গঠিত তদন্ত কমিটি তৎকালীন কালিগঞ্জ উপজেলার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফারুক হোসেন ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ভবতোষ সরকারের বিরুদ্ধে ৯ শিক্ষার্থীর নম্বর বদলে দেয়ার সত্যতা পেয়েছে। একই সঙ্গে কমিটি শিক্ষার্থীর ফল বদলে বেশি নম্বর দিয়ে বৃত্তি পেতে সহযোগিতা করা এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের নম্বর কমিয়ে দিয়ে বৃত্তি না পাওয়ার অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পান। তদন্ত কমিটি এসব বিষয়ে সত্যতা পেয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ অহিদুল আলম সাংবাদিকদের জানান, দুর্নীতির মাধ্যমে কালিগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফারুক হোসেন ও ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ভবতোষ সরকার ফল বদলে দেয়ার অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে অধিদফতরে সুপারিশ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ১১ এপ্রিল মঙ্গলবার প্রাথমিকের বৃত্তির ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
×