ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিটিং বন্ধ হয়নি, যাত্রীদের ওপর বাস শ্রমিকদের হামলা

বাসের কৃত্রিম সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৫:২১, ১৮ এপ্রিল ২০১৭

বাসের কৃত্রিম সঙ্কট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অভিযান শুরুর পর দু’দিনেও রাজধানীর সিটিং সার্ভিস বাসের চিত্র খুব একটা বদলায়নি। অনেক বাস এখনও সিটিং হয়ে চলছে। কিছু লোকাল করা হলেও আদায় করা হচ্ছে সিটিংয়ের ভাড়া। এ নিয়ে বাসে বাসে চলছে বচসা। সোমবার মোবাইল কোর্টের অভিযান ও সিটিং বহাল রাখার দাবিতে রাজধানীতে খুব একটা বাস চলাচল করতে দেখা যায়নি। পরিবহন মালিকরা বলছেন, তিন ভাগের একভাগ বাস চলেছে দিনভর। এতে পরিবহন সঙ্কটের মুখে দিনভর নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে যাত্রীদের। এদিকে যাত্রীদের জিম্মি করে বাস চলাচল বন্ধ করলে রুট পারমিট বাতিল করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিআরটিএ। তাতেও সুফল আসেনি। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ভাড়াকে কেন্দ্র করে বাসের লোকজন যাত্রীদের ওপর হামলার খবর পাওয়া গেছে। রাজধানীতে ‘সিটিং সার্ভিস’ বন্ধের পর দ্বিতীয় দিনেও মালিকরা গাড়ি কম নামিয়ে সড়কে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। সেইসঙ্গে কিছু পরিবহনের স্টপেজ ও চেকিং পয়েন্ট এখনও রয়েছে। সকাল থেকে রাত অবধি রাস্তার মোড়ে মোড়ে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে বাসের সংখ্যা রবিবারের থেকেও কম। গত ৪ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে ১৫ এপ্রিলের পর থেকে ‘সিটিং সার্ভিস’ বন্ধের ঘোষণা দেয় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। এরপর শনিবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) জানায়, ঢাকায় সিটিং সার্ভিস বন্ধে রবিবার থেকে অভিযান চালানো হবে। সে অনুযায়ী অভিযান শুরু হয়েছে। পরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরে না আসা পর্যন্ত সপ্তাহে পাঁচদিন অভিযান চলার কথা জানিয়েছে বিআরটিএ। একই কথা জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও। বিআরটিএর চেয়ারম্যান মোঃ মশিয়ার রহমান সোমবার রমনা এলাকায় মোবাইল কোর্টের অভিযান পরিদর্শনে গিয়ে বলেন, কোন পরিবহন কোম্পানি তাদের গাড়ি বন্ধ রাখলে রুট পারমিট বাতিল করে দেয়া হবে। কিন্তু রাত পর্যন্ত কোন বাস কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার খবর পাওয়া যায়নি। বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, তারা গাড়ির রুট পারমিট নিয়েছে যাত্রীদের সেবা দিতে। এখন যদি কেউ গাড়ি বন্ধ করে দিয়ে যাত্রীদের ভোগান্তি সৃষ্টি করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কালশী মোড়ে গ্যালাক্সি পরিবহনের চালকের সহকারী যাত্রীদের সঙ্গে বিত-ার পর গাড়ি থেকে নেমে যান। এ অবস্থায় যাত্রীভর্তি বাসের চালকও সহকারী ছাড়া যেতে অস্বীকৃতি জানান। সড়কে বাস কম থাকার কারণ জানতে চাইলে বসুমতি পরিবহনের পরিচালক খন্দকার মনির আহমেদ বলেন, বিভিন্ন পরিবহনের কর্মীদের সঙ্গে যাত্রীদের ‘ঝামেলা’ হওয়ায় চালকরা গাড়ি চালাতে চাইছেন না। গতকাল মারামারির পর অনেক চালক আজ বের হয়নি। সকালেও কয়েকটা বাসে মারধরের ঘটনা ঘটছে। ভাড়া কম পাওয়ায় অনেকে গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছে। সদরঘাট থেকে প্রগতি সরণি হয়ে গাজীপুর চলাচলকারী সুপ্রভাত পরিবহনেও রবিবারের তুলনায় ভাড়া কমানো হয়েছে। কিন্তু গাড়ি কম থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, মালিকের ভাড়ার টাকা পরিশোধ করে জীবনধারণ করতে হলে আগের ভাড়াই নিতে হবে। এদিকে, সিটিং সার্ভিসের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে দ্বিতীয় দিনের মতো ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। এ সময় বাড়তি ভাড়া আদায়, বাসে সরকার নির্ধারিত কিলোমিটার প্রতি ভাড়ার তালিকা না টাঙ্গানোসহ নানা কারণে শতাধিক গণপরিবহনের বিরুদ্ধে মামলা ও জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সকাল থেকে রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউ, আগারগাঁও, রমনা, মিরপুরসহ মোট পাঁচটি স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বিআরটিএ। যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা বাড়তি ভাড়া আদায় নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন। বিআরটিএর নির্বাহী হাকিম মোহাম্মদ আবদুস সালাম বলেন, একটি বাসে ভাড়া অতিরিক্ত আদায় করা হয়েছে। তার ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া আরেকটি বাসে ভাড়ার চার্ট (তালিকা) টাঙ্গানো না থাকায় পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহসাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ন কবির বলেন, নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত অভিযান চলবে। মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সপ্তাহে তিন দিন অভিযান পরিচালনা করা হবে। আর বিআরটিএ নিয়মিত অভিযান চালাবে। গণপরিবহনের যাত্রীদের বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা দেখে ভাড়া দেয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। রাজধানীর মিরপুর এলাকায় সিটিং সার্ভিস নিয়মে অতিরিক্ত ভাড়া না দেয়ায় পরিবহন শ্রমিকদের হামলার শিকার হয়েছেন ৭১ টেলিভিশনের প্রযোজক আতিক রহমান। দুপুরে ‘জাবালে নূর’ পরিবহনে চড়ে সিটিং সার্ভিস নিয়মে আগের মতো ভাড়া না দিয়ে লোকাল নিয়মে ভাড়া দিতে চাইলে বাগ্্বিত-া শুরু হয়। একপর্যায়ে তাকে মারধর করে বাসটির শ্রমিকরা। এতে তার নাক ফেটে যায়। হামলার শিকার ৭১ টেলিভিশনের প্রযোজক আতিক রহমান সাংবাদিকদের বলেন, গুলশান-২ এলাকা থেকে তিনি জাবালে নূর নামে ওই পরিবহনটিতে উঠেন। তার গন্তব্য মিরপুর। বাসের হেলপার ভাড়া চাইলে তিনি নতুন নিয়মে ভাড়া দেন। কিন্তু বাসটির হেলপার সিটিং সার্ভিসের ভাড়া চাইলে তিনি ভাড়ার চার্ট দেখতে চান। এ কারণে তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। রাজধানীর কল্যাণপুরে দেখা যায়- রাইদা, ওয়েলকাম, লাব্বাইক, স্বজন, ইন্টারসিটি, নিউভিশন, তানজিল, মিরপুর মিশন, বসুমতি, পরিস্থান, এভারেস্ট, দিশারী, বিকল্প, আশীর্বাদসহ অধিকাংশ বাসই নিয়মের তোয়াক্কা না করে সিটিং সার্ভিস হিসেবে আগের মতো চলাচল করছে। লোকাল হিসেবে যাত্রী তুললেও ভাড়া আদায় করা হচ্ছে সিটিং সার্ভিসের। ভাড়া নৈরাজ্য কমেনি অস্বাভাবিক গলাকাটা ভাড়া আদায়ের ফাঁদ হিসেবে ব্যবহৃত সিটিং সার্ভিস, গেটলক, সময় নিয়ন্ত্রয়, কম স্টপেজ সার্ভিস স্পেশাল সার্ভিস, সিটিং সার্ভিস বন্ধ করা হলেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ঠিক আগের মতো বহাল থাকায় যাত্রী দুর্ভোগ আরও বেড়েছে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটির অভিযোগ, আসন বিবেচনা করে বাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হলেও প্রতিটি বাসে নিবন্ধনের অতিরিক্ত ১০ থেকে ১৫টি আসন সংযোজন, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে লক্কড় ঝক্কড় যানবাহনে যাত্রী বহন করে যাত্রী সাধারণের স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াতের পরিবেশ নষ্ট করা হয়েছে। সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সকাল ৬টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন রুটে অধিকাংশ মালিক তাদের যানবাহন বন্ধ রেখেছে। যেসব যানবাহন চলেছে সেগুলো লোকাল হিসেবে যাত্রী বোঝাই করে যাতায়াত করলেও সিটিংয়ের মতো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেছে।
×