ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তিন দিনের অনুষ্ঠান ॥ চেঙ্গী নদীতে ভাসল ফুল

বৈসাবি আনন্দে উত্তাল পাহাড়, বর্ষবরণে মাতোয়ারা

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৩ এপ্রিল ২০১৭

বৈসাবি আনন্দে উত্তাল পাহাড়, বর্ষবরণে মাতোয়ারা

জীতেন বড়ুয়া বৈসাবির আনন্দে উত্তাল এখন পাহাড়। বর্ষ বরণ ও বর্ষ বিদায় অনুষ্ঠানকে ঘিরে নতুন সাজে সেজেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিটি পাহাড়ী জনপদ। সকল পাপাচার, গ্লানি ধুয়ে-মুছে নিতে খাগড়াছড়িতে আদিবাসী সম্প্রদায়ের ৩ দিনব্যাপী বৈসাবি উৎসব শুরু হয়েছে। বুধবার এ উৎসবের প্রথম দিন অর্থাৎ ফুল বিজু। খাগড়াছড়ির চেঙ্গী নদীতে আদিবাসী তরুণ-তরুণীরা ভোরে নদীর জলে দেবতার উদ্দেশে ফুল বাসিয়ে দিয়ে পরিবার ও জাতির জন্য মঙ্গল কামনা করে প্রার্থনার মধ্য দিয়ে এই উৎসবের সূচনা হয় । বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চেঙ্গী নদীর তীরে মানুষের ঢল নামে। ছোট্ট ছোট্ট শিশু এ সময় নদীতে হল্লা করে একে অপরকে ভিজিয়ে আনন্দ-উল্লাস করে। পাহাড়ীরা বৈসাবি উৎসবকে তিনটি ভাগে পালন করে থাকে। প্রথম দিনটির নাম ফুল বিজু। এদিন শিশু-কিশোররা ফুল তুলে ঘর সাজায়। দ্বিতীয় দিনটি মূল বিজু। এ দিনটি হচ্ছে মূল অনুষ্ঠান। এদিন নানা ধরনের তরকারি রান্না করে থাকে। এর নাম পাচন। এটি বৈসাবির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের পিঠা ও মিষ্টান্নও তৈরি করা হয়। অতিথিদের জন্য এদিন ঘরের দরজা থাকে সবার জন্য খোলা। এসব ছাড়াও বৈসাবির তিন দিন পাহাড়ীরা পালন করে সাংসারিক ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান। বৈসাবির প্রথম দিন অর্থাৎ ফুল বিজুর দিন পাহাড়ীরা ভোরে ঘুম থেকে উঠে নদী বা ছড়ায় গোসল করার আগে পানিতে ফুল ভাসিয়ে দিয়ে গঙ্গা বা গংগা পূজা করে। এরপর বড়রা বাড়িঘর ও আঙ্গিনায় সোনা-রূপার পানি দিয়ে বাড়ির আসবাবপত্র পরিষ্কার করে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন ফুল দিয়ে বাড়িঘর সাজায়। সন্ধ্যায় বাড়ির আঙ্গিনায়, গোয়ালঘরে এবং নদীর ঘাটে সারি সারি মোমবাতি জ্বালানোর মধ্য দিয়ে বৈসাবির প্রথম দিনের কাজ সম্পন্ন করা হয়। । এ উপলক্ষে সম্মিলিত বৈসাবি উদযাপন কমিটি আজ বুধবার সকালে খাগড়াছড়ি শহরে এক বর্ণাঢ্য সম্প্রীতির শোভাযাত্রা বের করে। জেলা সদরের মধুপুর বাজার থেকে বিভিন্ন সাজে সজ্জিত হয়ে বর্ণাঢ্য র‌্যালিটি শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। র‌্যালিতে নেতৃত্ব দেন সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চঞ্চুমণি চাকমা ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান রণিক ত্রিপুরা । পাহাড়ী সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিচ্ছদ ছিল এ র‌্যালির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। খাগড়াছড়িতে এবার বৈসাবি উৎসব পালিত হচ্ছে ব্যাপক আনন্দ-উল্লাসের মাধ্যমে। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করায় বৈসাবি উৎসবের আনন্দে পাহাড়ীরা মাতোয়ারা। সঙ্গে বাঙালী জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের ফলে অনুষ্ঠানটি হয়ে ওঠে সম্প্রীতির এক সেতুবন্ধন। বর্ষবরণ উপলক্ষে এ বছর খাগড়াছড়িতে পার্বত্য জেলা পরিষদ,সর্বজনীন বৈসাবি উদযাপন কমিটি,ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট,মারমা ঐক্য পরিষদ,মারমা উন্নয়ন সংসদ, ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদসহ বিভিন্ন সংগঠন ঐতিহ্যবাহী নানা খেলাধুলাসহ সপ্তাহব্যাপী নানা কর্মসূচী পালন করেছে। অপরদিকে সকালে পানখাইয়া পাড়া ঐতিহ্যবাহী বটতলা এলাকায় মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই উপলক্ষে ৫ দিনব্যাপী বিভিন্ন খেলাধুলার উদ্বোধন করেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরি চৌধুরী ও মারমা উন্নয়ন সংসদের সভাপতি চাইথোয়াই মারমা।
×