ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নববর্ষ পালনের সঙ্গে ধর্মের কোন যোগসূত্র নেই

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৩ এপ্রিল ২০১৭

নববর্ষ পালনের সঙ্গে ধর্মের কোন যোগসূত্র নেই

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নববর্ষ উৎসবকে ‘দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, বাংলা নববর্ষ পালন ও ধর্মের মধ্যে কোন যোগসূত্র নেই। এই উৎসব হচ্ছে আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এটা যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে। সকল ধর্মের মানুষ একসঙ্গে বাংলা বছরের প্রথম দিন উদযাপন করে। এখানে ধর্মকে টেনে আনার কোন যৌক্তিকতা নেই। বর্ষবরণের অনুষ্ঠান নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে জানিয়ে দেশবাসীকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি। বুধবার প্রধানমন্ত্রী তাঁর কার্যালয়ে নরসিংদী জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আবদুল মতিন ভূঁইয়ার শপথ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোগল শাসনামল থেকে বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হচ্ছে এবং একই সময়ে মঙ্গল শোভাযাত্রাও শুরু হয়। ‘মঙ্গল’ শব্দটি হিন্দু ধর্ম থেকে উদ্ভূত নয়। এছাড়া হালখাতাও মোগল আমল থেকেই পালিত হয়ে আসছে। এজন্য এ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কোন সুযোগ নেই। তিনি বলেন, পয়লা বৈশাখ একটি সর্বজনীন উৎসব। সকল ধর্মের মানুষ এই উৎসবে যোগ দেয়। এটাই একমাত্র উৎসব, যা সব ধর্মের মানুষ একত্রে পালন করে। চীন ও ইরানেও নববর্ষ পালিত হয়। তিনি বলেন, মঙ্গল শব্দ শুনলে যে হিন্দু শব্দ হবে তা কখনও গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা তো বাংলায় মঙ্গলবার বলি তাহলে কেউ বলবে এটা হিন্দুবার হয়ে গেছে। তাহলে মঙ্গল শোভাযাত্রা করলে হিন্দুয়ানী হয় কি ভাবে? তিনি বলেন, যারা এটা বলছেন তারা কি বুঝে বলছেন সেটা আমি জানি না। এটা বাংলাদেশের মানুষের বোঝা উচিত, এই একটা দিন সকল দেশের মানুষ এক হয়ে দিনটি পালন করে। প্রসঙ্গত, নববর্ষের সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। বাংলা নববর্ষের এ অনুষ্ঠানকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী। চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা ইউনেস্কো ‘নির্বস্তুক সাংস্কৃতিক’ ঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে গত বছর। প্রধানমন্ত্রী দেশের জাতীয় মাছের উৎপাদন বাড়াতে পয়লা বৈশাখে ইলিশ না খাওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, আমি পয়লা বৈশাখে ইলিশ না ধরতে ও না খেতে আহ্বান জানাই। বরং এর পরিবর্তে খিচুড়ি, পান্তা ভাত, সবজি, ডিম ভাজি ও পোড়া শুকনো মরিচ খাওয়া যায়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী নরসিংদী জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের শপথবাক্য পাঠ করান। স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন (এলজিআরডি) বিভাগের সচিব আবদুল মালেক অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। এ সময় এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব সুরাইয়া বেগম উপস্থিত ছিলেন। আবদুল মতিন ভূঁইয়া গত ১৬ মার্চ নরসিংদী জেলা পরিষদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। পয়লা ফেব্রুয়ারি সাবেক চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামানের ইন্তেকালে পদটি শূন্য হয়। পহেলা বৈশাখ শোভাযাত্রা বের করবে আ’লীগ পহেলা বৈশাখে বর্ষবরণ উপলক্ষে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ বর্ণিল শোভাযাত্রা বের করবে। আগামীকাল শুক্রবার সকাল ৭টায় রাজধানীর পুরনো ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে থেকে এ শোভাযাত্রাটি বের হয়ে ইংলিশ রোড হয়ে রায় সাহেব বাজার মোড় হয়ে তাঁতীবাজার মোড় হয়ে জনসন রোড হয়ে ফুলবাড়ীয়া, গোলাপশাহ মাজার হয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হবে। শোভাযাত্রায় বাঙালীর লোকজ সংস্কৃতির নানা মোটিভ শোভা পাবে। শোভাযাত্রার উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি। এছাড়া এক বর্ণাঢ্য, জাঁকজমকপূর্ণ, বাঙালী সংস্কৃতির ঐতিহ্যে পরিপূর্ণ, বর্ণিল শোভাযাত্রা করবে রাজধানীর বিভিন্ন থানা-ইউনিয়ন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ।
×