ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মমতার প্রস্তাব শুভঙ্করের ফাঁকি ॥ বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১১ এপ্রিল ২০১৭

মমতার প্রস্তাব  শুভঙ্করের ফাঁকি ॥  বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তিস্তার বদলে মমতার পানি ভাগাভাগির বিকল্প প্রস্তাবকে ভারতের ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’ বলে মনে করছে বিএনপি। দলের সিনিয়ন যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মন্তব্য করেছেন তিস্তার পরিবর্তে ছোট ছোট চারটি নদীর পানি ভাগাভাগির যে প্রস্তাব পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়েছেন শুভঙ্করের ফাঁকি বলে তা মেনে নেয়া সম্ভব নয়। একই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে উজাড় করে দেয়ার বিনিময়ে বাংলাদেশের প্রাপ্তির খাতা শূন্য। সোমবার পল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব মন্তব্য করেন। বলেন, আমাদের প্রধান দাবি তিস্তার পানি। এ বিষয়ে ভারত একটুও ছাড় দিচ্ছে না। মমতা বলে দিয়েছেন, তিস্তার পানির কোন ভাগ দেয়া হবে না। অথচ আমাদের প্রধানমন্ত্রী সবকিছু দিয়ে দিলেন। তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, উনি উনার কথা বলেছেন। এটা কখনও যুক্তিসঙ্গত নয়। উনি নানা ধরনের হাওয়াই মিঠাই দেখাবেন, আমরা তো একেবারে ইয়ে করে থাকি না, আমরা তো বুঝি। এটা চলবে না। আমরা বলতে চাই, আমাদের সীমান্ত থেকে তিস্তার অববাহিকায় পানির প্রবাহের ন্যায্য হিস্যা আমাদের দিতে হবে। পাহাড় থেকে নেমে আসা পানির পাওনা চাই। এখান থেকে এক বালতি পানি কেন, এক ছটাক পানিও প্রত্যাহার করা যাবে না। সবটুকু হিসাব করে আমাদের হিস্যা দিতে হবে উল্লেখ করেন। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবি নিয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে যাবে বিএনপি উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার জন্য আন্দোলন যেভাবেই করা দরকার করা হবে। আন্তর্জাতিক ফোরাম থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি জায়গায় সোচ্চার হব। সংগ্রাম করব, আন্তর্জাতিক দরবারে আমরা এটা তুলে নিয়ে যাব। পানি প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক সংগ্রামও চলবে। আমরা সামগ্রিকভাবে আমাদের এই দাবি সোচ্চার রাখব উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মমতার কথায় পরিষ্কার হয়েছে তিস্তা চুক্তির আলোর মুখ দেখছে না। তাহলে কি প্রধানমন্ত্রী শুধু বাংলাদেশকে ভারতের কাছে উজাড় করে দিতেই দিল্লী গেছেন? এ জন্যই কি ভারতের প্রধানমন্ত্রী প্রটোকল ভেঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে দিল্লী বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন? সংবাদ সম্মেলনে ভারতের সঙ্গে করা সমস্ত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক জনগণের সামনে প্রকাশের দাবি জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে জনমত উপেক্ষা করে প্রতিরক্ষাসহ ৩৬টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেছেন। এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষরের বিষয়ে জনগণ কিছুই জানে না। না জানিয়ে অন্য দেশের সঙ্গে চুক্তি নিশ্চয়ই অশুভ উদ্দেশে করা হয়। তিনি মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করতে অবিলম্বে ভারতের সঙ্গে করা সব চুক্তি জনসম্মুখে প্রকাশের জোর দাবি জানান। প্রতিরক্ষা বিষয়ক সমঝোতার বিষয়ে রিজভী বলেন, নিশ্চয়ই এটি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অবজ্ঞা করেই করেছেন। প্রতিরক্ষা সমঝোতা স্মারকে শুভঙ্করের ফাঁক রেখেছেন। পাঁচ বছর মেয়াদী সমঝোতা স্মারক করেছেন, কিন্তু এটা নবায়ন করা যাবে। তিনি আরও বলেন, আমরা নিশ্চয়ই- বন্ধুত্বের জন্য যে উপঢৌকন দেয়া দরকার, আপনি ইলিশ মাছ নিয়ে গেছেন, ধুতি নিয়ে গেছেন- আমরা তার বিরুদ্ধে নই। কিন্তু আমরা স্বাধীনতা দিয়ে দেব, সীমান্ত দিয়ে দেব, পানি দিয়ে দেব, এটা তো হতে পারে না। এর বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার থাকব উল্লেখ করেন। এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভোটারবিহীন আওয়ামী লীগ সরকার জনগণকে অবজ্ঞা করে আজ্ঞাবাহীদের খুশি করেছেন। তবে যতটুকু জানতে পেরেছি এই চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক হচ্ছে ৫ বছরের জন্য এবং এটা নবায়নযোগ্য। বাংলাদেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে দেশবিরোধী সব চুক্তি গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। জনগণকে না জানিয়ে অন্যদেশের সঙ্গে চুক্তি নিশ্চয়ই অশুভ উদ্দেশেই করা হয়। এ ধরনের চুক্তিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে অবজ্ঞা করা হয়। ভবিষ্যতে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে মানুষ চিন্তিত।’ বিএনপির আমলে তিস্তা চুক্তি হয়নি কেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, আমরা দাবি জানিয়েছি, হয়নি। কিন্তু শেখ হাসিনা এবং তার দলের তো ভারতের সঙ্গে মাখামাখির সম্পর্ক। তারা কেন পারছে না উল্লেখ করেন? তিস্তার বিকল্প হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর দেয়া প্রস্তাবেব বিষয়ে বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর দোহাই দিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তিস্তা চুক্তি হবে, হতে পারে বলে যে সম্ভাবনার কথা বলছেন তা অযৌক্তিক। মধুখালীতে সন্ত্রাসী কর্মকা- চলছে ॥ সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেন, আগামী ১৬ এপ্রিল ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায় চারটি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হবে। সেখানে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোসহ সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি পুলিশের ওসিও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন। সরকারী সন্ত্রাস মোকাবিলা করে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ব্যর্থ হলে বর্তমান সিইসি ঠুঁটো জগন্নাথ হিসেবেই গণ্য হবেন উল্লেখ করেন। সংবাদ সম্মেলনে তৈমুর আলম খন্দকার, আতাউর রহমান ঢালী, সাবেক সাংসদ শাহ মোঃ আবু জাফর, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, শামা ওবায়েদ, শাহিন শওকত, মুনির হোসেন, আবু নাসের মোঃ রহমাতুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×