ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি-জামায়াত হেফাজতের রাজনীতির দিন শেষ

কওমী মাদ্রাসার লাখ লাখ শিক্ষার্থী সরকারী স্বীকৃতি পাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১১ এপ্রিল ২০১৭

কওমী মাদ্রাসার লাখ লাখ শিক্ষার্থী সরকারী স্বীকৃতি পাচ্ছে

বিভাষ বাড়ৈ ॥ কওমী মাদ্রাসার লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে নিয়ে বিএনপি-জামায়াত ও হেফাজতের রাজনীতির অবসান হতে চলেছে। আল্লামা আহমেদ সফী, আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদসহ কওমী মাদ্রাসার সকল বোর্ডের শীর্ষ আলেমদের দাবির প্রেক্ষিতেই কওমী মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে সরকার। কারও রাজনৈতিক স্বার্থে কাজ না করে কওমী আলেমরা শিক্ষার্থীদের সনদের পক্ষে অবস্থান নেয়ার প্রেক্ষিতে আজ তিন শতাধিক আলেম ওলামাসহ ইসলামি চিন্তাবিদদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের বৈঠকেই স্বীকৃতির ঘোষণা দিতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। ঘোষণায় কওমী মাদ্রাসার সর্বোচ্চ শিক্ষাস্তর দাওরা-ই হাদিসকে স্নাতকোত্তরের সমমান দেয়া হতে পারে। জানা গেছে, কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতি নিয়ে কথা বলার জন্য কওমী মাদ্রাসার ৬টি বোর্ডের ৩ শতাধিক আলেম ওলামাকে আজ সন্ধ্যায় গণভবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকের জন্য আহমেদ শফিসহ ৩ শীর্ষ আলেমরা সোমবারই ঢাকা এসেছেন। দেশের শীর্ষ এ আলেমরা অনেকেই এত দিন বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক স্বার্থে কাজ করায় আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে স্বীকৃতি নেয়ার বিরোধিতা করেছেন। তবে সরকারের উদ্যোগ ও আলেম সমাজের অনেকের স্বীকৃতির দাবিতে আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আজ লাখ লাখ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর কাক্সিক্ষত সনদের স্বীকৃতির ঘোষণা আসছে। এ উদ্যোগের অন্যতম হলেনÑ ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগায়ের ইমাম ও খতিব আল্লামা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, আলেম সমাজের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সনদের স্বীকৃতির ঘোষণা দেবেন বলে আমরা আশাবাদী। কারণ এ বিষয়ে এখন সকলেই একমত। একটি বিশাল কাজ হতে যাচ্ছে। লাখ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য একটি বড় পাওয়া হবে এ স্বীকৃতি। এ জন্য শেখ হাসিনার সরকার ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। তিনি আরও বলেন, আমাদের সকলের জন্য ভাল খবর যে আহমেদ সফী সাহেবসহ যারা এক সময় সনদের বিরোধিতা করেছে। তারা এখন সকলেই একমত যে এ সনদ প্রয়োজন। সবাই দাবি জানিয়েছেন। নানা উদ্যোগের পরই প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বসছেন। সরকারী হিসাবে ২০১৫ সালে কওমী মাদ্রাসার সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ৯০২টি। শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ। এ হিসাবের বাইরেও কয়েক হাজার মাদ্রাসা রয়েছে। প্রায় ৮০ ভাগ মাদ্রাসা বেফাকের নিয়ন্ত্রণে। আরও পাঁচটি আঞ্চলিক বোর্ড বাকি মাদ্রাসাগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া প্রতিবেদনে কওমীর সর্বোচ্চ শিক্ষা দাওরা-ই হাদিসকে স্নাতকোত্তর, মারহাতুল ফযিলতকে স্নাতক, সানবিয়াহ খাসসাহকে এইচএসসি ও সানবিয়াহ আম্মাহকে এসএসসির সমমান দেয়ার সুপারিশ করেছিল। সিলেবাসের বিশদ রূপরেখাও ছিল সুপারিশে। প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পাঠ্যক্রমে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজি, বিজ্ঞান, গণিত, সমাজবিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তির মতো সাধারণ শিক্ষার বিষয়াবলি আবশ্যিক করার সুপারিশ করা হয়। তবে আহমদ শফী ও তার সমর্থকদের অভিযোগ ছিল, সরকার কওমীর শিক্ষাকে স্বীকৃতি দেয়ার নামে মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ্যক্রম চালু হলে মাদ্রাসার স্বকীয়তা থাকবে না বলে অপপ্রচারও চালানো হয়।
×