ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অন্য রাষ্ট্রে হস্তক্ষেপ বন্ধের প্রস্তাব নিয়ে আইপিইউ সম্মেলনে বিতর্ক

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৩ এপ্রিল ২০১৭

অন্য রাষ্ট্রে হস্তক্ষেপ বন্ধের প্রস্তাব নিয়ে আইপিইউ সম্মেলনে বিতর্ক

উত্তম চক্রবর্তী ॥ কোন সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের হস্তক্ষেপ কিংবা নাক গলানো বন্ধে জেনেভায় প্রণীত খসড়া প্রস্তাব নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো। দীর্ঘ এক বছর ধরে আলোচনার পর জেনেভায় ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সম্মেলনে গৃহীত এ খসড়া প্রস্তাবে হস্তক্ষেপ বন্ধের সুপারিশটি কেউ কেউ বাতিলের দাবি জানালেও বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো এ প্রস্তাবকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে। একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের নাক গলানো বন্ধে সংসদের ভূমিকা নিয়ে অনুষ্ঠিত দীর্ঘ বিতর্কে রবিবার অংশ নেয়া প্রায় ৪০ দেশের মধ্যে ৩৫টি দেশই অন্যদেশে হস্তক্ষেপ বন্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তিনদিনের আলোচনা শেষে আগামী বুধবার ভোটাভুটির মাধ্যমে চূড়ান্ত রেজ্যুলেশন গৃহীত হবে। রবিবার ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) ১৩৬তম এ্যাসেম্বলির দ্বিতীয় দিনে ‘পিস এ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি (শান্তি ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা) শীর্ষক ‘কোন সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বন্ধে এমপিদের ভূমিকা’ নিয়ে অনুষ্ঠিত সাধারণ আলোচনায় এ ইস্যুতে দীর্ঘ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে পাঁচ দিনের এই সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে একুশে আগস্ট আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা মামলা এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যাকা-ের বিচারের দীর্ঘসূত্রতার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইপিইউ। আইপিইউর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বাংলাদেশের কাছে কৈফিয়ৎ তলব করা হয়। রবিবার বিকেলে সম্মেলন চলাকালে এ বিষয়ে দীর্ঘ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আফগানিস্তানের সংসদ সদস্য ফৌজিয়া কাফি’র সভাপতিত্বে এই শুনানিতে অংশ নেন বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা ও ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট মোঃ ফজলে রাব্বী মিয়া ও জাসদের সংসদ সদস্য মইন উদ্দীন খান বাদল। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে ‘পিস এ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি (শান্তি ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা) শীর্ষক এ্যাসেম্বলিতে আইপিইউ সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী ও সেক্রেটারি জেনারেল মার্টিন চুনগুং উপস্থিত ছিলেন। দ্বিতীয় দিনে অনুষ্ঠিত সকাল থেকে রাত অবধি অনুষ্ঠিত বিভিন্ন এ্যাসেম্বলিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ২৫ মার্চ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত গণহত্যার বিষয়টি ছাড়াও রোহিঙ্গা ইস্যুটি বিশ্ব নেতাদের সামনে জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়। সার্বভৌম দেশে অন্য দেশের হস্তক্ষেপ প্রসঙ্গে সাধারণ আলোচনায় উন্নয়নশীল দেশগুলো অন্য দেশে হস্তক্ষেপ বন্ধের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়ে বলেছে, শুধু বিশেষ পরিস্থিতিতে যদি খুব প্রয়োজন পড়ে তবে জাতিসংঘের ম্যান্ডেট নিয়ে হস্তক্ষেপ করা করা যেতে পারে। অন্যদিকে জার্মানিসহ চারটি উন্নত দেশের জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টিতে সংশোধনী আনার দাবি জানিয়ে বলেন, ইতিহাসে শত শত নাক গলানোর উদাহরণ আছে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে নাক গলাতে হয়। তাই এ খসড়া বাতিল করা উচিত। এই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একাত্তরে পাকিস্তানের গণহত্যা এবং রোহিঙ্গা ইস্যুটি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সামনে তুলে ধরা হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা এ্যাডভোকেট মোঃ ফজলে রাব্বী মিয়া জনকণ্ঠকে জানান, শান্তি ও নিরাপত্তার বিষয়টি বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান সুস্পষ্ট। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কোন বিষয়ে নাক গলানোকে বাংলাদেশ সমর্থন করে না। বাংলাদেশে কূটনৈতিক পলিসিও সেটা সমর্থন করে না। তাই কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের হস্তক্ষেপ বন্ধে আইপিইউ’র উদ্যোগে বাংলাদেশ সক্রিয় সমর্থন জানাবে। এদিকে আইপিইউ’র খসড়া প্রস্তাব সমর্থন করে এ সংক্রান্ত বৈঠকে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ প্রতিনিধি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি একটি বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যা যার মাধ্যমে ৩০ লাখ মানুষ মারা গেছে এবং দুই লাখ নারীকে অসম্মান করা হয়েছে। সেই কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশ এটিকে সমর্থন করে। বাংলাদেশ অন্য দেশের কোন বিষয়ে নাক গলানোকে সমর্থন করে না। এ ক্ষেত্রে শুধু বিশেষ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের ম্যান্ডেট নিয়ে ইন্টারফেয়ার করা যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, অনেক দেশ এনজিওর মাধ্যমে নাক গলানোর চেষ্টা করে। এটি বন্ধ করতে হবে। আইপিইউ’র খসড়া প্রস্তাবে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত কোন সরকারকে মিলিটারি বা অন্য যে কোন শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে উৎখাতের চেষ্টা চরম নিন্দা জানানো হয়। আর এ ক্ষেত্রে দেশের সুশীল সমাজ যাতে ভূমিকা না রাখে সে বিষয়ে সংসদকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়। এ খসড়া সমর্থন করে চীন জানিয়েছে, বিদেশী শক্তি এবং এর প্রভাব গ্রহণযোগ্য নয়। ২০০৩ সালে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের অজুহাত দেখিয়ে একটি দেশ ইরাক আক্রমণ করেছিল কিন্তু পরে দেখা গেছে সেখানে এ ধরনের কোন অস্ত্র নেই। রাশিয়া পার্লামেন্টের প্রতিনিধিরাও এই খসড়া প্রস্তাব সমর্থন করেন। এ্যাডভোকেট মোঃ ফজলে রাব্বী মিয়া জানান, বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার বিষয়ে নেয়া খসড়া প্রস্তাবটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কয়েক বছর ধরে আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তান ক্রমাগত নাক গলিয়ে যাচ্ছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে এ বিষয়ে পাকিস্তানের সরকার ও তাদের জাতীয় ও প্রাদেশিক সংসদগুলো বিভিন্ন ধরনের বিবৃতি দিয়েছে ও প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের সরকার ও জনগন তার চরম বিরোধিতা করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বড় সময় সামরিক শাসনের অধীনে কেটেছে। ১৯৭৫ সালে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মজিবুর রহমানকে হত্যা করার মাধ্যমে বাংলাদেশে সামরিক শাসনের সূচনা হয়। এরপর জিয়াউর রহমান ও এইচ এম এরশাদ সামরিক শাসন জারি করেছেন। সর্বশেষ ২০০৭ সালে আবার সিভিলিয়ান সরকারের আড়ালে সামরিক সরকার দুই বছর বাংলাদেশ শাসন করেছে। আইপিইউ সম্মেলনেও বিষয়গুলো উত্থাপন করা হয়েছে বলে তিনি জানান। দিনব্যাপী আলোচনায় অংশগ্রহণকারী ৪০টি দেশের মধ্যে ৩৫টিই বাংলাদেশের অবস্থানের পক্ষে ছিল বলে জানান বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ওই প্রস্তাব ছাড়াও সেখানে আরও তিনটা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে প্যালেস্টাইন, সিরিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যাগুলো উঠে এসেছে। তিনি বলেন, পৃথিবীর শক্তিশালী কোন কোন দেশ কখনও দুর্নীতি, কখনও গণতন্ত্র-জঙ্গীবাদ-মানবাধিকারের নামে সার্বভৌম নানা দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে। এতে করে ওই দেশের কোন ভাল হয় না, বরং সারা পৃথিবীর অবস্থা খারাপ হয়। এই হস্তক্ষেপের জায়গা বন্ধ করতেই বেশিরভাগ দেশগুলোর প্রতিনিধিরাই কথা বলেছেন। বিকেলে সম্মেলনস্থলে স্থাপিত মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিংকালে মিডিয়া রিলেশন অফিসার জেন মিলিগ্যান জানান, আইপিইউ সম্মেলনের বিভিন্ন বৈঠকে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সাধারণ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হলেও বিষয়গুলো নিয়ে কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এ নিয়ে আলোচনার পর আগামী বুধবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার ॥ একুশে আগস্ট আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা মামলা এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যাকা-ের বিচারের দীর্ঘসূত্রতার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইপিইউ। আইপিইউ’র পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বাংলাদেশের কাছে কৈফিয়ৎ তলব করা হয়। রবিবার বিকেলে সম্মেলন চলাকালে এ বিষয়ে দীর্ঘ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আফগানিস্তানের সংসদ সদস্য ফৌজিয়া কাফির সভাপতিত্বে এই শুনানিতে অংশ নেন বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতা এ্যাডভোকেট মোঃ ফজলে রাব্বী মিয়া ও সদস্য মইন উদ্দীন খান বাদল। শুনানি শেষে জাসদের সংসদ সদস্য মইন উদ্দীন খান বাদল সাংবাদিকদের জানান, আমরা শুনানিতে অংশ নিয়ে মামলার বিচারে বিলম্বের কারণ ব্যাখ্যা করেছি। আমরা জানিয়েছি বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের জজ মিয়া নাটকের কারণে মামলার বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। এরপর বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে মামলাটির বিচারের জন্য নতুন করে উদ্যোগ নেয়। কিন্তু মামলার বিচার করতে গিয়ে একে একে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার পুত্র তারেক রহমান, একাধিক জেনারেল, পুলিশের আইজিসহ অনেকের নাম আসছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে বিচার কাজ চলছে। এটা যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই না হলে আপনারাই (আইপিইউ) তাদের মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন। আর কিবরিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে দু’বার আপত্তি জানানোর এই মামলাটির বিচারে বিলম্ব হয়েছে বলে আমরা তাদের জানিয়েছি। আজ একই স্থানে ভেনিজুয়েলার পরিস্থিতি নিয়ে শুনানি হবে বলে তিনি জানান। অভিবাসন ইস্যুতে ট্রাম্পের সমালোচনা মেস্কিকোর ॥ আইপিইউ’র সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের এ্যাসেম্বলিতে বিশ্বব্যাপী অভিবাসন ইস্যুতে একটি আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন মেক্সিকোর সিনেটর মার্শেলা গুয়েরা ক্যাস্টটিলো। ‘বিশ্বের অভিবাসন নীতির কঠোরতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি’ শীর্ষক উত্থাপিত প্রস্তাবে ক্যাস্টটিলো মার্কিন নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এ সংক্রান্ত অবস্থানের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি প্রস্তাবে বলেন, জাতিসংঘের জরিপ অনুযায়ী ২০১৫ সালে সারাবিশ্বে মোট অভিবাসীর সংখ্যা প্রায় ২৪৪ মিলিয়ন। অর্থনৈতিক, সামাজিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক ফ্যাক্টর এবং সামরিক সংঘর্ষের কারণে অভিবাসীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গৃহীত অভিবাসন নীতি সরাসরি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। নির্বাহী আদেশে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সাত বৃহৎ মুসলিম দেশের নাগরিকদের আমেরিকা প্রবেশে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যা মোটেই কাম্য নয়। আর আমেরিকা তার দক্ষিণাঞ্চলের সীমান্তে যে দেয়াল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে সেটি শুধু পরিবেশেরই ক্ষতি করবে না, সীমান্ত এলাকার সামাজিক স্থিতিও বিনষ্ট করবে। আইপিইউ’র নতুন সদস্য দু’টি দেশ ॥ ১৩৬তম সম্মেলনের সাধারণ অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন রবিবার নতুন দু’টি দেশকে সদস্যপদ দেয়ার প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। এই দেশ দু’টি হচ্ছেÑ মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র ও টুভালু। এনিয়ে আইপিইউ’র সদস্য দেশের সংখ্যা ১৭৩-এ উন্নীত হলো। আইপিইউ প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সাধারণ অধিবেশনে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই বৈঠকে সদস্য দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। বৃহৎ আয়োজন করতে পেরে দেশ গর্বিত Ñস্পীকার ॥ এদিকে আইপিইউ সম্মেলনে আগত যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিদল রবিবার স্পীকার ও সিপিএ নির্বাহী কমিটির সভাপতি ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাত করেছেন। যুক্তরাজ্যের ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সভাপতি ও ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সিলেক্ট কমিটির সহ-সভাপতি নিজেল ইভান্স এমপির নেতৃত্বে আসা প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানিয়ে স্পীকার বলেন, বাংলাদেশে আইপিইউ এ্যাসেম্বলির মতো বৃহৎ আয়োজন করতে পেরে গর্বিত। আইপিইউ’র দেশগুলোর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এ এ্যাসেম্বলিকে অন্যমাত্রা যোগ করেছে। যুক্তরাজ্য ছাড়াও সম্মেলনে আসা থাইল্যান্ড, পোল্যান্ড ও মঙ্গোলিয়ার প্রতিনিধিদলের সদস্যরাও পৃথক পৃথকভাবে স্পীকারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। স্পীকার বলেন, বর্তমান সরকার দেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। এর ফলে আর্থসামাজিক সূচকে বাংলাদেশ দ্রুত উন্নতি লাভ করছে। শিক্ষা, নারী, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে নারীর অগ্রাধিকার নিশ্চিতকরণ, জেন্ডার সেনসেটিভ বাজেট প্রণয়নের মতো কর্মসূচী গ্রহণের কারণে বাংলাদেশে জেন্ডার সমতা অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছে। নিজেল ইভান্স এ সময় বলেন, ১৩৬তম আইপিইউ এ্যাসেম্বলি বাংরাদেশ অত্যন্ত সুন্দর আয়োজন করেছে। স্বাধীনতা সংগ্রামসহ সকল উন্নয়ন কর্মকা-ে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের পাশে ছিল এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। বর্তমান বাংলাদেশের উন্নয়ন বিশ্ব সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। প্রতিনিধিদল বাংলাদেশকে একটি মডেল ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যায়িত করেন। সম্মেলন কেন্দ্রে আইপিইউ মেলা ॥ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে একটি আইপিইউ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এ মেলায় বিদেশীদের পদচারণায় ছিল মুখরিত। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালনায় এ মেলায় বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, নৃ-তাত্ত্বিক নিদর্শন, সংস্কৃতি ও বাংলাদেশে উৎপাদিত রফতানিযোগ্য বিভিন্ন পণ্যের সমাহার রয়েছে। মেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগগুলোকে ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে। এছাড়া মেলায় ওষুধ, চামড়াজাত শিল্প, তৈরি পোশাক শিল্প, প্লাস্টিক শিল্প, অলঙ্কার সামগ্রী, পর্যটন, চা, তাঁত, টেরাকোটা, মৃৎ শিল্প, মিষ্টি ও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী, দেশীয় কুটির শিল্প, ঢাকার ঐতিহ্যবাহী জামদানি শাড়ি, বইসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য সমন্বয়ে স্টল দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন মেলায় প্রচুর দর্শক ও ক্রেতা সমাগম লক্ষণীয়। মেলায় মানি চেঞ্জিংয়ের ব্যবস্থাসহ ব্যাংকিং সুবিধাও রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য, গত শনিবার রাতে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত বৃহত্তর এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রবিবার সকাল থেকে বিআইসিসিতে মূল অধিবেশন শুরু হয়। সম্মেলন উপলক্ষে নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে রাখা হয়েছে পুরো এলাকা। অংশগ্রহণকারীদের কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হয়েই মূল সম্মেলন কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হয়। এ জন্য বিআইসিসির সামনের রাস্তায় যান চলাচল সীমিত রাখা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীদের বিপুল পরিমাণ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
×