ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শিল্পকলায় সিলেটের মরমী গানের আসর

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২ এপ্রিল ২০১৭

শিল্পকলায় সিলেটের মরমী গানের আসর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শুঁয়া উড়িল উড়িল জীবেরও জীবন...। সিলেটের লোককবি শীতালং শাহ রচিত গানটি দরদ দিয়ে গাইছিলেন ছয় কণ্ঠশিল্পী। তিন নারী আর তিন পুরুষ শিল্পীর সম্মেলক কণ্ঠে গাওয়া গানটি শনিবার শোনা গেল চৈতালী সন্ধ্যায়। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে এদিন বসেছিল সিলেটের মরমী গানের আসর। শহুরে শ্রোতারা প্রাণভরে শুনেছে শিকড়ের কাছে নিয়ে যাওয়া হাছন রাজা থেকে শুরু করে রাধারমণ দত্ত, শাহ আব্দুল করিম, দূরবীণ শাহসহ সিলেটের লোককবিদের গান। দেশের শিল্পীদের সঙ্গে সিলেটের মরমী গানের সুরে শ্রোতাদের মাতিয়েছে কলকাতা থেকে আসা নারীদের লোকগানের দল মাদল। সিলেটের মরমী গান শীর্ষক এ সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে রাধারমণ সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্র। সঙ্গীত আসরটি উৎসর্গ করা হয় সদ্য প্রয়াত রাজনীতিবিদ সুরঞ্জিৎ সেনগুপ্তকে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও গানের দল মাদলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ড. তপন রায়। রাধারমণ সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্রের সহসভাপতি ডাঃ হারিসুল হকের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিশ^জিৎ রায়। আয়োজনটি সঞ্চালনা করেন হাসান মাহমুদ। সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, কলকাতার গানের দল মাদল একটি অসাধারণ দল; যা অনন্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে কাজ করে। তারা বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করে। বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক দৃঢ়। এ সম্পর্ক বাড়াতে সাংস্কৃতিক বিনিময় বাড়াতে হবে। দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক আরও জোরালো হবে উভয় দেশের মানুষের বন্ধুত্বের মাধ্যমে। সংস্কৃতি হচ্ছে মানুষে মানুষে বন্ধুত্ব গড়ার অন্যতম বাহন। সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, শুধু শহরকেন্দ্রিক সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমে অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে লড়াই করা যাবে না। সংস্কৃতি চর্চা ছড়িয়ে দিতে হবে প্রান্তিক পর্যায়ে। দেশব্যাপী এই শিল্পের আলো ছড়িয়ে দিতে না পারলে জঙ্গীবাদ মোকাবেলা কঠিন হবে। আলোচনা শেষে মঞ্চে আসেন রাধারমণ সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের শিল্পীরা। ছয়জনের দলটি প্রথমেই গেয়ে শোনায় হাছন রাজার গান ‘প্রেম বাজারে বিকে মানিক ও সোনারে’। পরের গানে আশ্রয় করে রাধারমণ দত্তকে। গেয়ে শোনান ‘সজনী তোরা জল আনিতে যাবেনি’ ও ‘সুরধুনীর কিনারায় সোনার নূপুর’। শাহ আবদুল করিমকে স্মরণ করে পরিবেশন করে ‘গান গাই আর মনরে বুঝাই’। সব শেষে পরিবেশন করে শীতালং শাহের গান ‘শুঁয়া উড়িল উড়িল জীবেরও জীবন’। এরপর একক কণ্ঠের গান নিয়ে মঞ্চে আসেন খায়রুল ইসলাম। গেয়ে শোনান আরকুম শাহের ‘সোনার পিঞ্জিরা আমার’ এবং জবান আলীর ‘প্রেমের মানুষ ঘুমাইলে চাইয়া থাকে’। বিশ^জিৎ রায়ের কণ্ঠে শোনা যায় দীন ভবানন্দের গান ‘মথুরার সময় গেল গইয়ারে’, গিয়াসউদ্দিনের ‘মরিলে কান্দিস না আমায় দায়’ ও রাধারমণ দত্তের ‘কেমন আছে কমলিনী রাই’। এর পর মঞ্চে আসে এই সঙ্গীতসন্ধ্যায় অন্যতম আর্কষণ মাদল। দলটি একে একে গেয়ে শোনায় ছয়টি গান। গেয়ে শোনায় রাধারমণ দত্তের ‘জলের ঘাটে দেইখ্যা আইলাম কি সুন্দর শ্যামরায়’, হেমাঙ্গ বিশ^াসের ‘আসমানেতে দেয়া ডাকে’, শাহ আবদুল করিমের ‘আমার মন কান্দে প্রাণ কান্দেরে’, শেখ ভানুর ‘নিশীথে যাইও ফুল বনেরে ভ্রমরা’, বৌ নাচের গান ‘সোহাগ চাঁদ বদনী ধনি নাচতো দেখি’ ও দূরবীণ শাহের ‘কাইন্দ না কাইন্দ না গো রাই’। সব শেষে গান শোনান মাদলের প্রতিষ্ঠাতা তপন রায়। গেয়ে শোনান হাছন রাজার ‘ছাড়িলাম হাছনের নাওরে’, ইদম শাহের ‘কান্দিয়া আকুল হইলাম’, রাধারমণ দত্তের ‘শ্যামকালিয়া সোনা বন্ধুরে’ ও শাহ আবদুল করিমের ‘আর জ¦ালা সয় না’। খেলাঘর শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক উৎসবের সমাপ্তি ॥ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে শেষ হলো কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর আয়োজিত তিন দিনের খেলাঘর জাতীয় শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক উৎসব। শনিবার ছিল উৎসবের শেষদিন। এদিন সকালে গণসঙ্গীত, লোকনৃত্য ও একক অভিনয় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং বিকেলে সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক। খেলাঘর কেন্দ্র্রীয় আসরের সভাপতিম-লীর চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা পান্না কায়সারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ ও শিল্পী মিতা হক। ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, বাবা-মায়েরা আজকাল কোচিং কোচিং করে ছেলেমেয়ের জীবন একেবারে শেষ করে দিচ্ছে। একটাই কথা, জিপিএ-ফাইভ পেতেই হবে। জিপিএ-ফাইভ না পেলে সে কি বকাবকি। জিপিএ-ফাইভ না পেলে তারা মনে করে, জীবনটাই শেষ হয়ে গেল। তিনি বলেন, আমি মুচলেকা লিখে দিতে পারি কোচিং করে কোন লাভ হয় না। জীবন তো একটাই। এ সময় তো জীবনের সবচেয়ে মজা করার সময়। পড়াশোনা হবে আনন্দময়। যারা কোচিং করে না তারাই তো আনন্দময় পরিবেশে এই জীবন উদযাপন করতে পারে।
×