ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অসৎ সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান

আর দুর্নীতি করব না, দুদকে যাব না- শপথ নিন ॥ মুহিত

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৩০ মার্চ ২০১৭

আর দুর্নীতি করব না, দুদকে যাব না- শপথ নিন ॥ মুহিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসৎ পথ থেকে ফিরে এসে দুর্নীতি করব না, দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) যাব না বলে শপথ করার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। একইসঙ্গে সরকার দুদকে দুর্নীতিবাজদের কোন তদ্বিরে কাজ হবে না এমন করেই দুদককে ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে বলেছেন তিনি। বুধবার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে দুর্নীতি প্রতিরোধ সপ্তাহের চতুর্থ দিনে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের শ্রেষ্ঠ মহানগর/জেলা ও উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির (দুপ্রক) সদস্যদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সরকার প্রতিটি সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন দ্বিগুণ করেছে। সর্বনি¤œ বেতন করা হয়েছে ১৬ হাজার টাকা। যা দিয়ে একজন মানুষ সৎভাবে চলতে পারে। মূলত দুর্নীতি কমাতেই সরকার এই উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। তিনি বলেন, কমিশনের প্রচার-প্রচারণার অধিক্ষেত্র হচ্ছে অল্পবয়সী ছেলে-মেয়ে তথা তরুণ প্রজন্মের সদস্যদের নিয়ে। জীবনের শুরুতেই কিশোর বা যৌবনকালেই সততা নীতির প্রতিফলন ঘটে। যার মূল্যবোধ মানুষ আজীবন বয়ে নিয়ে যায়। প্রকৃতপক্ষেই সৎ ও মূল্যবোধ সম্পন্ন জাতি গঠনের আসল সময় হলো শৈশব ও কৈশোর। তিনি বলেন, যারা কৈশোর বা যৌবনের প্রারম্ভে সৎপথে থাকেন পরবর্তী জীবনে তাদের পক্ষে অনৈতিক জীবন-যাপন করা সত্যিই কঠিন। তিনি বলেন, শুধু আমাদের দেশ নয়, সারা পৃথিবীতে দুর্নীতি বেড়েছে। এর কারণ পৃথিবীতে সম্পদ বৃদ্ধি হচ্ছে ক্রমাগত। কারণ যাই হোক দুর্নীতি দমন করতে না পারলে মানবজাতির ভবিষ্যৎ বিপন্ন হতে পারে, তবে আশার কথা পৃথিবীতে দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধ শুরু হয়েছে। আমরা ইচ্ছে করলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অনেক ক্ষেত্রে কঠোর হতে পারি না। যদিও বাধ্য হয়েই করতে হয়। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা উন্নয়ন চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে উন্নয়নের সোপানে নিয়ে গেছেন। বর্তমান সরকার সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যেভাবে বেতন বৃদ্ধি করেছে, তাতে জীবিকা নির্বাহের জন্য দুর্র্নীতি করার প্রয়োজন নেই। আমার অনুরোধ, দুর্নীতির পথ পরিহার করুন। বর্তমান সরকার আইনগতভাবে দুর্নীতি দমন কমিশনকে ব্যাপকভাবে স্বাধীনতা ও ক্ষমতা দিয়েছে। তাই দুর্নীতি দমন কমিশনে কোন প্রকার তদ্বির বা প্রভাব বিস্তার করা যাবে না। তাই সময় এসেছে রাজনীতিবিদ, সরকারী চাকরিজীবীসহ সকলকে শপথ নিতে হবে যে, আমরা দুর্নীতি করব না এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে যাব না। তিনি বলেন, দুর্নীতির প্রসার ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে, এ ধারাটি যদি প্রতিষ্ঠা করা যায় তবে এটাই হবে আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি। দুদক কমিশনার এএফএম আমিনুল ইসলাম বলেন, ২০১৫ সালে দুদকের মামলার সাজার হার ছিল ৩৭ শতাংশ, বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৫৪ শতাংশ। কমিশন এই সাজার হার শতভাগে উন্নীত করতে চায়। তাই কমিশন এর কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজ করতে দুদকের সারাদেশের প্রায় ৮০৮ জন কর্মকর্তাকে বিগত বছর প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের সূত্র ধরে সভাপতির বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকার ব্যক্ত হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগের মাধ্যমেই এই রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করবে। তিনি বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটিসমূহ স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক শক্তি। সামাজিক সংগঠনগুলোই সমাজ বা রাষ্ট্রের চালিকা শক্তি। এই শক্তিই পারে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন করতে। অনুষ্ঠানে সিলেট, জামালপুর এবং নরসিংদী জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটিকে শ্রেষ্ঠ জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি এবং জুড়ী (মৌলভীবাজার), ছাতক (সুনামগঞ্জ), বিশ্বম্ভরপুর (সুনামগঞ্জ), গফরগাঁও (ময়মনসিংহ), দেওয়ানগঞ্জ (জামালপুর), গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) সাভার (ঢাকা), সোনারগাঁও (নারায়ণগঞ্জ) ও রাজৈর (মাদারীপুর) উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটিকে শ্রেষ্ঠ উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়। এসব কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ মোট ১২০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ‘দুর্নীতি হলে শেষ, নিজে বাঁচব, বাঁচবে দেশ’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে শুরু হওয়া দুদক সপ্তাহ আগামী ১ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে একযোগে পালিত হবে।
×