ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারের নির্দেশ পাওয়া মাত্র ফেসবুক বন্ধ করে দেয়া হবে

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ২৯ মার্চ ২০১৭

সরকারের নির্দেশ পাওয়া মাত্র ফেসবুক বন্ধ করে দেয়া হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারের নির্দেশ পাওয়ামাত্র দেশে ফেসবুক বন্ধ করে দেয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে ফেসবুক বন্ধ করার কোন প্রকার নির্দেশ দেয়া হয়নি। মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে ওয়েস্টিন হোটেলে ইডটকো আয়োজিত বাঁশের তৈরি মোবাইল টাওয়ার উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. শাহজাহান মাহমুদ সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, আগামী ১০ এপ্রিলের মধ্যে মোবাইল টাওয়ারের বিকিরণ প্রতিবেদন আদালত দাখিল করার বিষয়ে যে নির্দেশ দিয়েছে তা যথা সময়েই জমা হবে। আমরা আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী কোন মোবাইল অপারেটর টাওয়ারের বিকিরণ মাত্রা কত তা নির্ণয় করে প্রতিবেদন দাখিল করব। এক্ষেত্রে ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) যে মাত্রা নির্ধারণ করছে, তার থেকে বেশি হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপারেটরগুলো লাইলেন্স নেয়ার সময় আইটিইউ’র বিকিরণ মাত্রার সীমা অতিক্রম করবে না বলে লিখিত দিয়েছে। অনেকে বলেন মোবাইল বিকিরণে ক্যান্সার হয়। কিন্তু ওয়ার্ল্ড স্বাস্থ্য সংস্থা, আমেরিকাসহ উন্নত দেশগুলোতে মোবাইল বিকিরণ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। তাদের ওই গবেষণায় এ ধরনের কোন কিছু এখনও প্রমাণিত হয়নি। এখন পর্যন্ত আমাদের কাছেও বিকিরণ সহনীয় মাত্রা লঙ্ঘনের বিষয়ে প্রমাণসহ কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। যদি কেউ অভিযোগ করেন, তাহলে তা গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরিবেশবান্ধব মোবাইল টাওয়ার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ইডটকো আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ফেসবুকের বিষয়টি নিয়ে এখনও সরকার কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা চলছে। তারা যদি আমাদের প্রস্তাবে রাজি না হয়, তাহলে সরকার যে সিদ্ধান্ত দেবে আমরা তা বাস্তবায়ন করব। ফেসবুক বন্ধ করে দেয়ার কোন সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়নি। টেলিযোগাযোগ টাওয়ার তৈরির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাঁশের কাঠামোয় টাওয়ার স্থাপন করেছে ইডটকো গ্রুপ (ইডটকো)। রাজধানীর উত্তরার ৫ নাম্বার সেক্টরের একটি বাড়ির ছাদে সম্প্রতি উদ্ভাবনীমূলক এই টাওয়ার স্থাপন করা হয়। প্রথাগত টাওয়ারের বাইরে নিত্যনতুন উদ্ভাবনীমূলক পরিবেশ-বান্ধব টাওয়ার তৈরিতে ইডটকোর ধারাবাহিক গবেষণার আরেকটি নতুন সংযোজন বনজসম্পদ বাঁশ দিয়ে তৈরি নবায়ণযোগ্য এই অবকাঠামো। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সঙ্গে ইডটকো’র যৌথ উদ্যোগ মূলত টেকসই ও সবুজ প্রকৌশল (গ্রীন ইঞ্জিনিয়ারিং) ইডটকো’র নেতৃত্বকে আরও শক্তিশালী করেছে। বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ’র নেতৃত্বে একটি গবেষক দল টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোর নক্সা ও নির্মাণে গতানুগতিক স্টিলের অবকাঠামোর বিকল্প উপাদান হিসেবে বাঁশের সক্ষমতার ওপর গবেষণা কাজটি পরিচালনা করেন। অনুষ্ঠানে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, টেলিযোগাযোগ সেবাগুলো আলাদা করার লক্ষ্যে ভিন্ন টাওয়ার শেয়ারিং নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। মোবাইল ফোন অপারেটররা বিভিন্ন সেবা প্রদান করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শীঘ্রই তারা (অপারেটররা) টাওয়ারের মতো সেবাগুলো আর প্রদান করতে পারবে না। বাঁশের তৈরি টাওয়ার যদি সফলতা লাভ করে তবে দেশীয় প্রযুক্তি হিসেবে এ খাতে প্রণোদনা দেয়া হবে। টাওয়ারটি নির্মাণে নেতৃত্ব প্রদানকারী বুয়েটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, দেশে প্রথম বাঁশের তৈরি টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো স্থাপিত হওয়ায় আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ বাংলাদেশে বাঁশ একটি সহজলভ্য উপাদান। প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে অবদান রাখতে এ ধরনের প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার এ দেশের পরিবেশের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। বাঁশের ব্যবহারের সম্ভাব্যতা যাচাই করে দেখা গেছে, বাঁশের বৈচিত্র্যময় গঠন বৈশিষ্ট্যের কারণে টেলিকম টাওয়ার তৈরির জন্য এটি একটি ভাল উপাদান হতে পারে। পরিবেশ সংরক্ষণের মাধ্যমে ও পরিবেশ সচেতন জাতি গঠনে এটি অবদান রাখতে সক্ষম। এ ধরনের একটি উদ্যোগে আস্থা রাখার জন্য আমরা ইডটকো’কে ধন্যবাদ জানাই। গবেষণায় দেখা গেছে যে, কাঁচা বাঁশকে নমনীয় এবং প্রসারণীয় শক্তি দিয়ে কংক্রিটের ওজন বহন করার উপযোগী করলে এটি টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো তৈরিতে সক্ষম উপাদানে পরিণত হয়। এটি প্রতি ঘণ্টায় ২১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাতাসের গতিতে টিকে থাকতে পারে এবং সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করলে এর আয়ুষ্কাল প্রায় ১০ বছর পর্যন্ত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বাঁশের তৈরি একটি টাওয়ার নির্মাণ করতে সময় লাগে ১২ দিন। গতানুগতিক স্টিলের টাওয়ারের চেয়ে এটি তৈরিতে কম জ্বালানী ব্যয় হয়। এ টাওয়ারে একই সঙ্গে সর্বোচ্চ আটটি এন্টেনা স্থাপন করা সম্ভব, যার প্রতিটিই একই সঙ্গে কার্যকর থাকবে। ইডটকো গ্রুপের সিইও সুরেশ সিধু বলেন, ইডটকো বরাবরই টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো খাতের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপাদান এবং উদ্ভাবনীমূলক সল্যুশন্স নিয়ে পরীক্ষা-নীরিক্ষা বা গবেষণা পরিচালনা করে থাকে। বাঁশের তৈরি এ টেলিযোগাযোগ টাওয়ার আমাদের সর্বশেষ উদ্ভাবন। টেকসই প্রাকৃতিক সম্পদ বাঁশকে টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণে ব্যবহার করে পরিবেশের ওপর এর প্রভাব কমানোর উদ্দেশ্যেই মূলত আমরা এ উদ্যোগটি নেই। বিশেষ এই টাওয়ারটি নির্মাণে অংশীদার হিসাবে বুয়েটকে পাশে পেয়ে আমরা কৃতজ্ঞ। আশা করি ভবিষ্যতেও তাদের এ ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের রাজধানীর অধিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নে আমাদের অগ্রগণ্য ভূমিকার আরেকটি নিদর্শন হবে এই টাওয়ার।
×