ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বে গণহত্যার তালিকায় প্রথম অবস্থান ২৫ মার্চের ॥ রাষ্ট্রদূত মাসুদ

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৭ মার্চ ২০১৭

বিশ্বে গণহত্যার তালিকায় প্রথম অবস্থান ২৫ মার্চের ॥ রাষ্ট্রদূত মাসুদ

এনআরবি নিউজ, নিউইয়র্ক থেকে ॥ জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে ‘অপারেশন সার্চ লাইট’-এর নামে নিরস্ত্র, ঘুমন্ত, নিরপরাধ বাঙালীর ওপর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হিংস্র আক্রমণ ও নির্মম গণহত্যার কথা তুলে ধরে বলেন, “পরিসংখ্যানের বিচারে বিশ্বের অন্যান্য গণহত্যার তালিকায় এ গণহত্যা একেবারে প্রথম দিকে অবস্থান করছে। আমাদের দুর্ভাগ্য, আমাদের গণহত্যার যথাযথ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি। বরং দীর্ঘদিন স্বাধীনতাবিরোধী চক্র আমাদের এ গণহত্যার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে এটিকে বিস্মৃতির দিকে ঠেলে দিয়েছিল। আজ জাতির জনকের কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দিনটিকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেয়ার মাধ্যমে সেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির পথ উন্মোচিত হয়েছে।” ২৫ মার্চ শনিবার অপরাহ্নে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে ‘গণহত্যা দিবস’ স্মরণের সমাবেশে স্বাগত বক্তব্যে একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য বর্তমান সরকার গৃহীত পদক্ষেপ সর্বশক্তি দিয়ে বাস্তবায়ন করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা জাতিসংঘের বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে সরকারের এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত এবং এটি জাতিসংঘে উত্থাপনে বাংলাদেশের উদ্যোগের বিষয়টি অবহিত করেছি। এছাড়াও জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের নেতৃবৃন্দের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করেছি।’ রাষ্ট্রদূত মোমেন বলেন, ‘আন্তর্জাতিকীকরণের অংশ হিসেবে এ বিষয়ে অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা নিয়ে আমাদের সম্ভাব্য সব ধরনের কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।’ গণহত্যার বিষয়ে সমমনা বন্ধু রাষ্ট্র, মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী দেশ ও গণহত্যাকবলিত দেশসমূহকে নিয়ে জাতিসংঘে ও অন্যান্য বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে ২৫ মার্চের গণহত্যার পক্ষে একযোগে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এবং নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের যৌথ উদ্যোগে এই প্রথম ‘গণহত্যা দিবস’ পালন করল। ২৫ মার্চ কালরাতের শহীদসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ স্মরণে দোয়া ও এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুরু হয়। এরপর ২৫ মার্চের গণহত্যার ওপর একটি প্রামাণ্য ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল শামীম আহসান এনডিসি ১৯৭১-এর ২৫ মার্চের বর্বরোচিত হত্যাকা- বিশ্বমানবতাকে পরাজিত করেছিল মর্মে উল্লেখ করে প্রবাসী বাঙালীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা অনেকেই এ দেশের নাগরিক। আপনাদের সুযোগ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রতিনিধি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে এ গণহত্যার কথা তুলে ধরা।’ প্রবাসে গণহত্যা দিবস পালনের মাধ্যমে সারা পৃথিবী ১৯৭১-এর প্রকৃত ঘটনা জানতে পারবে বলে তিনি মতপ্রকাশ করেন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “আসুন দলমত নির্বিশেষে মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তি ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতির জন্য একযোগে কাজ করি।” মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন ড. মহসিন আলী ও আবুল মনসুর খান। অন্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেনÑ জেনোসাইড-৭১ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট ড. প্রদীপ রঞ্জন কর, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভাইস প্রেসিডেন্ট বসারত আলী, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আইরিন পারভীন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুখ আহমেদ, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব বেলাল বেগ প্রমুখ। ভিয়েনায় গণহত্যা দিবস পালন ॥ এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গণহত্যা ও জাতীয় দিবসে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার হাউফসাইলের বাংলাদেশ দূতালয়ে ২৫ মার্চ শনিবার বিকেল ৪টায় প্রদীপ প্রজ্বলন ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন রাষ্ট্রদূত মোঃ আবু জাফর, সঞ্চালনা করেন কাউন্সিলর ও চ্যান্সারি প্রধান সাবাব বিন আহমেদ। শুরুতে ২৫ মার্চ কালরাতে গণহত্যার শিকার সব শহীদসহ মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী সকল শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেনÑ সর্বইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং অস্ট্রিয়া প্রবাসী মানবাধিকারকর্মী, লেখক, সাংবাদিক এম নজরুল ইসলাম, অস্ট্রিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার হাফিজুর রহমান নাসিম, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম কবির, অস্ট্রিয়ান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মিজানুর রহমান খান, ফিরোজ আহমেদ, সাইফুল ইসলাম জসিম, সিরাজ চৌধুরী, সামসুল হুদা চৌধুরী, ইয়াসিম মিয়া বাবু প্রমুখ।
×