ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানের বাংলাদেশ বিরোধী তৎপরতা বিভিন্ন ফোরামে

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ২০ মার্চ ২০১৭

পাকিস্তানের বাংলাদেশ বিরোধী তৎপরতা বিভিন্ন ফোরামে

তৌহিদুর রহমান ॥ ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঘিরে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এখনও অপতৎপরতা চালাচ্ছে পাকিস্তান। বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চায় দেশটি। তবে প্রতিবারই তাদের সেই উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে। এরপরও থেমে নেই পাকিস্তান। সর্বশেষ গত শুক্রবার লন্ডনে কমনওয়েলথ মিনিস্ট্রিয়াল এ্যাকশন গ্রুপের (সিমেগ) বৈঠকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তান অভিযোগ তোলার চেষ্টা করলেও সেটা সফল হয়নি। সিমেগের ওই বৈঠকে পাকিস্তান বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে একটি প্রস্তাব তুলতে চেয়েছিল, তবে ভারতের বিরোধিতায় সে প্রস্তাব আর তুলতে পারেনি পাকিস্তান। লন্ডনের কূটনৈতিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। শুক্রবার লন্ডনে সিমেগের ওই বৈঠকের এজেন্ডায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে আলোচনার জন্য প্রস্তাব করে পাকিস্তান। তবে পাকিস্তানের এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে ভারত। এ বিষয়ে কোন এজেন্ডা না রাখার জন্য ভারতের পক্ষ থেকে সিমেগকে অনুরোধ করা হয়। অবশেষে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এ বিষয়ে আর এজেন্ডায় তোলেনি সিমেগ। ফলে পাকিস্তানের পুরো চেষ্টা ভেস্তে যায়। সূত্র জানায়, সিমেগ বৈঠকে ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর। তিনিই ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তান এজেন্ডায় আলোচনার জন্য বিষয়টি তুলতে চাইলে, এম জে আকবরের প্রচেষ্টায় সেটা সফল হয়নি। এদিকে লন্ডনে সিমেগের ওই বৈঠকে কমনওয়েলথের সদস্য কোন রাষ্ট্র জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা করলে সেই দেশের সদস্যপদ বাতিলের প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। পাকিস্তানকে ইঙ্গিত করে, কোন দেশের নাম উল্লেখ না করেই ভারত বলেছে, কমনওয়েলথ তার সদস্য দেশগুলোর বিরুদ্ধে আটটি বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে এই আট বিষয়ের মধ্যে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়টি নেই। এটিকে অন্তর্ভুক্ত করে নয়টি করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। এর আগেও বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অপচেষ্টা চালিয়েছে পাকিস্তান। বিশেষ করে যুদ্ধাপরাধের বিচার ঘিরে বাংলাদেশকে বিভিন্ন ফোরামে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চায় দেশটি। ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ এবং বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকরের ঘটনায় জাতিসংঘের কাছে চিঠি দিয়েছিল পাকিস্তানের সাবেক মন্ত্রী রেহমান মালিক। তিনি বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে রেহমান মালিকের চিঠি আমলে নেয়নি জাতিসংঘ। গত বছর সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ অধিবেশন চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সিমেগ বৈঠক হয়েছিল। সেখানেও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অংশগ্রহণ করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা সারতাজ আজিজ। সিমেগ বৈঠকে অংশ নিয়ে উপদেষ্টা সারতাজ আজিজ অভিযোগ করেছিলেন, ১৯৭১ সালের একটি মীমাংসিত বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ বিচার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার বেশ কয়েকজন ইসলামী নেতাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিচার করে মৃত্যুদ- দিয়েছে। কমনওয়েলথের সদস্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি নিন্দা প্রস্তাব পামের জন্য উপস্থিত সদস্য দেশগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিলেন তিনি। সে সময় পাকিস্তানের ওই প্রস্তাবেরও বিরোধিতা করেছিল ভারত। সিমেগ বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এই বিচার প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের জনগণের বিপুল সমর্থনও রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি তাদের অভ্যন্তরীণ একটি বিষয়। তাই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব তোলা কোনভাবেই যৌক্তিক নয়। সে সময় ভারতের এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেছিলেন বৈঠকের সভাপতি ও সাইপ্রাসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লোয়ানিস ক্যাসোলিডস। এর আগেও একাধিক সিমেগ বৈঠকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তোলে পাকিস্তান। সিমেগের ৪৮তম বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে বিভিন্নভাবে বাংলাদেশ সরকার হয়রানি করছে বলে অভিযোগ করে পাকিস্তান। তবে সেসময়ও সদস্য দেশগুলোর পক্ষ থেকে পাকিস্তানের ওই অভিযোগ নাকচ করে দেয়া হয়।
×