ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ ব্যাংকের আপীল খারিজ

ওয়ান ইলেভেনের সময় আদায় ৬১৫ কোটি টাকা ফেরতের রায় বহাল

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৭ মার্চ ২০১৭

ওয়ান ইলেভেনের সময় আদায় ৬১৫ কোটি টাকা ফেরতের রায় বহাল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ওয়ান ইলেভেনের সময় ব্যক্তি ও বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে আদায় করা ৬১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ফেরত দিতে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রয়েছে। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের করা পৃথক আপীল খারিজ (ডিসমিসড) করে দিয়েছেন আপীল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপীল বিভাগের ৪ সদস্যবিশিষ্ট বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেছেন। আদালতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, এ্যাডভোকেট আহসানুল করিম ও খায়রুল আলম চৌধুরী। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম আমিরুল ইসলাম। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। হাইকোর্ট ১১টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নেয়া ৬১৫ কোটি টাকা তিন মাসের মধ্যে ফেরত দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছিল। রায়ের পর আহসানুল করিম বলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ১১টি আপীল হয়েছিল। যেসব প্রতিষ্ঠান আদালতে রিট করেছিল, কেবল তাদের টাকাই ফেরত দিতে বলেছে আদালত। অন্যদের টাকা ফেরত পেতে আদালতে আবেদন করতে হবে। তারা কবে টাকা পাবেন, কীভাবে তাদের টাকা দেয়া হবে তা পূর্ণাঙ্গ রায়ে জানা যাবে। অন্যদিকে ব্যারিস্টার এম আমিরুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশের জনগণ, আইন ও সংবিধান কখনও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়নি। এ রায় নিশ্চয় পুনর্বিবেচিত হবে। এতগুলো টাকা সরকার কোথা থেকে ফেরত দেবে তা চিন্তার বিষয়। এখন সরকার যদি রিভিউয়ের সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে রিভিউ হবে। রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করবেন কিনা জানতে চাইলে এ আইনজীবী বলেন, রিভিউয়ের বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। সর্বোচ্চ আদালতের এই আদেশের ফলে যাদের টাকা ফেরত দিতে হবে সেই প্রতিষ্ঠানগুলো হলোÑ এস আলম গ্রুপের সাতটি প্রতিষ্ঠানের ৬০ কোটি টাকা, দি কনসোলিডেটেড টি এ্যান্ড ল্যান্ডস কোম্পানি লিমিটেড এবং বারাউরা টি কোম্পানি লিমিটেডের ২৩৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, মেঘনা সিমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিজের ৫২ কোটি টাকা, বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেডের ১৫ কোটি টাকা, ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেডের ৯০ লাখ টাকা, ইউনিক সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজের ৬০ লাখ টাকা, ইউনিক হোটেল এ্যান্ড রিসোর্টের ১৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা, বোরাক রিয়েল এস্টেট প্রাইভেট লিমিটেডের ৭ কোটি ১০ লাখ টাকা, ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেডের ৩৫ কোটি টাকা, ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্টের এক পরিচালকের ১৮৯ কোটি টাকা, ইউনিক ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টারের স্বত্বাধিকারীর ৬৫ লাখ টাকা। ২০০৭ সালে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জরুরী অবস্থা জারি করে দুর্নীতি দমন অভিযানের কথা বলে গ্রেফতার করা হয় দেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের। এ সময় তাদের কাছ থেকে কয়েক শ’ কোটি টাকা আদায় করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংরক্ষিত সরকারী কোষাগারে ওই টাকা জমা দেয়া হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় আসার পর ওই অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্য ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান-কোম্পানি হাইকোর্টে পৃথক রিট আবেদন দাখিল করে। ২০১০-২০১৩ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে রিট আবেদনকারী ব্যক্তি ও কোম্পানিকে ওই অর্থ ৯০ দিনের ভেতর ফেরত দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দিয়ে রায় দেয় হাইকোর্ট। সংশ্লিষ্টরা জানান, ওই অর্থের পরিমাণ প্রায় ৬১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক লিভ টু আপীল করে (আপীলের অনুমতি চেয়ে আবেদন করে)। এর ওপর শুনানি নিয়ে ২০১৫ সালের ২ আগস্ট আপীল বিভাগ লিভ টু আপীল মঞ্জুর করেন। পাশাপাশি হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতাও স্থগিত করা হয়। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করে। যার রায় ঘোষণা করা হয় বৃহস্পতিবার।
×